জট: বিষ্ণুপুর পুরসভাকে প্রস্তাবিত ডাম্পিং গ্রাউন্ড করতে দেওয়া যাবে না, এই দাবিতে পঞ্চায়েতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা।
শহরের ময়লা গ্রামে ফেলা যাবে না। বিষ্ণুপুর শহরের প্রস্তাবিত ডাম্পিং গ্রাউন্ডের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার সরব হলেন দ্বারিকা গোঁসাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বনমালীপুর, অবন্তিকা, রেওড়া, নতুনগঞ্জ, বেলডাঙা, বেন্দা, রানিখামার প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা। প্রতিবাদ জানাতে পঞ্চায়েত প্রধানকে স্মারকলিপি দেওয়ার সঙ্গে তাঁকে অফিসে ঘণ্টাখানেক ঘেরাও করে রাখলেন তাঁরা। পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় নন্দী প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে গ্রামবাসীদের ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে আপত্তির কথা লিখিত আকারে জানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে ঘেরাও মুক্ত হন।
এ দিকে, বিষ্ণুপুর শহরে আর্বজনা কোথায় ফেলা হবে, তা খুঁজতে পুরসভার সাফাইকর্মীদের হিমশিম অবস্থা চলছেই। এ দিনও আবর্জনা না ফেলতে পেরে পুরভবনের সামনে জঞ্জাল ভর্তি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।
বস্তুত, বিষ্ণুপুর শহরের আবর্জনা ফেলার জন্য স্থায়ী জায়গা নেই। এত দিন শহর ও লাগোয়া বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হলেও বসতি বাড়ায় ইদানীং বাধা আসছিল। পরিস্থিতি এমন যে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অনেক জায়গায় সাফাইকর্মীদের ময়লা ফেলতে যেতে হচ্ছে। কিন্তু, তারই মধ্যে সম্প্রতি বিষ্ণুপুর শহরে কয়েক জন সাফাইকর্মীকে বাসিন্দারা মারধর করে ময়লা ফেলতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি বনমালীপুর মৌজায় খাস জমি ভূমি দফতর পুরসভাকে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির জন্য হস্তান্তর করে। যদিও ওই জমি চিহ্নিত করার পর থেকেই লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরিতে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। নতুন পঞ্চায়েত বোর্ড তৈরির পরে এ দিন ফের তাঁরা সরব হয়েছেন।
পুরভবনের সামনে জমে ময়লার গাড়ি।
এ দিন গ্রামবাসীরা স্মারকলিপি দেওয়ার আগে বনমালীপুর, অবন্তিকা গ্রাম পরিক্রমা করেন। তাঁদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, মুখে ছিল স্লোগান। বনমালীপুরের বাসিন্দা আনন্দ রায়, দয়াময় পাল, সুকুল সোরেন, লখীন্দর টুডু বলেন, ‘‘শিল্পতালুকের জন্য জমি দিয়ে কাজ মেলেনি। দূষণে বাঁচাই দায়। চাষ-জমি ফি বছর বন্যায় নদীর গর্ভে যাচ্ছে। ওই এক ফালি জমিই আটটি গ্রামের ছেলেমেয়েদের খেলার জায়গা। সেটাও প্রশাসন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আলোচনা না করে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নিল!’’
তাঁদের আপত্তির আরও কারণও রয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, আট থেকে ন’টি গ্রামের হাজার দশেক মানুষ স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ব্লক সদরে যে রাস্তা ধরে যান, তার পাশেই হচ্ছে ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড। কাছেই মানিকলাল হাইস্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, জল সরবরাহের অফিস। এ সবের কি গুরুত্ব নেই? তাঁদের প্রশ্ন, গ্রামের ময়লা শহরে ফেলতে দেওয়া হবে।
গ্রামবাসী জানান, ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি হতে চলেছে শুনে মে মাসেই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধান থেকে বিডিও, বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক, জেলাশাসককে জানানো হয়েছিল। তারপরও বনমালীপুর মৌজায় জমি কী ভাবে বাছাই করা হয়েছে? প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল নন্দী, হিমাংশু পালেরা। পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় নন্দী বলেন, ‘‘গ্রামের লোকজনের কথা আমাকে আগে চিন্তা করতে হবে। নীতিগত ভাবে তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন করছি। তাঁদের দাবির কথা বিডিও-কে জানাচ্ছি।’’ বিডিও (বিষ্ণুপুর) স্নেহাশিস দত্ত বলেন, ‘‘দ্বারিকা গোঁসাইপুরের পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’
বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর শহরের অলিগলি তো বটেই, বড় রাস্তাগুলিও বেহাল অবস্থা। পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘শহরের কোথাও ময়লা জমে আছে বলে কেউ অভিযোগ করেননি। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জায়গা তো পেয়েছি। কিন্তু, সেখানকার দখল কে দেবে? আট গাড়ি ময়লা ফেলা নিয়ে সমস্যা চলছে। পুলিশ যেখানে বলছে, সেখানেই ফেলছি।’’
যদিও বিষ্ণুপুর থানা জানাচ্ছে, কয়েকদিন ধরে পুলিশি পাহারায় শহরের আবর্জনা পুরসভারই জায়গায় অস্থায়ী ভাবে ফেলা হচ্ছে। কেউ যাতে সাফাই কর্মীদের উপর চড়াও না হয় পুলিশ তা দেখছে।
ছবি: শুভ্র মিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy