বাছাই: বাঁকুড়ার সুভাষরোড বড়বাজারে দুই খুদের বাজি কেনাকাটা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
শব্দবাজির পিলে চমকানো আওয়াজে কালীপুজোর বিসর্জন সোনামুখীতে যেন দস্তুর। আর সেই আতঙ্কেই পুজোর আগে কেঁপে কেঁপে উঠছে পুরশহর। যখন তখন প্রবল শব্দে ফাটছে শব্দবাজি। ব্যাপারটা কী? মহড়া চলছে!
সোনামুখীতে কালীপুজো হয় পাঁচ দিন ধরে। শেষ দিনে শোভাযাত্রা করে বিসর্জন। আর সোনামুখীতে বিসর্জন মানেই আইনকানুন শিকেয় তুলে শব্দবাজির যথেচ্ছাচার। স্থানীয় সূত্রের খবর, পুজোর দিন পনেরো আগে থেকেই সোনামুখীতে শুরু হয় শব্দবাজি তৈরি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুজো উদ্যোক্তা জানান, কমিটিগুলি গোপন জায়গায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোগ্রাম বারুদ কিনে শব্দ বাজি বানাতে বসে যায়। এ বারে সেই কাজ প্রায় শেষের মুখে। বাজি তৈরি। কেমন শব্দ হয় সেটাই অনেকে পরীক্ষা করতে শুরু করেছেন। ফলে গভীর রাত, সাতসকাল, ভরদুপুর— ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রাম শব্দে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা চমকে চমকে উঠছেন। চৌমাথা এলাকার এক প্রবীণ দম্পতি বলেন, ‘‘এখনই এই, বিসর্জনের দিন কী হবে ভেবেই ভয় হচ্ছে।’’ বিসর্জনের দিন বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে ওঠার পরিকল্পনা করছেন বলে জানান তাঁরা।
সোনামুখী শহরে প্রায় ৫০টি কালীপুজো হয়। তার মধ্যে গোটাকুড়ি পুজো কমিটির মধ্যে চলে শব্দবাজির প্রতিযোগিতা। সূত্রের দাবি, কমিটিগুলির বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ তোলা থাকে বাজি তৈরির জন্য। পাত্রসায়র আর ইন্দাসের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসেন কারিগরেরা। তৈরি হয় বেল বোম। সেই বাজির আওয়াজ প্রায় আসল বোমার কাছাকাছি। একটা বেল বোমের রক্ষা নেই, তা দিয়ে আবার তৈরি হয় কদম ঝাড়। পরপর, টানা ফাটতে থাকে। এ ছাড়া আসমান গোলা, চোঙ বোম, বড় চকলেট বোম তো আছেই। কিছু কারিগর জানান, বারুদ ছাড়াও এই সমস্ত বাজি তৈরিতে লাগে লোহাচূর্ণ, কাঠ কয়লা, সোডিয়াম, পটাশ, অ্যালুমিনিয়াম, তামার গুঁড়ো প্রভৃতি। এই কাজে ঝুঁকি কম নয়। তাহলে বানান কেন? কারিগরেরা জানান, পুজো কমিটিগুলি এর জন্য বেশি মজুরি দেয়। পাঁচ-ছ’জনের দলে দিন পনেরো কাজ করেই তাঁরা ভাল রোজগার করে নেন।
কিন্তু পুলিশ প্রশাসন কী করছে?
বাঁকুড়া পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘পুজো কমিটি এবং বাজি বিক্রেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ শব্দবাজি কেনাবেচা করলে আইনি পদক্ষেপ করবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও প্রত্যেক দিন সচেতনতা ট্যাবলো বেরোচ্ছে।’’ এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস বলেন, ‘‘লাইসেন্স ছাড়া কোনও বাজি মজুত করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমন্বয় কমিটির বৈঠক হচ্ছে।’’ বিসর্জনে লাগামছাড়া ডিজে বাজালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বেশ কিছু পুজো কমিটিও দাবি করেছে, এ বছর তারা সচেতন। হটনগর কালী পুজো কমিটির প্রবীণ সদস্য নিতাই ঘোষাল বলেন, ‘‘শব্দবিধি মেনে আমরা এ বার বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডিজে বা সাউন্ড বক্স ব্যবহার করব না।’’ আর শব্দবাজি? এই ব্যাপারে কমিটির মুখে কুলুপ। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারাও কানে তালা লাগার আশঙ্কায় তটস্থ।
সোনামুখীর বাসিন্দা চিকিৎসক জয়মাল্য ঘর বলেন, ‘‘সোনামুখীর শব্দবাজি ঐতিহ্য বলে অনেকে অজুহাত দেন। এটা মোটেও ঐতিহ্য নয়। উৎসবটা আলোর। আশা করি উদ্যোক্তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy