Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সংস্কৃতে বৌদ্ধ প্রভাব নিয়ে সভা বিশ্বভারতীতে

আলোচনাসভা থেকে জানা গেল, গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধধর্মের প্রচারে পালি ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। বুদ্ধের ১০০ বছর পর সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগ ধীরে ধীরে হলেও বাড়তে থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৮
Share: Save:

বিশ্বভারতীর সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত বিভাগ এবং বৌদ্ধশিক্ষা কেন্দ্রের উদ্যোগে ভাষাভবনের কনফারেন্স হলে আন্তর্জাতিক আলোচনাসভা হল। ‘সংস্কৃতে বৌদ্ধ প্রভাব’ শীর্ষক এই আলোচনাসভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন, ভাষাভবনের অধ্যক্ষ অভিজিৎ সেন, আলোচনাসভার কো-অর্ডিনেটর সঞ্জয়কুমার মণ্ডল, ললিতা চক্রবর্তী-সহ বিভাগীয় অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা। সভায় বক্তব্য রাখেন মায়ানমারের সহতুত সান্দার। পশ্চিমবঙ্গ সহ কেরল, বেনারস, ভিয়েতনাম থেকে আসা গবেষক, ছাত্রছাত্রীরা দু’দিনের এই আন্তর্জাতিক সভায় যোগ দেন।

আলোচনাসভা থেকে জানা গেল, গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধধর্মের প্রচারে পালি ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। বুদ্ধের ১০০ বছর পর সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগ ধীরে ধীরে হলেও বাড়তে থাকে। বৌদ্ধ দর্শনের সঙ্গে ভারতীয় দর্শনের সম্পর্কও অনেক দিনের। ভারতীয় দর্শনের সমস্ত গ্রন্থ সংস্কৃতে রচনা করা হয়েছে। সেই কারণে বৌদ্ধ দার্শনিক বসুবন্ধু, নাগার্জুন, চন্দ্রকীর্তিও সংস্কৃত ভাষায় বৌদ্ধদর্শন রচনা করেছেন। এ ভাবেই সংস্কৃতের প্রচার শুরু হয়। প্রথমে চীন ও তিব্বতের পর গোটা বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়ে। সংস্কৃত সাহিত্যের উপরেও বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের প্রভাব পড়েছে। শ্রীমৎভাগবতে বুদ্ধকে ‘অবতার’ বলা হয়েছে। জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দম’এর দশাবতার স্তোত্রতে বুদ্ধকে অবতার রূপে কল্পনা করা হয়েছে।

এই আলোচনাসভার আহ্বায়ক তথা বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্রের ডিরেক্টর অরুণরঞ্জন মিশ্র এ বিষয়ে বলেন, ‘‘সংস্কৃত নাটক, মহাকাব্য, গদ্যকাব্যতেও বুদ্ধের প্রেরণা পাওয়া যায়। সে কারণেই আলোচনাসভার বিষয়টি ভিন দেশের গবেষক ছাত্রদেরকেও আকৃষ্ট করেছে। দেশ-বিদেশের পণ্ডিতেরা যোগ দিয়েছেন।’’ বৌদ্ধ ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য ও সংস্কৃত বহুকাল ধরেই একসঙ্গে চলেছে। বৌদ্ধধর্মও দর্শন সংস্কৃত থেকে অনেক উপাদান সংগ্রহ করেছে। বৌদ্ধধর্মের মূলমন্ত্র যে অহিংসা, তার প্রতিফলনও ‘অহিংসা পরমো ধর্মঃ’ এবং ‘মা হিংস্যাৎ সর্ব ভূতানি’ ইত্যাদি সংস্কৃত উক্তিতেও পাওয়া যায়। যোগশাস্ত্রে উক্ত যমনিয়মাদি বৌদ্ধধর্মের অপরিহার্য অঙ্গ। সংস্কৃত বিভাগের প্রধান নরোত্তম সেনাপতির কথায়, ‘‘বৌদ্ধ দার্শনিকেরা নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বৈদিক সিদ্ধান্তের খণ্ডন করেছেন।’’

বৌদ্ধ ধর্মকে আশ্রয় করে দর্শন ও সাহিত্য রচনা হয়েছে। কিন্তু, সংস্কৃত কোনও ধর্ম না হলেও দর্শন ও সাহিত্যে প্রভাব বিস্তার করেছে। দুটি বিষয়ই একটি জিনিসের উপর আলোকপাত করেছে, তা হল ‘অহিংসা’। বর্তমান পরিস্থিতিতে অহিংসা বিষয়টি ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে সভার মত। আলোচনাসভাতেও অহিংসা প্রসঙ্গটি বারবার এসেছে। সংস্কৃত ও বৌদ্ধ দর্শন এই দুটি বিষয়ের উপরে ভিত্তি করেও অহিংসার প্রচার করা যেতে পারে বলেই মনে করছেন পণ্ডিতেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Visva-Bharati University Sanskrit Buddhism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE