Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঝুলে থাকা বোর্ড আর কবে হবে?

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য বাঁকুড়ায় কয়েকটি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন স্থগিত ছিল। একই যুক্তিতে পুরুলিয়াতেও ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ৩৮টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত রেখেছে প্রশাসন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কয়েকটি আসনে প্রার্থীরা জেতার ফলে আরও ৩টি পঞ্চায়েতেও বোর্ড গঠন স্থগিত রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪৩টিতেই ঝুলে রয়েছে বোর্ড। 

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৪
Share: Save:

বাঁকুড়ায় হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, পাশের জেলা পুরুলিয়ায় ঝুলে থাকা পঞ্চায়েত আর সমিতির বোর্ড কবে গঠন করা হবে?

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য বাঁকুড়ায় কয়েকটি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন স্থগিত ছিল। একই যুক্তিতে পুরুলিয়াতেও ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ৩৮টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত রেখেছে প্রশাসন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কয়েকটি আসনে প্রার্থীরা জেতার ফলে আরও ৩টি পঞ্চায়েতেও বোর্ড গঠন স্থগিত রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪৩টিতেই ঝুলে রয়েছে বোর্ড।

বিরোধীদের প্রশ্ন, পুরুলিয়া আর কবে পারবে? তাঁদের অভিযোগ, শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে প্রশাসন এই ব্যাপারে গড়িমসি করছে। তবে পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলছেন, ‘‘যে সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন ঘিরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়েছে। বোর্ড গঠনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন সন্তোষজনক রিপোর্ট দেয়নি। সেটা পেলেই বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।”

এ বার ভোটে আর বোর্ড গঠনের সময়ে বোমা-গুলি চলেছে জেলায়। গুলিতে মৃত্যুও হয়েছে। তার পরেই ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ৩৮টি পঞ্চায়েতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বোর্ড গঠন স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী দলগুলির দাবি, যে সমস্ত পঞ্চায়েত ও সমিতিতে বিরোধীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছে সেখানেই বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, বলরামপুর, জয়পুর, সাঁতুড়িতে তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছেন। সেই তিন পঞ্চায়েত সমিতিতেই বোর্ড গঠন স্থগিত রয়েছে। ঝুলে থাকা ৩৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে অন্তত ২৫টিতে তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। বিদ্যাসাগরবাবু বলেন, ‘‘প্রশাসন সময় দিচ্ছে। আর সেই সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করছে তৃণমূল। ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে বিরোধী সদস্যদের নিজেদের দিকে টেনে হেরে যাওয়া পঞ্চায়েতগুলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি করতে চাইছে ওরা।’’ যদিও তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা পুরোপুরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই। বিরোধীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।’’

পঞ্চায়েত আইনে বলা রয়েছে ভোটের পরে ছ’মাসের মধ্যে বোর্ড গঠন করতে হবে। আবার ওই আইনে এ-ও বলা হয়েছে—আইনশৃঙ্খলার সমস্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে পঞ্চায়েত ও সমিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা যেতে পারে। কিন্তু কত দিনের জন্য, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘আইনের ফাঁক দিকে জেলা প্রশাসন তৃণমূলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে চাইছে এটা এখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা স্থগিত থাকা কয়েকটি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের দাবি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।” একই ভাবে আদালতে গিয়েছে বিজেপি ও সিপিএম।

পঞ্চায়েত ও সমিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত থাকায় প্রত্যন্ত এলাকার উন্নয়ন ও পরিষেবামূলক কাজ ব্যহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। টানা দশ বছর পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধা বলেন, ‘‘যতই প্রশাসক হিসাবে পঞ্চায়েতে বিডিও আর সমিতিতে এসডিওদের দায়িত্ব দেওয়া হোক না কেন, বাস্তবে বোর্ড গঠন না হলে উন্নয়নমূলক প্রায় সমস্ত কাজই থমকে যায়। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে।’’ প্রশাসনের কয়েকটি সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরের এপ্রিলে একশো দিনের কাজের বার্ষিক পরিকল্পনা করার সুবাদে সেই প্রকল্পে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু অন্য উন্নয়নমূলক কাজ যে হোঁচট খাচ্ছে, সে কথা বলছেন কর্তাদেরই কেউ কেউ। কয়েক জন বিডিও-র কথায়, ‘‘জন্ম, মৃত্যু বা অন্য কিছু শংসাপত্র পঞ্চায়েতের কর্মীদের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বিভিন্ন তহবিলে থাকা টাকা খরচ করে এলাকার সার্বিক উন্নয়নের কাজ পঞ্চায়েত থাকলে যে ভাবে করা সম্ভব, সেটা হয়ে উঠছে না।” সমস্যা হচ্ছে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার মত কিছু নতুন করে দেওয়ার ব্যাপারেও।

এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ কোথায় কী হবে, কারা বিভিন্ন ভাতা পাবেন— গ্রাম সংসদের সভাতেই এই সমস্ত সিদ্ধান্ত হয়। বোর্ড গঠন না হওয়ায় সেই সভা হচ্ছে না। সিপিএমের নেতা দীননাথবাবু বলেন, ‘‘বিডিওরা প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন বটে, কিন্তু পঞ্চায়েতে বা সমিতিতে রূপরেখা ঠিক না হওয়ায় তাঁরা কাজটাই করতে পারছেন না।” ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটিয়ে নিচুস্তরের বাসিন্দাদের উন্নয়নের কাজকর্মে সামিল করানোই পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। সেই কথা উল্লেখ করে দীননাথবাবু ও নেপালবাবু বলেন, ‘‘বিডিও আর এসডিওরাই যদি সমস্ত কাজ করতে পারেন তা হলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাটাই অর্থহীন হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও জেলাতে এখন সেটাই ঘটছে।”

তবে প্রশাসক হিসাবে বিডিওরা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন বলে দাবি জেলাশাসকের। তিনি বলেন, ‘‘স্থগিত থাকা সমিতি ও পঞ্চায়েতে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বা পরিষেবা মিলছে না— এমন কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।”

তবে প্রশাসন সূত্রের দাবি, মাস পাঁচ-ছয় বোর্ড গঠন না হওয়ায় কিছুটা চাপেই রয়েছেন শীর্ষ কর্তারা। বিডিও এবং এসসডিওদের উপরে বেশ কিছুটা বাড়তি দায়িত্ব চেপেছে। প্রশাসনের একাংশই চাইছে, বাঁকুড়ার মত পুরুলিয়াতেও এ বার স্থগিত থাকা বোর্ডগুলি গঠন হয়ে যাক। নভেম্বরের শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরে আসার কথা। তিনি ফিরে যাওয়ার পরেই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে সূত্রের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Purulia Mamata Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE