Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
বিজেপির রথ নিয়ে উত্তাপ ছ়ড়াল জেলার রাজনীতিতে

চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অনুব্রত, জবাব দিলীপের

বুধবার সিউড়ির পুরন্দরপুরে এক সমাবেশে ওই রথ ‘বিজেপির মৃত্যুর রথ’ হতে চলেছে বলে মন্তব্য করলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এ দিনই বোলপুরে এক পদযাত্রায় সামিল হয়ে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই রথ রোখা যাবে না। তার সামনে দাঁড়ালে শুয়ে পড়বে উন্নয়ন।’’

মত-দ্বৈরথ: রথ নিয়ে ‘যুযুধান’ দুই শিবির। বোলপুরে দিলীপ ঘোষ (বাঁ দিকে)। পুরন্দরপুরে অনুব্রত মণ্ডল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী, তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

মত-দ্বৈরথ: রথ নিয়ে ‘যুযুধান’ দুই শিবির। বোলপুরে দিলীপ ঘোষ (বাঁ দিকে)। পুরন্দরপুরে অনুব্রত মণ্ডল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী, তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি ও বোলপুর শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫২
Share: Save:

বিজেপির রথ নিয়ে রাজনৈতিক মত-দ্বৈরথ ছড়াল জেলায়।

বুধবার সিউড়ির পুরন্দরপুরে এক সমাবেশে ওই রথ ‘বিজেপির মৃত্যুর রথ’ হতে চলেছে বলে মন্তব্য করলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এ দিনই বোলপুরে এক পদযাত্রায় সামিল হয়ে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই রথ রোখা যাবে না। তার সামনে দাঁড়ালে শুয়ে পড়বে উন্নয়ন।’’ বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘রথ আটকানোর পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর। আমরা ঝাড়খণ্ড থেকে লোক নিয়ে আসলে এখানে তৃণমূলের একটা লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’ উল্লেখ্য, ৫ ডিসেম্বর তারাপীঠ থেকে ওই রথের সফর শুরুর কথা।

এ দিন পুরন্দরপুরে তৃণমূলের সমাবেশে অনুব্রত বলেন, ‘‘ভয়ে আজ লাভপুরে ঢুকতে পারেননি দিলীপ ঘোষ। ব়ড় বড় কথা বলছেন। রথ তো আষাঢ় মাসে বের হয়। যখন তখন বের হয় না। তা-ও যদি বের হয়, সে জন্য চার হাজার খোল আর ৮ হাজার খঞ্জনি দেওয়া হয়েছে। বল হরি, হরিবোল কে বলবে!’’ কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি। এই রথ মৃত্যুর রথ হবে বিজেপির।’’

বোলপুরে পদযাত্রার পরে এক পথসভায় প্রদেশ বিজেপি সভাপতি দিলীপবাবু বলেন, ‘‘উন্নয়ন এত দিন দাঁড়িয়েছিল। ২০১৯ সালে শুয়ে পড়বে। কিন্তু যদি শুতে না চান, দাঁড়িয়ে থাকতে চান, তা হলে রথের সামনে যেন না আসেন।’’

সিউড়িতে এ দিন লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরুর ইঙ্গিতও দেন অনুব্রত। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য দিল্লি দখল করা। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গকে আলো দেখানো হয়েছে। এ বার ভারতকে আলো দেখানোর পালা।’’ বিজেপিকে নিশানা করতে শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশের প্রসঙ্গও তোলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। তিনি বলেছেন, ‘‘মুখে ওঁরা বলছে, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও। অন্য দিকে অমিত শাহ বলছেন, মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ। এটা মিথ্যাচার।’’

পাল্টা হিসেবে বিজেপি রাজ্য সভাপতির বক্তব্য, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে দিদির পুলিশ থাকবে না। দিল্লির দাদার পুলিশ থাকবে। কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করতে পারবে না।’’

এ দিন লাভপুরে বিজেপির পদযাত্রার কথা ছিল। কিন্তু ঠিক ওই সময়ে সেখানেই মিছিলের কথা জানায় তৃণমূল। শেষ মুহূর্তে তা-ই বোলপুরে পদযাত্রা করে বিজেপি।

দলীয় কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে লাভপুরের দাঁড়কায় এ দিন প্রতিবাদ মিছিল বের করেছিল তৃণমূল। কয়েক দিন আগে ওই গ্রামে তাপস বাগদী নামে এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। ছেলেকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের ৫ কর্মী সর্মথকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের বাবা। বুধবার ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী, জেলা সম্পাদক অভিজিৎ সিংহের নেতৃত্বে সেখানে মিছিল করে তৃণমূল। তরুণবাবু দাবি করেন, ‘‘ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যার প্রমাণ মিলেছে। রাজনৈতিক আক্রোশে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি।’’

লাভপুরের প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘দরকার হলে ওখানকার পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করতে পারি। অভিযোগটাই পাল্টে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ‘রিসিভড কপি’ রয়েছে। সেটা কোর্টে দাখিল করব।’’

গত রবিবার বোলপুরের গীতাঞ্জলিতে দলের জেলা কমিটির বৈঠক থেকে নেতাকর্মীদের ঠিক কী করণীয়, তা স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন— লিড না পেলে দায় নিতে হবে বুথ ও অঞ্চল সভাপতিকে। পাশাপাশি প্রতিটি বাড়িতে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছতে এবং জনসংযোগ বাড়াতে জোর দেওয়া হচ্ছে।

শাসকদলের অন্দরের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচন ভাল ভাবে উতরে গেলেও লোকসভা ভোট যে তত মসৃণ হবে না, তা আঁচ করেই এই রণকৌশল। শাসকদলের নেতারা বলছেন— ‘‘এলাকায় মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছনো যদি একটি উদ্দেশ্য হয়, অন্য উদ্দেশ্য এলাকায় সমস্যাগুলি কী তা জেনে নেওয়া। দ্রুততার সঙ্গে সে সব সমস্যা, অভাব অভিযোগ মেটানোর ব্যবস্থা করা। যাতে বিরোধীরা মাথাচাড়া দিতে না পারে। এ নিয়ে বিরোধী

শিবিরের নেতাদের বক্তব্য— ‘ললিপপ দেখিয়ে মানুষকে ভোলানো যায় না। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক-স্বাধীনতা শাসকদল কেড়ে নিয়েছে। সঠিক ভাবে নির্বাচন হলে, মানুষ ওদের জবাব দেবে।’

(সহ-প্রতিবেদন: দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE