Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জল নেই, পর্যটক হারাচ্ছে জয়চণ্ডী

পাহাড়ের কোলে তিন তলা ঝাঁ চকচকে বাড়ি। জয়চণ্ডী পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য তৈরি হয়েছে এই তিন তলা যুব আবাস। দেড়শোরও বেশি মানুষ থাকতে পারেন। পাহাড়ের অন্য দিকে তৈরি হয়েছে আধুনি ক মোটেল। শ্রান্ত পর্যটকেরা সেখানে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন।

পাহাড়ের ঠিক কোলে এই যুব আবাস চালু হলে পর্যটকদের অাকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। —নিজস্ব চিত্র

পাহাড়ের ঠিক কোলে এই যুব আবাস চালু হলে পর্যটকদের অাকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। —নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

পাহাড়ের কোলে তিন তলা ঝাঁ চকচকে বাড়ি। জয়চণ্ডী পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য তৈরি হয়েছে এই তিন তলা যুব আবাস। দেড়শোরও বেশি মানুষ থাকতে পারেন। পাহাড়ের অন্য দিকে তৈরি হয়েছে আধুনি ক মোটেল। শ্রান্ত পর্যটকেরা সেখানে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন। ন’ মাস আগে এই সমস্ত তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু চালু হচ্ছে না।

কেন? জল নেই। পূর্ত দফতর বা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর যে হাত তুলে রেখেছে এমনটাও নয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই জায়গাতেই জলের জন্য মাটি খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু হাজার ফুটের বেশি গভীরে গিয়েও জল মেলেনি। পরিস্থিতি এমনই যে কী ভাবে এখন সেই সমস্যার মোকাবিলা করা যায়, তার কোনও পরিকল্পনাও করে উঠতে পারছে না প্রশাসন। তবে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, দ্রুত জলের ব্যবস্থা করে চালু করা হবে
আবাস দু’টি।

জয়চণ্ডী পাহাড়ের প্রতি ভ্রমণপিপাসুদের টান আজকের নয়। সত্যজিৎ রায় ‘হীরক রাজার দেশে’-র কিছু দৃশ্যের শ্যুটিং করেছিলেন এই পাহাড়ে। প্রতি বছর শীতেই পর্যটকদের ঢল নামে এখানে। খাড়া পাহাড়ে ট্রেকিং করতেও আসেন অনেকে। এই সমস্ত কথা মাথায় রেখে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জয়চণ্ডীকে আরও ভাল ভাবে তুলে ধরতে বেশ কিছু দিন ধরেই চেষ্টা করে আসছে প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরেও পদক্ষেপ করা হয়।

ইতিমধ্যেই রাজ্য পর্যটন দফতরের বরাদ্দে অর্থে পাহাড়ের পাশে ছোট টিলা র উপরে চালু হয়েছে একটি পর্যটক আবাস। বছরের অধিকাংশ সময়ই সেখানে ভিড় লেগে থাকে। সেই নজির দেখেই যুব আবাস ও মোটেল তৈরির উদ্যোগ হয়েছিল।

পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য যুব কল্যাণ দফতরের টাকায় ২০১৪ সালের প্রথমে পাহাড়ের এক প্রান্তে শুরু হয়েছিল যুব আবাসের নির্মাণ কাজ। দু’বছরের মধ্যেই প্রায় ছ’কোটি টাকা ব্যয়ে সেই কাজ শেষ হয়ে যায়। তিনটি তলাতেই রয়েছে ডর্মেটরি সহ পর্যাপ্ত ঘর। পূর্ত দফতরেরই টাকায় পাহাড়ের অন্য প্রান্তে, কটেজগুলির অদূরে তৈরি হয়েছে মোটেলটি। ২০১৪-র মাধামাঝি শুরু হয়েছিল নির্মাণ কাজ। ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। বিশ্রামের ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে রাত্রিবাসের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চারটি ঘর।

প্রশাসনের দাবি, এগুলি চালু হয়ে গেলে পাহাড়ে আসা পর্যটকদের থাকার জায়গা নিয়ে আর ভাবনা থাকবে না। সুবিধা হবে ট্রেকারদেরও। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ট্রেকিং-এ আসা লোকজনের সঙ্গে অনেক সময় তাঁদের পরিজনেরাও বেড়াতে চলে আসেন। ট্রেকাররা তাঁবু খাটিয়ে পাহাড়ের কোলে থাকলেও পরিজনদের থাকতে হয় রঘুনাথপুর শহরের কোনও হোটেলে। যুব আবাস তৈরি হয়ে গেলে সেই সমস্যা আর থাকবে না। সেখানেই নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন তাঁরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের অনেক স্কুল কলেজ থেকেই শিক্ষামূলক ভ্রমণে জয়চণ্ডী পাহাড়ে আসা হতো। কিন্তু শতাধিক পড়ুয়ার এক সঙ্গে থাকার বন্দোবস্ত না থাকায় ইদানীং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি জয়চণ্ডী এড়িয়ে যাচ্ছে। যুব আবাস তৈরি হলে সেই ভিড়ও ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আশাবাদী প্রশাসন।

কিন্তু সমস্ত আশায় জল ঢেলে দিতে বসে এই সমস্যা। পূর্ত দফতরে রঘুনাথপুরের সহকারী বাস্তুকার অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যুব আবাস তৈরি হয়ে গেছে নয় মাস আগে। যুব কল্যাণ দফতরকে আবাসটির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু জলের সমস্যার জন্য তারা পিছিয়ে গিয়েছে।’’ একই হাল মোটেলেরও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি জায়গাতেই হাজার ফুটেও জল না মেলার পরে, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর যুব আবাস ও মোটেলের পাশে কোন জমিতে জল থাকতে পারে তা খুঁজতে সমীক্ষা চালায়। আশাপ্রদ ফল পাওয়া যায়নি তাতেও।

এই অবস্থায় প্রশাসন প্রথমে ইন্দো জার্মান জল প্রকল্প থেকে যুব আবাস ও মোটেলে জলের ব্যবস্থা করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু ইন্দো জার্মান প্রকল্পের এলাকা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সেখান থেকে পাহাড়ে জল নিলে পরবর্তী কালে পুরো প্রকল্পটিতেই সমস্যা দেখা দিতে পারে ভেবে সেই চেষ্টা মুলতুবি রাখা হয়। রঘুনাথপুর শহরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জামসোল নামে আর একটি প্রকল্প রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই প্রকল্প থেকে পাহাড়ের আবাস দু’টিতে জলের বন্দোবস্ত করা যায় কি না তাও খতিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু সমস্যার জন্য তা আর কার্যকর
করা যায়নি।

জেলা প্রশাসন চাইছে পর্যটনের মরসুম শুরুর আগেই জয়চণ্ডীর দুটি পর্যটক আবাস চালু করে ফেলতে। মহকুমাশাসক জানান, জলের সমস্যা নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসক বিষয়টি জানেন। তাঁর নির্দেশ মতো সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে। দ্রুত জলের বন্দোবস্ত করে আবাস দু’টি খুলে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mountains Water scarcity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE