Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পাড়ুইয়ে চাষির অস্বাভাবিক মৃত্যু

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আদিবাসী এক চাষির অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পরিবারের দাবি, সম্প্রতি চাষে ক্ষতি হওয়ায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ওই ব্যক্তি। আর তার পরেই ক্যানালের ধারে তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রশাসন যদিও দাবি করছে, ফসলের ক্ষতির জন্য ওই চাষি আত্মঘাতী হননি।

বৈদ্যনাথ মাড্ডির শোকার্ত পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

বৈদ্যনাথ মাড্ডির শোকার্ত পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৯
Share: Save:

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আদিবাসী এক চাষির অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পরিবারের দাবি, সম্প্রতি চাষে ক্ষতি হওয়ায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ওই ব্যক্তি। আর তার পরেই ক্যানালের ধারে তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রশাসন যদিও দাবি করছে, ফসলের ক্ষতির জন্য ওই চাষি আত্মঘাতী হননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মৃত চাষির নাম বৈদ্যনাথ মাড্ডি (৩০)। তাঁর বাড়ি পাড়ুই থানার সাত্তোর পঞ্চায়েতের সালন গ্রামে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বৈদ্যনাথবাবুকে অচৈতন্য অবস্থায় গ্রামের পাশে দেবগ্রাম ক্যানালের ধারে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁকে উদ্ধার করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৈদ্যনাথবাবুকে ওই দিনই তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয়। রবিবার সেখানেই তাঁর তার মৃত্যু হয়। ময়না-তদন্তের পরে সোমবার দেহ বাড়িতে এনেছে পরিবার।

পরিবার সূত্রে খবর, স্ত্রী, চার ছেলেমেয়ে এবং মা-কে নিয়ে সাত সদস্যের পরিবারে অভাব ছিল। বৈদ্যনাথবাবু এ বার প্রায় দশ বিঘে জমিতে ভাগে ধান চাষ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী মালতিদেবী এ দিন বলেন, ‘‘চাষে ক্ষতি হয়েছিল। ধানের তেমন দাম মেলেনি। তাই নিয়ে প্রায় দিনই স্বামী মন খারাপ করত। মদ খেত। তা নিয়ে বাড়িতে ঝামেলাও লেগে থাকত।’’ তাঁর দাবি, ঘটনার দিন এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল। বৈদ্যনাথবাবু বোনেরা বাড়ি যাচ্ছি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তার পর দুপুরেই তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্বামী ক্যানালের পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছেন। সেখান থেকেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

যদিও সাত্তোর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মহসিন মোল্লার দাবি, ‘‘এলাকায় ধান চাষে তেমন ক্ষতি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। মদ খাওয়াকে কেন্দ্র করে পারিবারিক অশান্তি ছিল বলে শুনেছি। তবু এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ ওই আদিবাসী চাষির প্রতিবেশী শেখ মুস্তফা বলছেন, ‘‘কী ভাবে ওঁর মৃত্যু হল জানি না। তবে, বৈদ্যনাথবাবুকে আকছার বাড়িতে মদ খেয়ে ঝগড়া করতে দেখতাম।’’

ফসলের ক্ষতির জন্য কোনও কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন, এমন কোনও খবর নেই বলে দাবি করেছেন বোলপুর মহকুমা কৃষি আধিকারিক অরিন্দম চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে খবর নিয়ে দেখেছি, ওই এলাকায় ঝড়-বৃষ্টিতে ধান চাষের ক্ষতির বিষয়ে কোনও অভিযোগ নেই। আজ, মঙ্গলবার সরেজমিনে তদন্ত করে বিষয়টি দেখব।” একই সুরে কথা বলেছেন বোলপুরের বিডিও শমীক পাণিগ্রাহীও। তাঁর দাবি, ‘‘ফসলের ক্ষতির জন্য কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন, এলাকায় এখনও পর্যন্ত এমন কোনও খবর নেই। প্রাথমিক ভাবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি তিনি এক জন ভাগচাষি ছিলেন। পারিবারিক সমস্যার কথা গ্রামবাসীদের কাছে শুনেছি। কৃষি দফতর এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সবিস্তারে খোঁজ নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parui farmer death unnatural death baidyanath maddi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE