Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

চিত্রনাট্যের ছকে হুমকি শিক্ষককে, ধৃত ২ ছাত্র

পুলিশের দাবি, একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের ঘর থেকে একটি ওয়ান শটার পিস্তল ও কিছু কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি কোথা থেকে এল, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধন্দ। এই ঘটনার পিছনে আরও বড় কোনও মাথা রয়েছে কি না, সেটাই তদন্তে দেখা হচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুভ্র মিত্র
সোনামুখী শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৮ ০৮:০০
Share: Save:

টানটান গল্প ছকা ছিল। কিন্তু পুলিশও যে বাঘা তেঁতুল, আঁচ করতে পারেনি ওরা। টাকা চেয়ে শিক্ষককে বেনামে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ধরা পড়ল দুই ছাত্র। এক জন একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। অন্য জন নবম শ্রেণি। বাঁকুড়ার সোনামুখীর ঘটনা।

পুলিশের দাবি, একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের ঘর থেকে একটি ওয়ান শটার পিস্তল ও কিছু কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি কোথা থেকে এল, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধন্দ। এই ঘটনার পিছনে আরও বড় কোনও মাথা রয়েছে কি না, সেটাই তদন্তে দেখা হচ্ছে।

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সন্ধ্যায়। ওই দিন বিপুল বিশ্বাসের মোবাইলে একটি ফোন আসে। বিপুল সোনামুখীর ধুলাই হাইস্কুলে ইংরেজির শিক্ষক। আদত বাড়ি নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের ধরমপুর গ্রামে। সোনামুখীর শ্যামবাজারে ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন। ফোনে তাঁকে বলা হয়, বাড়ির সামনে একটি দেশলাইয়ের বাক্সে মেমোরি কার্ড রাখা আছে। বাড়ির শৌচাগারে রাখা আছে সিসি ক্যামেরা।

বিপুলের দাবি, বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখেন— সত্যি দেশলাইয়ের বাক্স! ভিতরে মেমোরি কার্ড আর কার্তুজ। কার্ডটি চালাতেই মোবাইলের পর্দায় ভেসে ওঠে ভিডিয়ো। দেখা যায়, একটি ওয়ান শটার পিস্তল, ছোরা আর কার্তুজ মাটিতে রাখা। নেপথ্যে হুমকি— নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা না দিলে খুন করা হবে স্ত্রী আর ছেলেকে। ছড়িয়ে দেওয়া হবে লুকনো ক্যামেরায় তোলা ছবি। শৌচাগারে সত্যি একটি ক্যামেরাও পান ওই শিক্ষক।

থানায় গিয়ে বলতেই, যে নম্বর থেকে হুমকি ফোন এসেছিল সেটির টাওয়ার লোকেশন খুঁজে বের করে পুলিশ। দেখা যায়, ফোন এসেছে শ্যামবাজার থেকেই। ওসি তলব করেন কয়েক জন সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে। তাঁরা এসে ভি়ডিয়োর নেপথ্য-কণ্ঠ শুনে জানান, চেনা চেনা ঠেকছে!

ধরে আনা হয় এক ছাত্রকে। সে শহরেরই অন্য একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। পুলিশের দাবি, জেরায় ওই ছাত্র তাদের কাছে হুমকির কথা স্বীকার করে নিয়েছে। দাবি করেছে, নবম শ্রেণির এক পড়ুয়া ছক কষতে তাকে সাহায্য করেছে। শুনে পুলিশ ধরে আনে সেই ছাত্রকেও। একাদশ শ্রেণির ছাত্রটির বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ওয়ান শটার পিস্তল, কার্তুজ আর ছোরা। বিপুলের বাড়ির শৌচাগার থেকে উদ্ধার করা হয় সিসি ক্যামেরা। তবে সেটিতে সংযোগই ছিল না। তদন্তকারীদের অনুমান, পড়তে গিয়ে শৌচাগারে ক্যামেরাটি রেখে এসেছিল ওই নাবালকেরা।

কিন্তু ওরা কেন করল এমনটা?

দুই ছাত্রের দাবি, বিপুলের কাছে তারা পড়ে। শিক্ষকের খিটখিটে মেজাজের জন্য রাগের মাথায় এই কাজ করে ফেলেছে।

যদিও পুলিশ ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিচ্ছে না। পুরো বিষয়টি যে ভাবে সাজানো আর অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা থেকে তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, দুই নাবালকের পিছনে আরও কেউ থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার জুভেনাইল আদালতে দুই ছাত্রকে তোলা হলে বিচারক তাদের ১২ দিন হোমে রাখার নির্দেশ দেন।

এ দিন নবম শ্রেণির ওই ছাত্রের পরিবারের কেউ ঘটনাটি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। একাদশ শ্রেণির ছাত্রটির বাবা বলেন, ‘‘কী করে কী হল, আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’’ বিপুল দাবি করেছেন, তাঁর কাছে মাঝে মধ্যে ছাত্রেরা পড়া বুঝতে আসে। তাদের মধ্যে অন্য স্কুলের কিছু পড়ুয়াও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এমনটা হবে কখনও ভাবিনি। মনে হচ্ছে, আমিই ওদের কিছু শেখাতে পারিনি। আমারই ত্রুটি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Teacher Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE