প্রতীকী ছবি।
একটু একটু করে বশে আসছে শরীর। কিন্তু, মনটা যে কুটিকুটি হয়ে গিয়েছে! পাঁচ দিন পরেও তাই কুঁকড়ে রয়েছেন নির্যাতিতা তরুণী। জমাটি ক্ষোভ উগরে বলছেন, ‘‘ওর শাস্তি হোক, যাতে অসম্মানের চোখ দিয়ে আর কোনও মেয়ের দিকে তাকাতেও ভয় পায়।” তবে জীবন যে এখানেই শেষ নয়, সেটাও বুঝেছেন সিউড়ির একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই আদিবাসী তরুণী।
মাটির একচালা বাড়ি। তার পাশে বাংলা আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। বুধবার সকালে ঘরের মধ্যে বসে কথা হচ্ছিল কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে। মুখ নিচু করে বলে গেলেন শনিবার বিকেলের মুহূর্তগুলোর কথা। মেয়ের কষ্ট দেখে চোখে জল মায়েরও। প্রান্তিক ওই আদিবাসী পরিবারটি স্বপ্ন বুনেছিল প্রাণোচ্ছ্বল ওই মেয়েকে ঘিরেই। বড় মেয়ে এবং তার পরের দুই যমজ মেয়ের এক জনের বিয়ে দিলেও বাকি (নির্যাতিতা) জনের বিয়ে এখনও হয়নি। বাবা–মা চেয়েছিলেন পড়াশোনা শিখে প্রতিষ্ঠিত হোক। সেই পথে এগোচ্ছিলেন সিউড়ির একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই ছাত্রীও। নার্সিং-এ সুযোগ পেতে আবদনও পূরণ করেছিলেন। কিন্তু, এক লহমায় যেন ওলটপালট হয়ে গিয়েছে সব।
ওই ছাত্রীর মা বলছেন, ‘‘গরু চরানোর পাশাপাশি কিছু জ্বালানি সংগ্রহ করেছিল। হঠাৎ আকাশ অন্ধকার করে আসে। তাড়াতাড়ি জ্বালানি নিতে জঙ্গলে ঢুকতেই বৃষ্টি নামে। ওর পিসি অনেক দূরে ছিল। ওই সময়ে গরু চরাতে এসেছিল পাশের গ্রামের ওই ছেলেটা (যুবক)। জঙ্গলের মধ্যে একা মেয়েকে পেয়ে সর্বনাশ করে। বৃষ্টির মধ্যে ওর চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। পরে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে সব জানায়।’’ তাঁর আক্ষেপ, দুটি পাশাপাশি মাঠে চাষ হয়। ওই ছেলে আর তাঁর পরিবারকেও চেনেন। কিন্তু, সে দিনের ওই ঘটনার পরে বিহিত চাইতে ছুটে ওর বাড়িতে গেলে বাবা, বোন দুর্ব্যবহার করে। বলে যা পারিস করেনে।’’ এটাই কোথাও সে দিন তাতিয়ে দিয়েছিল গোটা গ্রামকে। সেই বারুদে আগুন পড়ার আগেই অভিযোগ করানোর ব্যবস্থা হয়। ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই অভিযুক্তকে ধরে পুলিশ। শাসকদলও পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেয়। গত ক’দিনে নির্যাতিতার বাড়ি ঘুরে গিয়েছেন বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, বিরোধী দলের নেত্রী। কিন্তু, ক্ষত শুকোয়নি।
এর আগেও মহম্মদবাজার, পাড়ুই এবং সিউড়ি ২ ব্লকে আদিবাসী তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। তিনটি ঘটনার মধ্যে আরও মিল হল— প্রতিটির পিছনেই রয়েছেন পরিচিত কেউ। কোথাও পড়শি, কোথাও আবার আত্নীয়। ইন্টারনেটের অপব্যবহার, সংস্কৃতির বদলকেই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করে করেন আদিবাসী সমাজের কেউ কেউ। পুলিশের মতে, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নেশা। সিউড়ির ঘটনায় অভিযুক্তের আগেও এমন ইতিহাস রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আদিবাসী নেতা সুনীল সরেন বলছেন, ‘‘আদিবাসী মহিলাদের উপরে নির্যাতন বাড়ছে। নির্যাতিতার মা বলছিলেন, আমার মেয়ের কী দোষ? উত্তর দিতে পারিনি।’’ গ্রামের যে দু’এক জন কলেজে যান, তাঁদের অন্যতম নির্যাতিতাও। ঘটনার পর থেকে খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়ে অন্ধকার ঘরে স্বেচ্ছাবন্দি তিনি। কলেজ যাওয়া বন্ধ। কলেজ যাবেন তো? উত্তর এল, ‘‘এখনই কিছু ভাবতে পারছি না। তবে ঘুরে তো দাঁড়াতেই হবে।’’ কলেজের অধ্যক্ষ বলছেন, ‘‘ওই ছাত্রী কলেজে এলে তাঁর যে কোনও সমস্যায় পাশে থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy