Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জয়পুর গুলি-কাণ্ড: দুই কর্মীর মৃত্যুতে ধৃত বিজেপির ২

জয়পুরের ঘাগরা গুলিকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ঘটনার আড়াই মাস পরে দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃত সীতারাম মাহাতো ও উমাপদ মাহাতো দু’জনেই ঘাগরা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। প্রথম জন জড়রো ও দ্বিতীয় জন ডিমডিহা গ্রামের বাসিন্দা। ধৃতেরা এলাকায় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

জয়পুরের ঘাগরা গুলিকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ঘটনার আড়াই মাস পরে দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃত সীতারাম মাহাতো ও উমাপদ মাহাতো দু’জনেই ঘাগরা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। প্রথম জন জড়রো ও দ্বিতীয় জন ডিমডিহা গ্রামের বাসিন্দা। ধৃতেরা এলাকায় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত। পুলিশ জানিয়েছে, গুলিতে ওই পঞ্চায়েতের দুই বাসিন্দার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় পুলিশের তরফে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছিল। তাতেই ওই দু’জনকে ধরা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা ভেঙে জমায়েত, গণ্ডগোলে ইন্ধন জোগানো, সরকারি কাজে বাধা দিয়ে কর্মীদের আঘাত ও খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধেই গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন নিহত দুই বিজেপি কর্মীর পরিবার। সেই অভিযোগ অবশ্য পুলিশ গ্রহণ করেনি বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। তাঁদের দাবি, অভিযোগ গ্রহণ করে যাতে তদন্ত করা হয়, সে জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন।

২৭ অগস্ট ঘাগরা পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে ঘিরে পঞ্চায়েত অফিসের বাইরে তুমুল গোলমাল বাধে। বিজেপির দাবি, ঘাগরা পঞ্চায়েতের ১১ জন সদস্যের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল তিনটি। বিজেপির প্রধান পদের দাবিদারকে সমর্থন করেছিলেন সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক ও নির্দলের পাঁচ সদস্য। উল্টোদিকে তৃণমূলের পক্ষে ছিলেন তিন সদস্য। বিজেপির প্রধান পদের দাবিদার অদীপ মণ্ডলের তফসিলি জাতি শংসাপত্র নিয়ে বিতর্ক বাধে। প্রশাসন তা বাতিল করে দেয়।

পঞ্চায়েতের বাইরে সেই খবর পৌঁছলে গণ্ডগোল বাধে। প্রশাসন তৃণমূলকে বোর্ড পাইয়ে দিতে সাহায্য করছে অভিযোগ তোলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুটে আসে। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ঘাগরা গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন গোপ ও ছটকা গ্রামের দামোদর মণ্ডল। পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া দাবি করেছিলেন, পুলিশ শূন্যে গুলি চালিয়েছে। কার গুলিতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে তিনি সেই থেকে নীরব ছিলেন। যদিও এলাকায় গিয়ে সেদিন স্কুল বাড়ি থেকে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছিল, অসংখ্য গুলির দাগ। বিজেপি নেতৃত্ব ও নিহতের পরিজনেরা দাবি করেন, পুলিশের গুলিতেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে নিহতদের পরিবারের তরফে এবং বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে ওই দু’জনকে বাড়ি থেকে ধরা হয়েছে। তবে, আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। ধৃতদের রবিবার আদালতে তোলা হলে চার দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।

বিজেপির জয়পুর মণ্ডলের সভাপতি রবীন সিংহ দেও দাবি করেন, ‘‘নিহতের পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি ছোড়ার যে অভিযোগ করেছিলেন, থানা কিংবা পুলিশ সুপার তা গ্রহণ করেননি। উল্টে পুলিশ তাঁদের অভিযোগে আমাদের দু’জনকে ফাঁসিয়ে দিল। পুলিশ অভিযোগ নিচ্ছে না। আর যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় এসে আমাদের যে কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের উদাহরণ টেনে দুঃখপ্রকাশ করছেন!’’

তাঁর আরও দাবি, ‘‘জয়পুর ব্লকের মুকুন্দপুর, কাহান ও বড়গ্রাম এই তিনটি পঞ্চায়েতে আমরা এগিয়ে রয়েছি। কিন্তু, এখনও বোর্ড গঠন হয়নি। জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতিতেও বিরোধীদের নিয়ে আমরাই বোর্ড গড়ার ক্ষেত্রে দাবিদার রয়েছি। সেখানে বোর্ড গঠনের সময় এগিয়ে আসতেই পুলিশের দায়ের করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় আমাদের দু’জনকে গ্রেফতার করে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। তৃণমূলের কথায় পুলিশ যত এমন করবে, ততই মানুষকে আমরা পাশে পাব।’’ যদিও জেলা পুলিশ সুপারকে ফোন করেও তাঁর এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Arrested BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE