Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

মৃত্যু মুছে দিল কাঁটাতারের সীমারেখাটুকুও

কাঁটাতারের বেড়া যে মানবিকতার কাছে হার মানে তা জরুরি অবস্থাতেও প্রমাণিত হল। 

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৫৮
Share: Save:

একটা মৃত্যু যেন এই লকডাউনেও এক সুতোয় বেঁধে রাখল ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীর সম্পর্ককে। কাঁটাতারের বেড়া যে মানবিকতার কাছে হার মানে তা জরুরি অবস্থাতেও প্রমাণিত হল।

বিশ্বভারতীর কৃষি বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী উমাশ্রী করের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। গত ২৫ এপ্রিল মাঝরাতে চট্টগ্রামের বাড়িতে মৃত্যু হয় উমাশ্রীর বাবা প্রবীরকান্তি করের। শ্রীনিকেতন রথীন্দ্রপল্লির একটি ভাড়া বাড়িতে থাকছিলেন উমাশ্রী ও তাঁর মা অরুণাদেবী। তাঁরা টেলিফোনে এই খবর পাওয়ার পরে দিশাহারা হয়ে পড়েন। এই কথা জানতে পেরে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে। প্রশাসনিক তৎপরতায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের চট্টগ্রামের বাড়িতে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রীর মা গত ১০ মার্চ মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে শ্রীনিকেতনের রথীন্দ্রপল্লির ভাড়া বাড়িতে এসে উঠেছিলেন। ঠিক ছিল ২৩ মার্চ ফিরে যাবেন। কিন্তু বিধি বাম। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জেরে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়। এরপর লকডাউন শুরু হওয়ায় ফেরার পথও বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা যে যার বাড়ি ফিরে যান। এমনকি বাংলাদেশের একদল পড়ুয়াও ফিরে যান বিশ্বভারতী বন্ধ হওয়ার পরে। কিন্তু উমাশ্রী তাঁর মা’কে চট্টগ্রামে পাঠানোর চেষ্টা করেও বিফল হন। সেই থেকে মা ও মেয়ে রথীন্দ্রপল্লির ভাড়া বাড়িতেই ছিলেন।

উমাশ্রীর সহপাঠী চন্দনা বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত শনিবার রাত দু’টো নাগাদ খবর আসে উমাশ্রীর বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সবরকম সাহায্য করায় বনগাঁ সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। সীমান্তের ওপারে উমাশ্রীর দাদা অপেক্ষা করছিলেন গাড়ি নিয়ে। তিনি ওঁদের বাড়ি নিয়ে যান। এত দ্রুত সমস্ত আযোজন হয়েছে যে মনেই হয়নি এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া হল। বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ থাকছে ফোনে। ওরাও আপ্লুত শেষবারের মতো কাছের মানুষকে চোখের দেখা দেখতে পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায়।’’

শনিবার চন্দনার কাছ থেকেই ভোর তিনটের সময় ফোন এসেছিল বিশ্বভারতীর বিদেশী ছাত্রদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক শান্তনু রায়ের কাছে। তিনি বিষয়টি জানান বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা আধিকারিক অধ্যাপক গনেশচন্দ্র মালিককে। সঙ্গে প্রশাসনের কর্তাদের কাছেও বিষয়টি জানানো হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জন্য শান্তিনিকেতন থানায় ওই ছাত্রী ও তাঁর মা’কে নিয়ে যেতে গনেশবাবুই বিশ্বভারতীর নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত গাড়িটি পাঠান। কাগজপত্র তৈরি হওয়ার পরে আর সময় নষ্ট না করে অন্য একটি গাড়িতে তাঁদের দ্রুত বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছনোর ব্যস্থাও করা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়াই প্রায় অসম্ভব, সেখানে পুলিশ ও বিশ্বভারতীর তৎপরতায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শুধু সীমান্তে পৌঁছনোই নয়, সীমান্ত পার হওয়ার প্রক্রিয়াও দ্রুত সম্পন্ন হয়। যতক্ষণ না সীমান্ত পের হয়েছেন উমাশ্রীরা, পুরো সময়টাই

বীরভূমের প্রশাসনিক কর্তারা এবং বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা এবং বিদেশী পড়ুয়াদের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা যৌথভাবে মনিটর করেছেন।

শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘এত ভোরে খবরটা শুনে আর একটুও সময় নিইনি। প্রথমেই মনে হয়েছিল মানবিকতার স্বার্থেই আমাদের কিছু একটা করতেই হবে। গনেশবাবু এই ব্যাপারে অনেকটাই সাহায্য করেছেন। ওই ছাত্রী এবং তাঁর মা বাংলাদেশ পৌঁছনো পর্যন্ত উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও ঘনঘন আমার কাছে খোঁজখবর নিয়েছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ওঁদের বাড়ি পৌঁছনোয় সাহায্য করতে পেরে আমরাও স্বস্তি পেয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE