একান্নবর্তী: বিষ্ণুপুরের দক্ষিণ বৈল্যাপাড়ার হাঁড়িবাগানে। ছবি: শুভ্র মিত্র
দেড়শো পরিবারের রান্না হচ্ছে এক শামিয়ানার নীচে। এবং তা প্রত্যেক দিন। ‘লকডাউন’-এ রান্নার খরচ বাঁচাতে এই পন্থা নিয়েছে বিষ্ণুপুর পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বৈল্যাপাড়ার হাঁড়িবাগান এলাকার ওই গরিব পরিবারগুলি। প্রত্যেক দিন দুপুরে ভাত এবং একটি তরকারি রান্না করছেন এলাকার চার-পাঁচ জন যুবক। প্রতিটি পরিবার নির্দিষ্ট সময়ে এসে নিয়ে যাচ্ছে খাবার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের অনেকে রেশন পান। আবার অনেকে পান না। সকলেরই কাজকর্ম বন্ধ। সঙ্কটের দিনে কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন, সে জন্যই এক সঙ্গে সকলের রান্না করা হচ্ছে। হাঁড়িবাগান এলাকায় বাস করেন মূলত নিম্নবিত্তেরা। কেউ রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করেন। অনেকে দোকানে কাজ করেন। নির্মাণ শ্রমিক রয়েছেন কয়েকজন। কেউ আবার পরিচারিকার কাজ করেন।
এলাকাবাসীর একাংশের বক্তব্য, রেশন থেকে তাঁরা যা পান, তাতে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া যায় না। এলাকায় চপের দোকান রয়েছে দেবকুমার দাসের। তিনি বলেন, ‘‘সকলের রান্না এক সঙ্গে হচ্ছে। রান্নার খরচ অনেকটাই বাঁচছে। আবার কেউ অভুক্ত থাকছি না। যা জুটছে, সকলে মিলে খাচ্ছি।’’
বিষ্ণুপুরের রবীন্দ্র স্ট্যাচু থেকে ব্লক কার্যালয়ে যাওয়ার দিকে কিছুটা হাঁটলেই পথের পাশে দেখা যাবে শামিয়ানা টাঙিয়ে রান্না করছেন চার-পাঁচ জন যুবক। তাঁদের মধ্যে নির্মাণ শ্রমিক মনসা লোহার বলেন, ‘‘অনেকে ভাবেন, আমরা পিকনিক করছি। লকডাউন চালু হতেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। খাবারের সঙ্কট তৈরি হয়। বিষ্ণুপুর শহরের এক ব্যবসায়ী কয়েকদিন আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন।’’
সেই ক’দিন এক সঙ্গে রান্না হয়েছিল এলাকার সকলের। মনসাবাবু বলেন, ‘‘ওই ক’দিনে বুঝেছিলাম, এক সঙ্গে থাকলে খরচ অনেক কমে। সেই থেকেই এক সঙ্গে সকলের রান্না হচ্ছে।’’
সঙ্কট-কালে দরিদ্র ওই পরিবারগুলি পাশে পেয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে। স্থানীয় একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারও ওই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর তাঁদের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছিলেন। কিন্তু তা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে।
বিষ্ণুপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ওঁরা রান্না করছিন কিনা তা টহল দেওয়ার সময়ে দেখা হচ্ছে। খাবার নিতে আসা লোকজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন কিনা, তা-ও দেখা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ওঁরা নিয়ম মেনেই সব কাজ করছেন। ওঁদের সবসময় সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy