Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে পট আঁকা শেখাতে যাবেন কালাম, বাবুধনেরা

আঁচড় কাটতে হলে কাঁচা মাটিতেই কাটা ভাল। সহজে দাগ পড়ে। এই চিন্তা থেকেই বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ভারতীয় লোকশিল্পের সঙ্গে পরিচিত করাতে চাইছেন ওঁরা। ছোট্ট থেকে আঁকা বলতেই যারা ড্রয়িং ক্লাস, ক্রেয়ন, ওয়াটার কালার, আর্ট বুক বোঝে, তাঁদের দেখাতে চাইছেন কী ভাবে তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিস থেকে রং তৈরি করেন আদিবাসী শিল্পীরা। কী অনায়াস দক্ষতায় পটে ফুটিয়ে তোলেন নানা আখ্যান।

সব্যসাচী ইসলাম
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৬:০১
Share: Save:

আঁচড় কাটতে হলে কাঁচা মাটিতেই কাটা ভাল। সহজে দাগ পড়ে।

এই চিন্তা থেকেই বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ভারতীয় লোকশিল্পের সঙ্গে পরিচিত করাতে চাইছেন ওঁরা। ছোট্ট থেকে আঁকা বলতেই যারা ড্রয়িং ক্লাস, ক্রেয়ন, ওয়াটার কালার, আর্ট বুক বোঝে, তাঁদের দেখাতে চাইছেন কী ভাবে তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিস থেকে রং তৈরি করেন আদিবাসী শিল্পীরা। কী অনায়াস দক্ষতায় পটে ফুটিয়ে তোলেন নানা আখ্যান।

জাদুপট, জড়ানো পট, কালীঘাটের পট, ওয়ারলি (মহারাষ্ট্রের আদিবাসী শিল্প)— মূলত এই সব কাজের সঙ্গেই নতুন প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছে দু’টি এনজিও। একটি সদর দিল্লিতে, অন্যটির ইলাহাবাদে। বিভিন্ন রাজ্যের পটশিল্পী এবং শিল্পকলা নিয়ে তারা পৌঁছতে চাইছে স্কুলগুলিতে। ছাত্রছাত্রীদের লোকায়ত শিল্প সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া এবং লুপ্ত হতে থাকা শিল্পের প্রতি উৎসাহী করে তোলাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

সম্প্রতি দুই সংস্থার কর্ণধার, লিলি ভাবনা কলার এবং বিবেক মনটেরস বীরভূমের রামপুরহাটে এসে কথা বললেন স্থানীয় পটশিল্পীদের সঙ্গে। তাঁরা কী ভাবে কাজ করতে চান, সেই সম্পর্কে একটি ধারণাও দিলেন। কথা হচ্ছিল কালাম পটুয়ার বাড়িতে বসে। কালামের কাকা বৈদ্যনাথ পটুয়া রামপুরহাটের চাঁদপাড়ায় থাকতেন, পট আর মূর্তি গড়তেন। তাঁর কাছ থেকে কাজ শিখে কালাম ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন শহর, দেশের বাইরে প্যারিস, কানাডা, আমেরিকাতেও প্রদর্শনী করেছেন। বর্তমানে চিন ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রদর্শনী চলছে।

সাঁওতাল পটশিল্পী বাবুধন পটুয়া আবার জাদুপট আঁকেন এবং দেখান। তাঁর বাবা সুরেশ জাদো ছিলেন নাম করা জাদু পটশিল্পী। নানা সময়ে দিল্লি গিয়ে জাতীয় হস্তশিল্প সংগ্রহশালায় নিজের কাজ দেখিয়ে এসেছেন তিনি। ভাষার সমস্যা থাকায় বাবুধন অবশ্য বেশি জায়গায় যাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাজ তো বীরভূমে কম দেখা যায়। ঝাড়খণ্ডের দুমকায় কিছুটা দেখতে পাওয়া যায়। ওঁরা আমাকে সুযোগ দিচ্ছেন, এটা ভাল কথা।’’ কালামের ভাগ্নে মিলন পটুয়া বয়সে নবীন। তিনি জড়ানো পট দেখান। রাখু পটুয়া পটগান পরিবেশন করেন।

বিবেক বলেন, ‘‘এই যে সব শিল্প, সেগুলির শিল্পীদের নিয়ে দিল্লিতে বড় মাপের আলোচনাসভা করব। সেখানে অনিল ভানগড় (মহারাষ্ট্র), কালাম পটুয়া (কালীঘাটের পট) এবং বাবুধন চিত্রকর (সাঁওতাল পট) তাঁদের কাজ দেখাবেন।’’ লিলি জানান, সেই সঙ্গেই এই ধরনের শিল্পকলা সম্বন্ধে ছোটদের ধারণা দেওয়াটাও তাঁদের উদ্দেশ্য। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করছেন। জানতে চাইছেন, তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের লোকশিল্পের পাঠ দিতে উৎসাহী কি না। দিল্লির কিছু বেসরকারি স্কুল ইতিমধ্যে আবেদনে সাড়াও দিয়েছে।

স্কুলে কী ভাবে লোকায়ত শিল্পের পাঠ দেওয়া হবে?

লিলি জানান, লোকশিল্পীরা স্কুলে গিয়ে প্রথমে শিল্পকলা সম্পর্কে একটা ধারণা দেবেন। তার পরে, কী ভাবে কাজ করতে হয় সেটা হাতে-কলমে শেখানো হবে। রং তৈরি কী ভাবে করা হয়, তা-ও পটশিল্পীরা শিখিয়ে দেবেন। আপাতত প্রতিটি স্কুলে তিন-চার দিনের ওয়ার্কশপ হবে। প্রশ্ন হল, মাত্র তিন-চার দিনে ছাত্রছাত্রীরা কাজ শিখতে পারবে? কালাম পটুয়া বলেন, ‘‘তিন-চার দিনে কাজ শিখে ফেলা যায় না ঠিকই। তবে পট সম্পর্কে ছোটদের একটা ধারণা তৈরি হবে। তারা হারিয়ে যাওয়া শিল্পকলাগুলি দেখতে শিখবে, তাদের সেই দেখার চোখ তৈরি হবে।’’

হয়তো এরাই পরে বড় হয়ে শিল্পকে দেখবে নতুন চোখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

to teach scroll painting school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE