Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নদীতেই বিষ, বলল রিপোর্ট

স্বচ্ছ নদীর জল কালো হতেই দূষণের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন বাসিন্দারা। বলরামপুরের সেই পাহাড়ি নদী আমরুহাঁসার জল দূষিত বলেই জানাল পরীক্ষাগার। রিপোর্টে প্রকাশ, আমরুহাঁসার জল শুধু ব্যবহারের অনুপযোগীই নয়, মাত্রাতিরিক্ত  লোহা (আয়রন) এবং কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্বও মিলেছে তাতে। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বলরামপুর শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২৭
Share: Save:

স্বচ্ছ নদীর জল কালো হতেই দূষণের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন বাসিন্দারা। বলরামপুরের সেই পাহাড়ি নদী আমরুহাঁসার জল দূষিত বলেই জানাল পরীক্ষাগার। রিপোর্টে প্রকাশ, আমরুহাঁসার জল শুধু ব্যবহারের অনুপযোগীই নয়, মাত্রাতিরিক্ত লোহা (আয়রন) এবং কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্বও মিলেছে তাতে।

নদী বাঁচানোর দাবিতে আন্দোলনে নামা আমরুহাঁসা গ্রামের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। সংগঠনের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামবাসী নদীর জলের নমুনা পরীক্ষার জন্য আমাদের দিয়েছিলেন। নমুনা জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য দিয়েছিলাম। কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজেও একই নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। দু’টি জায়গা থেকেই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ওই জল ব্যবহারের অনুপযুক্ত।’’

কানহা পাহাড় থেকে বেরিয়ে বলরামপুরের বিভিন্ন গ্রাম ছুঁয়ে বয়ে যাওয়া আমরুহাঁসা নদীর জলে লাক্ষা ধোয়া রাসায়নিক মিশছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। অভিযোগ, ওই জলে স্নান করায় চুল উঠছে, চর্মরোগ হচ্ছে। জলপান করে গৃহপালিত জীবজন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। চাষে ব্যবহার করলে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তাঁরা নদী বাঁচানোর দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।

ওই জল ব্যবহারে কী ধরনের ঝুঁকি রয়েছে? পেশায় চিকিৎসক নয়নবাবুর বক্তব্য, ‘‘নদীর জলে প্রচুর পরিমাণে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া ও আয়রনের উপস্থিতি মিলেছে। নদীর জল পেটে গেলে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে অন্ত্রে সংক্রমণ ঘটতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের ডায়রিয়া হতে পারে। আয়রনেরও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। পেটে গেলে লিভার, কিডনি, অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা হবে। এ ছাড়া ত্বক খসখসে হয়ে যাবে, অ্যালার্জি হবে, মাথার চুল উঠে যাবে।’’ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ইতিমধ্যেই ওই সব রোগ তাঁদের এলাকায় দেখা দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা শাখা সূত্রে জানানো হয়েছে, জলের ‘কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড’ (সিওডি)-এর যা মান, ওই নদীতে তা রয়েছে অনেক বেশি। বিদ্যাসাগর কলেজের রসায়নের অধ্যাপক অরুণাভ মিশ্র বলেন, ‘‘সিওডি যত বেশি হবে, বুঝতে হবে জল তত বেশি দূষিত। সিওডি বাড়লে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের নির্দেশিকা অনুযায়ী,

সিওডি-র সর্বাধিক মাপকাঠি ২৫০ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে। সেখানে আমরুহাঁসার জলে সিওডি-র পরিমাণ তিন থেকে ছয় হাজার মিলিগ্রাম। যা মারাত্মক।’’

আমরুহাঁসার বাসিন্দা শ্রীদাম হেমব্রম, ঠাকুরদাস হেমব্রম, সন্তুল টুডুর আক্ষেপ, ‘‘এই নদীর জল আমরা গঙ্গার মতো পবিত্র মনে করতাম। নদীর জল এক সময়ে পানও করতাম। দূষণের জেরেই নদীর জল এখন বিষ হয়ে উঠেছে। এ বার ওই রিপোর্ট নিয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে গিয়ে দূষণ বন্ধে সক্রিয় হতে বলব।’’

বিজ্ঞান মঞ্চও জানাচ্ছে, ওই রিপোর্ট তারা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে পাঠাবেন। জয়েন্ট বিডিও (বলরামপুর) নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘নদীর জলের রিপোর্ট কী জানি না। তবে দূষণের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো হস্তক্ষেপ করেছেন তা জানি। তিনি ব্লক প্রশাসনকে এই বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক ডাকতে বলেছেন।’’

মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরুহাঁসা নদীর এমন দূষিত অবস্থা, কিছুতেই মানা যায় না। দেখছি, কী ভাবে দূষণ রুখে নদীটাকে বাঁচানো যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

River Poison Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE