Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Education

ফের স্কুলে যাওয়ার অপেক্ষায় কৃতীরা

মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় প্রথম দশে উঠে এল বাঁকুড়া জেলার ১৪ জন ছাত্রছাত্রীর নাম। রয়েছে পুরুলিয়ার তিন পড়ুয়াও। স্কুলভিত্তিক ফল বুধবার না জানা গেলেও, মেধাতালিকায় নাম তোলার দৌড়ে সাফল্যের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে দুই জেলার চেনা স্কুলগুলি। তবে এ বারের তালিকায় দুই জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি বার এসেছে বাঁকুড়া শহর-লাগোয়া পোয়াবাগান এলাকার বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতনের নাম। ওই স্কুল থেকে প্রথম দশে রয়েছে তিন জন। সাফল্যের উচ্ছ্বাস কিছুটা ম্লান করোনা ভাইরাসের উৎপাতে। আবার কবে স্কুল খুলবে, নতুন ক্লাসে বন্ধুদের মাঝে গিয়ে বসতে পারবে— সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে কৃতীরা সবাই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০৩:১২
Share: Save:

দ্বিতীয়: এক জন

মাধ্যমিকে রাজ্যে সম্ভাব্য দ্বিতীয় হয়েছে বাঁকুড়ার ওন্দা হাইস্কুলের ছাত্র সায়ন্তন গরাই। তার ঝুলিতে রয়েছে ৬৯৩ নম্বর। অঙ্ক, জীবনবিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞানে একশোয়-একশো। ওই বিষয়গুলির জন্য আলাদা ‘টিউশন’ ছিল না। পড়িয়েছেন বাবা বিশ্বনাথবাবুই। তিনি একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। বলেন, ‘‘ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ছেলেকে পড়াই। ওর সুবিধা-অসুবিধা আমার জানা। যখন কোনও জিনিস বুঝতে পারে না, তখন সেটা ছেড়ে দিই। পরে আবার বোঝাই। পড়াশোনা যাতে ছেলের মনে চাপ তৈরি না করে, সে দিকে সব সময় নজর রাখতাম।”

সায়ন্তন জানাচ্ছে, ঘড়ি ধরে পড়াশোনা তার ধাতে নেই। তবে কিছু পড়তে শুরু করলে শেষ না করে উঠত না। ভবিষ্যতে সে চায় বিজ্ঞানী হতে। প্রিয় বিষয় পদার্থবিদ্যা। তবে, এখন তার উৎসাহের কেন্দ্রবিন্দুতে করোনা-মুক্তির খবরাখবর। কৃতী ছাত্রটি বলে, ‘‘প্রত্যেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে প্রতিষেধকও দ্রুত চাই। আমাদের দেশ গবেষণা করছে। আমি আশাবাদী, শীঘ্রই সাফল্য আসবে।”

তৃতীয়: এক জন

৬৯০ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় সম্ভাব্য তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাঁকুড়ার কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের ছাত্র সৌম্য পাঠক। অঙ্ক, ইংরেজি ও ভূগোলে সে পেয়েছে ১০০ করে। ভবিষ্যতে ডাক্তারি পড়তে চায় সে। তার পরে ইচ্ছা রয়েছে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ (আইএএস)-এর প্রস্তুতি নেওয়ার। সৌম্যর বাবা সজলকুমার পাঠক একটি হাইস্কুলে পড়ান। তিনি জানান, ছেলের প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা ‘টিউশন’ ছিল। বাড়িতে নিয়ম করে সাত ঘণ্টা পড়াশোনা করত। সৌম্য বলে, “তাড়াতাড়ি স্কুল চালু হোক। অনেক দিন ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছি।’’

পঞ্চম: এক জন

৬৮৮ নম্বর পেয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল ব্লক সিমলাপালের বিক্রমপুরের ছাত্রী রশ্মিতা সিংহ মহাপাত্রের নাম। বিক্রমপুর রাধাদামোদর উচ্চবিদ্যালয়ের পড়ুয়া রশ্মিতাই মাধ্যমিকে জেলায় মেয়েদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম। ইংরেজি, অঙ্ক ও ভূগোলে সে পেয়েছে ১০০ করে। বাবা দেবীদাস সিংহ মহাপাত্র পেশায় চাষি। রশ্মিতা বলে, “সব ক’টি বিষয়েই আলাদা টিউশন নিয়েছিলাম। পাশাপাশি বাড়িতে নিয়ম করে পাঁচ ঘণ্টা পড়তাম। আগামী বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাই।”

ষষ্ঠ: দু’জন

৬৮৭ নম্বর পেয়ে সম্ভাব্য ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ছাত্র প্রিন্সকুমার সিংহ ও বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজিয়েট স্কুলের শৌনক বিশ্বাসের নাম।

ফুটবল-প্রিয় প্রিন্সের ইচ্ছা খড়্গপুর আইআইটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। বাড়ি বিহারের সিওয়ান জেলার বাগুরকোটির পাচরুখি গ্রামে। বাবা সুনীল সিংহ বেসরকারি সংস্থার কর্মী। মা সুশীলাদেবী শিক্ষিকা।

মায়ের ইচ্ছাতেই প্রিন্সের পুরুলিয়ায় পড়তে আসা। সুশীলাদেবী জানান, ছেলে বিদ্যাপীঠের প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বারে কৃতকার্য হতে পারেনি। এ দিন প্রিন্স জানায়, পুরুলিয়ায় এসে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে বলে গোড়ায় ভয় ছিল তার। কিন্তু আদতে তেমন কিছুই হয়নি। তার কথায়, ‘‘সকলে মিলে পড়াশোনা করা একটা অন্য রকমের ব্যাপার। করোনা আমাদের বড় একা করে দিয়েছে।”

বাঁকুড়া শহরের শুভঙ্কর সরণির শৌনক অঙ্কে ১০০ পেয়েছে। বাবা পার্থসারথি বিশ্বাস পেশায় ব্যবসায়ী। শৌনক জানায়, প্রতিটি বিষয়ে আলাদা করে ‘টিউশন’ ছিল। বাড়িতেও নিয়ম করে ৭-৮ ঘণ্টা পড়ত। গল্পের বইয়ের পোকা এই কৃতী ছাত্র ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়। তার আক্ষেপ, “মাধ্যমিকের পরে, ছুটিতে কেরল বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতিতে সব ভেস্তে গেল।”

সপ্তম: দু’জন

সম্ভাব্য সপ্তম স্থানে রয়েছে বাঁকুড়ার বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতনের অরিত্র মাজি ও কেন্দুয়াডিহি উচ্চবিদ্যালয়ের সাগ্নিক মিশ্র। দু’জনেই পেয়েছে ৬৮৬। মিল রয়েছে আরও। সাগ্নিক অঙ্ক ও ভূগোলে ১০০। অরিত্র বাংলা ও অঙ্কে ১০০। মাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে দু’জনেই বাড়িতে নিয়মিত সাত ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে। আর দু’জনেই খেলাধুলা ভালবাসে। সাগ্নিকের ইচ্ছে পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করার। অরিত্র চায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। তাদের আক্ষেপ, “করোনার সংক্রমণ বাড়লেও রাস্তাঘাটে ভিড় হয়ে চলেছে। অনেকেই মাস্ক পরছেন না। এ সব দেখে অবাক হচ্ছি।’’

অষ্টম: এক জন

৬৮৫ নম্বর পেয়ে অষ্টম হয়েছে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রাইপুরের বাসিন্দা অঙ্কিতা ঘোষ। গড়রাইপুর গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সে। বাংলায় পেয়েছে ১০০। ইচ্ছা ‘ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ (আইএএস)-এ যোগ দেওয়ার। অঙ্কিতা বলে, “প্রশাসনিক আধিকারিক হিসেবে সমাজের বহু পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পাব।” তার বাবা হাইস্কুলে এবং মা প্রাথমিক স্কুলে পড়ান। তাঁরা জানান, প্রতিটি বিষয়ের আলাদা ‘টিউশন’ ছিল মেয়ের। বাড়িতেও পাঁচ ঘণ্টা পড়ত।

নবম: তিন জন

৬৮৪ নম্বর পেয়ে নবম স্থানে রয়েছে বাঁকুড়ার বিবেকানন্দ শিক্ষানিকেতনের অয়নদীপ ষন্নিগ্রহী, সোনামুখী বিজে হাইস্কুলের সাবর্ণ হাটি এবং পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের মঙ্গলদা ভরপুরনাথজীউ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

অঙ্ক ও বাংলায় ১০০ পেয়েছে বাঁকুড়া শহরের জুনবেদিয়ার বাসিন্দা অয়নদীপ। ভবিষ্যতে সে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। পড়াশোনার পাশাপাশি ভালবাসে ক্রিকেট ও ফুটবল। তার কথায়, ‘‘পড়ার সময়ে পড়া, আর খেলার সময়ে খেলা— দুটোই মন দিয়ে করি।’’ করোনা-পরিস্থিতিতে আইপিএল খেলা না হওয়ায় বেশ হতাশ কৃতী ছাত্রটি।

অঙ্ক ও ভৌতবিজ্ঞানে ১০০ পেয়েছে সাবর্ণ। সোনামুখী শহরের রানিরবাজার এলাকার বাসিন্দা কৃতী ছাত্রটি বলে, “সব বিষয়েই টিউশন নিয়েছিলাম। আগামী দিনে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই।”

সাম্প্রতিক অতীতে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমার কোনও পরীক্ষার্থী মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে বলে মনে করতে পারেছেন না বর্ষীয়ান শিক্ষকেরাও। এ বছর তা করে নজর কেড়েছে রঘুনাথপুর শহরের শুভদীপ।

শুভদীপ যে স্কুলের ছাত্র, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সেই মঙ্গলদা ভরপুরনাথজীউ হাইস্কুলেই পদার্থবিদ্যা পড়ান তার বাবা নন্দদুলালবাবু। শুভদীপ জানায়, তার ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার। ভালোবাসে গিটার বাজাতে। তার কথায়,‘‘পড়ার চাপ অনেকটাই কমিয়ে দিত গিটারের সুর।”

দশম: ছ’জন

৬৮৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকার সম্ভাব্য দশম স্থানে উঠে এসেছে বাঁকুড়ার পাঁচ জন ও পুরুলিয়ার এক জন ছাত্রের নাম।

বাঁকুড়ার রামহরিপুর রামকৃষ্ণমিশন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায় বেলিয়াতোড়ের বাসিন্দা। প্রতিশ্রুতিমান শিল্পী হিসেবেও এলাকায় নাম রয়েছে তার। ভালবাসে ছবি আঁকা, মুকাভিনয়, নাটক। সে বলে, “স্কুলের উদ্যোগে বিশেষ ক্লাস ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে অনেক সুবিধা হয়েছে।’’

বিবেকানন্দ শিক্ষানিকেতন হাইস্কুলের ছাত্র দেবাত্রেয় দাস বাঁকুড়া শহরের পাঁচবাগার বাসিন্দা। সে অঙ্কে ১০০ পেয়েছে। ভবিষ্যতে ইচ্ছা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।

ইন্দাসের শাসপুর ডিএনএস ইন্সটিটিউশনের ছাত্র অঙ্কন দাস বৈরাগ্য ইন্দাসের শাসপুর পঞ্চায়েত এলাকার খাটরা গ্রামের বাসিন্দা। সে চায় ডাক্তার হতে।

সোনামুখী বিজে হাইস্কুলের ছাত্র প্রভাত দত্ত সত্যপীরতলার বাসিন্দা। বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের ছাত্র অঙ্কন পাত্রের বাড়ি শহরের গোপেশ্বরপল্লিতে। দু’জনেই চায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। প্রভাত বলে, “শরীরচর্চা করতে আমার খুব ভাল লাগে। স্থানীয় ব্যায়ামাগারে নিয়মিত যাই। তবে করোনার জন্য সব বন্ধ।’’

পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র সায়ন বিশ্বাসের বাড়ি কলকাতার সল্টলেকে। তার প্রিয় বিষয় জীবনবিজ্ঞান। ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার। কবে করোনা থেকে মুক্তি পেয়ে বিদ্যাপীঠে ফিরতে পারবে, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছে সে।

রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের সম্পাদক স্বামী শিবপ্রদানন্দ বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক অতীতে বিদ্যাপীঠ থেকে এক সঙ্গে দুই ছাত্র মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্থান পায়নি। এ বছরের সাফল্য আমাদের কাছে খুবই আনন্দের বিষয়।’’

উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে |

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE