Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বটগাছ কাটা নিয়ে অশান্ত শান্তিনিকেতন

গাছ কাটার প্রতিবাদে এ দিন সন্ধেয় শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। অভিযোগপত্রে তিনি জানান— পুলিশকে দেখতে হবে যে গাছটি কাটা হল, সেই গাছ কাটার অনুমতি ছিল নাকি।

ঘেরাটোপ: বটগাছ ঘিরে বসে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। শুক্রবার শ্যামবাটি ক্যানাল এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

ঘেরাটোপ: বটগাছ ঘিরে বসে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। শুক্রবার শ্যামবাটি ক্যানাল এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০১:১১
Share: Save:

রিং রোড তৈরির জন্য প্রাচীন একটি বটগাছ কাটা ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটি ক্যানেল এলাকায়। গাছ বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের সামনেই রূপপুর পঞ্চায়েতের কয়েক জন সদস্যের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের একাংশ।

শান্তিনিকেতনের অন্যতম পরিচিত জায়গা শ্যামবাটি ক্যানাল। সেখান থেকে এক দিকের রাস্তা গিয়েছে গোয়ালপাড়ায়, কোপাইয়ের দিকে। অন্য রাস্তা খোয়াইয়ে। তিন নম্বর রাস্তা প্রান্তিক স্টেশনের দিকে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সম্প্রতি শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ ওই জায়গায় রিং রোড তৈরির জন্য রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে। জায়গাটি রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। পর্ষদের তরফে পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছিল, রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে স্থানীয় কোনও সমস্যা থাকলে তা যেন মিটিয়ে নেওয়া হয়। সেই মতো শুক্রবার সকালে শ্যামবাটি ক্যানালের ধারে থাকা শ’দেড়েক বছর পুরনো একটি বটগাছ কেটে ফেলার কাজ শুরু হয়। পঞ্চায়েতের বক্তব্য, ওই গাছটি থাকলে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে সমস্যা হত।

এলাকাবাসীর একাংশ গাছ কাটা নিয়ে আপত্তি তোলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাছ কাটার খবর পৌঁছয় বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের কাছে। কয়েক জন ছাত্রছাত্রী ঘটনাস্থলে যান। সঙ্গে ছিলেন বিদেশি পড়ুয়ারাও। প্রথমে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেন তাঁরা। গান ও নাটকে গাছ কাটার কুফল সম্পর্কে বোঝান। আইন মেনে গাছটি কাটা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ওই পড়ুয়াদের বক্তব্য, কোনও সদুত্তর মেলেনি। এর পরই গাছের সামনে বসে পড়ে বিশ্বভারতীর ওই পড়ুয়ারা।

তাঁদের নালিশ, রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতি কাজী নুরুল হুদার নেতৃত্বে কয়েক জন পঞ্চায়েত সদস্য সেখানে পৌঁছে তাঁদের হেনস্থা করেন। ছাত্রীদের পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়। রেহাই পাননি বিদেশি পড়ুয়ারাও। পুলিশের সামনেই তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ তোলেন পড়ুয়ারা। পুলিশের তরফে অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য, ঘটনাস্থলে বাহিনী ছিল বলে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

কাজী নুরুল হুদা বলেছেন, ‘‘রাস্তার উন্নয়নে গাছ কাটা হচ্ছিল। ওঁরা কোথা থেকে এসেছিলেন জানি না। ঘণ্টাদু’য়েক ধরে গাছের সামনে বসেছিলেন। অনেক বার বলা সত্ত্বেও না ওঠায় তাঁদের টেনে তোলা হয়। একে মারধর বলে না।’’

বন দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, গাছটির অবস্থা খারাপ ছিল। মাঝেমধ্যেই ডালপালা ভেঙে পড়ছিল। যে কোনও দিন বড় ডাল ভেঙে বিপত্তি ঘটতে পারত। রাস্তা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছিল। তাই গাছটি কাটার মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়।

বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের বক্তব্য, ‘‘আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। কিন্তু গাছ কেটে রাস্তা বাড়ানোর মতো উন্নয়নকে উন্নয়ন বলে না। বাইরের মানুষ এখানে গাছের জন্যই আসেন, রাস্তা দেখতে আসেন না।’’

এ বিষয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী চত্বরে থাকা রাস্তা সংলগ্ন একটিও গাছ যেন কাটা না হয়, তার নির্দেশ আগেই দেওয়া হয়েছে। এ দিনের ঘটনাস্থল বিশ্বভারতী চত্বরের মধ্যে পড়ে না। ওই ঘটনা সম্পর্কে বিশদে কিছু জানি না। তবে পড়ুয়াদের উপর যদি আক্রমণ হয়ে থাকে, তা দুঃখজনক।’’

গাছ কাটার প্রতিবাদে এ দিন সন্ধেয় শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। অভিযোগপত্রে তিনি জানান— পুলিশকে দেখতে হবে যে গাছটি কাটা হল, সেই গাছ কাটার অনুমতি ছিল নাকি। ওই গাছের পাশে থাকা আরও একটি পুরনো বটগাছ যাতে কোনও ভাবেই কাটা না হয়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে পুলিশকে। রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পড়ুয়ারাও। থানা সূত্রে খবর, এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE