Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

খালে সাঁকো গড়তে গ্রামবাসী পাশে পেলেন বিধায়ককেও

বছর-বছর শুখা খাল হেঁটেই পেরিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু এ বার ভরা বৈশাখেও সেই খালেই এখন একমানুষ সমান জল! খালের বুকে চেকড্যাম তৈরি হওয়াতেই শুখা খাল বদলে গিয়েছে। কিন্তু এই বদলে যাওয়ায় খাল পারাপার বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। খালের উপর কবে সরকার সাঁকো গড়ে দেন, সে অপেক্ষায় না থেকে বাসিন্দারা নিজেরাই শেষে কাঠ জোগাড় করে সাঁকো তৈরিতে নেমে পড়লেন। কাশীপুরের ভুঁয়াডি গ্রামের অদূরে গ্রামবাসীর সঙ্গে সাঁকো তৈরিতে হাত লাগালেন স্থানীয় বিধায়কও।

সাঁকো তৈরিতে হাত লাগিয়েছেন কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া (সামনে)। ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।

সাঁকো তৈরিতে হাত লাগিয়েছেন কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া (সামনে)। ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।

প্রশান্ত পাল
কাশীপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৩:০৮
Share: Save:

বছর-বছর শুখা খাল হেঁটেই পেরিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু এ বার ভরা বৈশাখেও সেই খালেই এখন একমানুষ সমান জল! খালের বুকে চেকড্যাম তৈরি হওয়াতেই শুখা খাল বদলে গিয়েছে। কিন্তু এই বদলে যাওয়ায় খাল পারাপার বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। খালের উপর কবে সরকার সাঁকো গড়ে দেন, সে অপেক্ষায় না থেকে বাসিন্দারা নিজেরাই শেষে কাঠ জোগাড় করে সাঁকো তৈরিতে নেমে পড়লেন। কাশীপুরের ভুঁয়াডি গ্রামের অদূরে গ্রামবাসীর সঙ্গে সাঁকো তৈরিতে হাত লাগালেন স্থানীয় বিধায়কও।

পুঁটিয়ারি খালের একপাশে কাশীপুর, অন্যপাশে হুড়া। এই দুই ব্লকের সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া পুঁটিয়ারি মিশেছে দ্বারকেশ্বরে। হুড়া ব্লকের হিড়, কলাবনি, রাঙাডি ও কাশীপুর ব্লকের একাংশের দু’-চারটি জনপদের বাসিন্দারা এই খাল পার হয়ে যাতায়াত করেন। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বর্ষাকালে খালে জল থাকায় পারাপারের অসুবিধে হয়। কিন্তু অন্যসময় খাল শুকনো থাকে, তাই তখন খাল পার হতে সমস্যা হতো না।

সমস্যার সূত্রপাত এই খালের উপর চেকড্যাম নির্মাণ শুরু হতেই। চেকড্যামের কাজ শুরু হয়েছে মাস তিনেক আগে। জল বাঁধা পড়ায় বর্তমানে খালের বুকে ফুট ছয়েক জল। ফলে খাল পারাপার আর সহজ নয় দু’পাড়ের মানুষের কাছে। অথচ দু’পাড়ের বাসিন্দাদের প্রতিদিন জীবিকার জন্যই খাল পার হতে হয়। হুড়ার দিকের লোকের কাশীপুর, আদ্রা, রঘুনাথপুর যেতে হয় খাল পেরিয়ে। শুধু তাই নয়, ব্লক সদর হুড়ায় যেতেও খাল পেরিয়ে এই পথ ব্যবহার করেন মানুষজন। কিন্তু খালে জল জমে যাওয়ায় চেকড্যাম নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে আলোচনার পরে চালু হয়। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘খালে জল জমে গেলে পারপার করব কী ভাবে? এই খালের উপরে তো কোনও সেতু নেই।’’ এলাকার ঘুটলিয়া গ্রামের বাসিন্দা গৌর মাহাতো, সুবলচন্দ্র মাহাতোরা বলেন, ‘‘খালে এখন অনেকটাই জল। তাই জল পেরিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ১৪ কিলোমিটার ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’’

বাসিন্দাদের সমস্যার কথা কানে আসে কাশীপুর কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার। তিনি বাসিন্দাদের নিয়ে আপাতত অস্থায়ী ভাবে কাঠের সাঁকো তৈরির উদ্যোগ নেন। বাসিন্দারা যার যা সামর্থ্য সেই অনুযায়ী গাছ ও শ্রম দিয়ে কাজে নেমে পড়েছেন। কাজ করছেন ভুঁয়াড়ি, ঘুটলিয়া, ধানাড়া, রঞ্জনডি-সহ আশপাশের গ্রামের বািন্দারা। কাজে নামতে না পারলেও দূরের গ্রামের লোক গাছ দিয়েও সাহায্য করেছেন।

রবিবার ভুঁয়াডি গ্রামের অদূরে পুঁটিয়ারি খালের পাড়ে গিয়ে দেখা যায় এলাকার মানুষজনকে নিয়ে সাঁকো গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছেন বিধায়ক নিজেও। পরনে তাঁর পাজামা ও স্যান্ডো গেঞ্জি। গ্রামবাসীদের থেকে আলাদা করে তাঁকে চেনাই যায় না। যাঁরা কাজ করছিলেন সেই রবি মুর্মু, শ্যামাপদ মুর্মু, ভক্তিপদ মুর্মু, লালমোহন কর্মকার, দেবনাথ লোহার বলছিলেন, ‘‘বিধায়ক উদ্যোগ নিলেন। আমরাও তাই লেগে পড়লাম। কবে সেতু হবে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আপাতত কয়েকটা মাস ওই সাঁকো দিয়েই আমরা যাতায়াত করতে পারব। নিজেদের কাজ নিজেরাই করছি। খুব ভালো লাগছে।’’ তাঁদের সঙ্গেই বিধায়কও কাঠের গুঁড়ি ঠেলে নিয়ে যান খালের দিকে। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘পুঁটিয়ারি খালের উপরে এই এলাকায় দু’টি চেকড্যাম নির্মাণের কাজ চলছে। এর ফলে নদীতে জল অনেকটাই জমে গিয়েছে। বাসিন্দাদের সমস্যা কথা জানতে পেরে তাই সবাই মিলে সাঁকো তৈরিতে নেমে পড়েছি।’’

কিন্তু সরকার তো বিভিন্ন জায়গায় সেতু তৈরি করে দেয়। সেই কাজ বাসিন্দারা কেন করবেন? বিধায়কের কথায়, ‘‘গ্রীষ্মেই পারাপারের সমস্যা। বর্ষাতে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। কিন্তু এখনই তো আর সেতু গড়ে তোলা যাবে না। পাকা সেতু তৈরির পরিকল্পনা রিপোর্ট তৈরি করে জমা করতে হবে। তারপর টাকা বরাদ্দ হবে। তারপর টেন্ডার প্রক্রিয়া রয়েছে। কাজ শুরু হতে বেশ সময় লাগবে। তাই বাসিন্দাদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে আমরা সকলে মিলেই সাঁকো গড়ার কাজ শুরু করে ফেললাম।’’ তিনি জানান, এলাকার মানুষেরাই কেউ কাঠ, কেউ লোহা, কেউ নাট-বল্টু, কেউ মাটি খোঁড়ার যন্ত্র দিয়ে সাহায্য করছেন। সকলের স্বেচ্ছাশ্রমেই এই সাঁকো গড়ার কাজ শুরু হয়েছে।

নিজেদের সাঁকোয় পা ফেলার জন্য জোরকদমে কাজ করে যাচ্ছেন খালপাড়ের মানুষজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE