Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাধ্য হয়েই ভাঙা হচ্ছে দশচক্র ও তিনসঙ্গী, যুক্তি

প্রস্তাবটা উঠেছিল ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে। আশ্রম এলাকায় নতুন একটি রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা হয় তখনই। কিছুটা রাস্তা হয়ে বন্ধ থাকলেও আবার শুরু হয়েছে কাজ। গাছ বাঁচিয়ে রাস্তা তৈরিতে উদ্যোগী বিশ্বভারতী। তবে ভাঙা পড়বে ‘দশচক্র’ এবং ‘তিনসঙ্গী’ ছাত্রীনিবাস। কেন? বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের শেষ দিকে দুটি হস্টেলকেই পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই সময়ে ওই হস্টেলে যাঁরা থাকতেন, তাঁদের অন্য হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

ভগ্নদশা: বিশ্বভারতীর পুরনো দুটি হস্টেল, দশচক্র এবং তিনসঙ্গী। দুটিই এ বার ভেঙে ফেলা হবে। নিজস্ব চিত্র

ভগ্নদশা: বিশ্বভারতীর পুরনো দুটি হস্টেল, দশচক্র এবং তিনসঙ্গী। দুটিই এ বার ভেঙে ফেলা হবে। নিজস্ব চিত্র

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায় 
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

শান্তিনিকেতন রোড থেকে মেলার মাঠে ঢোকার রাস্তার সামনে একটি লজের পাশ থেকে শুরু করে সঙ্গীতভবন গেটের পাশ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা যে নতুন রাস্তাটি হবে, তাতে যতটা সম্ভব পুরনো গাছ বাঁচিয়ে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে রাস্তা তৈরির সময়েই ভেঙে ফেলা হবে ‘দশচক্র’ এবং ‘তিনসঙ্গী’ নামের দুটি পুরনো হস্টেল।

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি নতুন রাস্তা তৈরির জন্যই ভাঙা পড়বে হস্টেল দুটি? বিষয়টা আদতে এমন নয়, সে কথা জানাল বিশ্বভারতীর সম্পত্তি বিভাগ। বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের শেষ দিকে দুটি হস্টেলকেই পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই সময়ে ওই হস্টেলে যাঁরা থাকতেন, তাঁদের অন্য হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর যুগ্ম কর্মসচিব তথা কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত সম্পত্তি আধিকারিক অশোককুমার মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘২০১৭ সালেই হস্টেল দুটি ভেঙে ফেলার অনুমোদন দিয়েছিল কর্মসমিতি। বর্তমানে নতুন রাস্তা তৈরির প্রকল্পের মধ্যে দুটি হস্টেল ভেঙে ফেলা বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন রাস্তা তৈরির জন্য হস্টেল ভাঙার কোনও দরকার ছিল না।’’

এই রাস্তা তৈরিও নতুন বিষয় নয়। এর শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে। জানা যায়, একটা সময় ছিল যখন আশ্রম এলাকা চারিদিকে খোলা ছিল। এর ফলে শ্রীনিকেতন, বালিপাড়া যাওয়ার জন্য আশ্রমের রাস্তার ভিতর দিয়েই ট্রাক, ট্রাক্টর যাতায়াত করতো। এতে সবচেয়ে সমস্যা হতো পাঠভবন, সঙ্গীতভবন এবং কলাভবনের পড়ুয়াদের। এই যাতায়াত বন্ধ করা কিংবা কমানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, বিকল্প রাস্তা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত যাতায়াত আটকানো সম্ভব ছিল না। সেই অবস্থায় প্রথমে আশ্রম এলাকার বেশ কিছু জায়গায় গেট বসিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে হাঁটা কিংবা সাইকেল ছাড়া ওই রাস্তাগুলোতে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায় ভারি যানগুলির।

নতুন একটি রাস্তা তৈরির প্রস্তাব ওঠে ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি প্ল্যানিং বোর্ড তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালের ৭ জুলাই রাস্তা তৈরির দায়িত্ব পায় কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর। ভুবনডাঙা বাঁধের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত রাস্তা হয়েও গিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু, এর মধ্যেই প্রস্তাবিত রাস্তার দু’জায়গায় ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং একটি সরকারি ক্যানেল পড়ে যায়। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করে এবং রাজ্য সরকারের অনুমতিতে ক্যানালের উপরে কালভার্ট বানিয়ে রাস্তা তৈরির অনুমোদন মিলতেই এতগুলো বছর সময় লেগেছে বিশ্বভারতীর। সমস্ত জটিলতা কাটতেই পুনরায় সেই কাজ শুরু হয়েছে।

‘দশচক্র’ এবং ‘তিনসঙ্গী’ ভেঙে ফেলার পিছনে এই রাস্তা তৈরি অন্যতম কারণ বলে মনে করেছিলেন প্রাক্তনীদের একাংশ। তবে এক সময়ের নানা স্মৃতি বিজড়িত হস্টেল দুটি কিছু দিনের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে জেনে মুষড়ে পড়েছেন তাঁরা। প্রাক্তনীদের কথায়, ‘‘হস্টেল দুটি ভেঙে না ফেলে অন্য ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারতেন কর্তৃপক্ষ। হস্টেল দুটিরও ঐতিহ্য রয়েছে। নির্মাণও ছিল বেশ অন্য রকম। সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেই এমন হতো না।’’ এ প্রসঙ্গে অশোকবাবু বলেন, ‘‘হস্টেলের মাঝে বড় গাছ জন্মে গিয়েছে। এ ছাড়া পুরনো নির্মাণ হওয়ায় অবস্থাও ভাল ছিল না। এর ফলে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।’’

তবে এই রাস্তা নির্মাণের ফলে আশ্রম এলাকা থেকে সাধারণের যাতায়াতের রাস্তা আলাদা হয়ে যাবে জেনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন স্থানীয়েরা। এ বছরই রেকর্ড মাত্রায় পর্যটক আসার ফলে বিশৃঙ্খলা হয় বসন্তোৎসবে। যানজটে আটকে পড়েছিল শহর। তাঁরা জানালেন, শুধু বসন্তোৎসব বলে নয়। এমনিতেও দিন দিন পর্যটক সংখ্যা বাড়ছে আশ্রম এলাকা সহ শান্তিনিকেতনে। এই রাস্তা দ্রুত হয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করছেন তাঁরা। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বললেন, ‘‘আমরা চাইছি দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ হোক। আশ্রম এলাকা এবং পড়ুয়াদের এতে ভালই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Visva Bharati Hostel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE