Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আয়ুষ আর যোগ বিভাগ মেলাতে চায় বিশ্বভারতী

আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে বিশ্বভারতীতে সারা দিন ধরে চলবে নানা অনুষ্ঠান। ১৫ জুন থেকে যোগ দিবস সপ্তাহ পালন শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ জুন প্রথম বার বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালিত হয়েছিল। ‘ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলি’ ২১ জুন দিনটিকে যোগ দিবস হিসেবে মান্যতা দেয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ০১:১৭
Share: Save:

আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে বিশ্বভারতীতে সারা দিন ধরে চলবে নানা অনুষ্ঠান। ১৫ জুন থেকে যোগ দিবস সপ্তাহ পালন শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ জুন প্রথম বার বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালিত হয়েছিল। ‘ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলি’ ২১ জুন দিনটিকে যোগ দিবস হিসেবে মান্যতা দেয়।

২০১৪ সালে ‘ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলি’তে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যোগ দিবস পালনের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানিয়েছিলেন, যোগ ভারতের ঐতিহ্যের উপহার। তার পরই ২০১৫ সালের ২১ জুন থেকে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। শুধু বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, শান্তিনিকেতনে যোগ বিষয়টি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। ইতিহাস বলে, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বরাবরই ধ্যান, উপাসনার উপর জোর দিয়ে এসেছেন। তাঁর আমল থেকেই শান্তিনিকেতন গৃহের আশেপাশে সব জায়গায় ধ্যান করার জায়গা ছিল। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে বিদ্যালয়ের অন্যতম বিষয় ছিল যোগ। সেই সময় ব্রাহ্মমুহূর্তে (রাতের শেষ, দিনের শুরু) উঠে পূর্ব দিকে মুখ করে উপাসনা হত। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরবর্তী ১০ বছরের (১৯৪১-১৯৫১) কোনও পোক্ত ইতিহাস জানা যায় না। ১৯৫৫ সালে রথীন্দ্রনাথের উদ্যোগে নতুন উদ্যমে বিষয়গুলি শুরু হয় ঠিকই, কিন্তু কয়েক বছর পরে বন্ধ হয়ে যায় সকালের উপাসনা। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালে যখন এখানে শারীরশিক্ষা বিভাগ চালু হয়, তখন নতুন করে যোগ জায়গা পায়। স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষে যোগ বিষয়টিকে আবশ্যিক করা হয়। স্নাতক তৃতীয় বর্ষ ও স্নাতকোত্তরে বিশেষ পেপারের মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেটের মতো যোগকেও একটি বিশেষ পেপার করা হয়। ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে যোগ বিভাগের জন্য অনুমোদন পায় বিশ্বভারতী। এক জন অধ্যাপক, দু’জন রিডার, তিন জন লেকচারার ও ৫ জন কর্মীর নিয়োগ সহ ১০ লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তখন নির্দিষ্ট পরিকাঠামোর অভাবে বিশ্বভারতী একটি নতুন বিভাগ তৈরিতে প্রস্তুত ছিল না। যেহেতু তার মাত্র বছর দুয়েক আগেই চালু হয়েছে শারীরশিক্ষা বিভাগ।

শারীরশিক্ষা বিভাগের মধ্যেই যোগ প্রাণ পেতে থাকে। যার অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন বিভাগীয় প্রধান সমীরণ মণ্ডল। ২০১৩ সালে বিশ্বভারতীর উদ্ভাবনী শিক্ষা ও গ্রামীণ পুনর্গঠন দফতরের ডিরেক্টর পদে দায়িত্ব নেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন। পদাধিকার বলে ওই সময়ই তিনি বিনয়ভবনের অধ্যক্ষ হন। তাঁর ও সমীরণবাবুর উদ্যোগ এবং বিনয়ভবনের ইনস্টিটিউট বোর্ডের এক্সটারনাল মেম্বার স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দের সহায়তায় যোগ বিভাগ গঠনের উদ্যোগী নেয় বিশ্বভারতী। ২০১৬ সালে শারীরশিক্ষা বিভাগের অধীনে শুরু হয় যোগশিক্ষার উপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স।

২০১৬ সালের ১৯ মে কেন্দ্র থেকে ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ বিভাগ গঠনের অনুমতি দেওয়া হয়। যার মধ্যে একটি ছিল বিশ্বভারতী। সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১৫ মে ‘যোগিক আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগ’এর উদ্বোধন হয়। সে দিন ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ২০০-তম জন্মদিবস। সেই শিক্ষাবর্ষ থেকে পড়ুয়ারাও ভর্তি হতে শুরু করেন। বর্তমানে ডিপ্লোমা কোর্সও এই বিভাগের অন্তর্গত। বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, দু’টি কোর্স মিলে ৮০ জন পড়ুয়া রয়েছেন। এ বার এই বিভাগে পড়ুয়াদের জন্য বিশ্বভারতীতে হবে ‘যোগ কুঠি’। কেন্দ্রের অনুমোদিত প্রায় ১১ কোটি টাকার মধ্যে বাড়ি তৈরির জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা এসে পৌঁছেছে।

বিশ্বভারতীর শারীরশিক্ষা বিভাগ তথা ‘যোগিক আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স’ বিভাগের প্রধান সমীরণ মণ্ডল জানান, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিতে ধ্যানস্থ হয়েছিলেন এখানকার ছাতিমতলার নীচে। শুরুটা বোধ হয় সেখান থেকেই হয়েছিল। সেই ধারাকে অব্যাহত রেখেই সেকালের সঙ্গে একালের মিলন হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্যের দিকে একটু করে এগোচ্ছি। এর পর আমাদের লক্ষ্য আয়ুষ-এর সঙ্গে বিশ্বভারতীর যোগিক আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগের সংযোগ। তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE