Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে’ গড় পঞ্চকোট

প্রশাসনের দাবি, পর্যটনকেন্দ্রে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি, এলাকায় স্বাধীন ব্যবসারও অনেক সুযোগ হয়েছে। বেশ কিছু যুবক গাড়ি কিনে পরিবহণের ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। কেউ করেছেন দোকান।

নিসর্গ: বর্ষায় সবুজ বেড়ে আরও আকর্ষক হয়ে উঠেছে পাহাড় ও পাহাড়তলি। নিজস্ব চিত্র

নিসর্গ: বর্ষায় সবুজ বেড়ে আরও আকর্ষক হয়ে উঠেছে পাহাড় ও পাহাড়তলি। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১৪
Share: Save:

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ইতিমধ্যেই গড় পঞ্চকোটে গড়ে উঠেছে পাঁচটি পর্যটনকেন্দ্র। নতুন করে আরও দু’টি বড় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে জোরকদমে। তার মধ্যে একটি তৈরি হচ্ছে প্রায় তিরিশ একর জায়গা জুড়ে। থাকছে দেড়শোটি ঘর। নিতুড়িয়া ব্লকের পাহাড় ঘেরা এই এলাকায় পর্যটনের আরও প্রসার ঘটাতে শুরু হয়েছে নানা উদ্যোগ।

প্রশাসনের দাবি, পর্যটনকেন্দ্রে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি, এলাকায় স্বাধীন ব্যবসারও অনেক সুযোগ হয়েছে। বেশ কিছু যুবক গাড়ি কিনে পরিবহণের ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। কেউ করেছেন দোকান। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘গড়পঞ্চকোটের পর্যটন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ওই এলাকাকে কী ভাবে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, পরিকাঠামোর উন্নয়ন আরও কী ভাবে করা সম্ভব—সে সব খতিয়ে দেখা শুরু করেছে প্রশাসন।”

বছর ষোলো-সতেরো আগে পুরুলিয়ায় মাওবাদী উপদ্রব শুরু হওয়ার পরেই অযোধ্যা পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় কমতে শুরু করেছিল। বিকল্প হিসাবে জেলার পর্যটনের মানচিত্রে তখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে নিতুড়িয়ার গড় পঞ্চকোট। একদা শিখর বংশের রাজধানী ছিল এই পাহাড়ে। তার কিছু নির্দশন এখনও রয়েছে। পর্যটকদের কাছে ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধন হিসাবে এই এলাকার পরিচিতি।

পঞ্চকোট পাহাড়ে পর্যটনকেন্দ্র তৈরির ভাবনাটা রাজ্য সরকারের বন উন্নয়ন নিগমের। ২০০১ সালে পাহাড়ের কোলে রিসর্ট তৈরি করেছিল নিগম। প্রথমে মাত্র সাতটি ঘর নিয়ে পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হয়েছিল। এখন ঘরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩টিতে। রাজ্যের অন্য এলাকায় থাকা নিগমের পর্যটনকেন্দ্রগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করে এখন প্রথম সারিতে চলে এসেছে গড় পঞ্চকোটের বন উন্নয়ন নিগমের এই ‘প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র’। সেখানকার ট্যুরিজ়ম ম্যানেজার সুমন করের দাবি, গত বছর এই পর্যটনকেন্দ্র প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছে।

এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে মে-র মাঝামাঝি পর্যন্ত পুরুলিয়ায় দাবদাহ চলে। সেই সময়টুকু বাদ দিয়ে বছরের বাকি সময়টা ভিড় থাকে এই প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্রে। পর্যটনকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের দাবি, গত চার-পাঁচ বছর ধরেই চলে আসছে এমনটা। বিশেষ করে বর্ষাকাল, পুজোর ছুটি আর শীতে তিল ধারনের জায়গা থাকে না। ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকারে-আয়তনে বাড়ছে পর্যটনকেন্দ্র। পুয়াপুর গ্রামের অদূরে একটি রিসর্টের ম্যানেজার বিকাশ মাহাতো জানাচ্ছেন, তাঁরা ব্যবসা শুরু করেছিলেন হাতে গোনা কয়েকটি ঘর নিয়ে। এখন ৩৭টি ঘর হয়েছে। ওই গ্রামের কাছের আরও একটি রিসর্টের ম্যানেজার অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা সম্প্রতি নতুন করে ২৩টি ঘর নির্মাণ করেছেন। এর পরেও পর্যটকদের জায়গা দিতে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি দুই রিসর্টের কর্তৃপক্ষের।

পাহাড়ের কোলে ‘পিপিপি’ (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে গড়ে ওঠা আরও একটি পর্যটনকেন্দ্র ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র কর্ণধার সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ওই এলাকায় সরকারি জমির অভাবে তাঁরা নতুন ঘর তৈরি করতে পারছেন না। কিন্তু রিসর্টের এক পাশে ‘ক্যাফেটেরিয়া’ তৈরি করা হচ্ছে। সেটা হয়ে গেলেই এখন যেখানে তিনটে ঘর নিয়ে ডাইনিং হল রয়েছে, সেই জায়গা পর্যটকদের জন্য বরাদ্দ করতে পারবেন।

এক দিকে আসানসোল, অন্য দিকে আদ্রা। দু’টি বড় স্টেশন থেকে পঞ্চকোট পৌঁছতে লাগে মেরেকেটে এক ঘণ্টা। এখানে থেকে পর্যটকেরা ঘুরে আসতে পারেন পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার। চলে যেতে পারেন রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী ও সাঁতুড়ির বড়ন্তি পাহাড়েও। জেলা প্রশাসনের এক কর্তারা কথায়, ‘‘পাহাড় আর জল মিলেমিশে গড়পঞ্চকোটকে ক্রমশ রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে পাকা জায়গা করে দিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Garh Panchkot Nituria Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE