Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Crime

যুবককে ‘খুন’ স্ত্রী-প্রেমিকের, স্বামী-শোকের কান্না থামতেই ধরল পুলিশ

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁচিশের ওই যুবক সোমবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন।

তখনও কান্না নিহতের স্ত্রী শ্যামলীর। মঙ্গলবার করমকাল গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

তখনও কান্না নিহতের স্ত্রী শ্যামলীর। মঙ্গলবার করমকাল গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সদাইপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ০০:২৬
Share: Save:

মাথা থেকে কাঁধ পর্যন্ত মাটির মধ্যে পুঁতে রাখা অবস্থায় এক যুবকের দেহের সন্ধান মিলেছিল বাড়ি থেকে ১৫০ মিটার দূরে। তার ঘণ্টা দুয়েক পরেই ওই যুবককে খুনের অভিযোগে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন নিহতের স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিক। মঙ্গলবার ওই ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় সদাইপুর থানা এলাকার করমকাল গ্রামে। পুলিশের দাবি, স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই গোপীনাথ পাতর নামে ওই যুবককে খুন হতে হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁচিশের ওই যুবক সোমবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে গোপীনাথের দেহ এ ভাবে পড়ে থাকতে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠেন এলাকাবাসী। নিরীহ স্বভাবের যুবককে কে বা কারা খুন করেছে, তা তদন্ত হওয়ার আগে দেহ তুলতে দেওয়া হবে না বলে দাবি তোলেন গ্রামবাসীরা। দাবি উঠে পুলিশ কুকুর আনারও। কিন্তু, দেহের সন্ধান পাওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে প্রথমে গোপীনাথের পাশের বাড়ির যুবক বচ্চন ঘোষ এবং পরে নিহতের স্ত্রী শ্যামলী পাতরকে গ্রেফতার করার পরেই ক্ষোভ কমে স্থানীয় মানুষের।

বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘ ওই যুবককে খুনের অভিযোগে স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা পুলিশের কাছে অপরাধ কবুল করেছে।’’ পুলিশ জানায়, বচ্চনের বাড়ি থেকে মিলেছে রক্তমাখা গেঞ্জি, গামছা ও প্যান্ট।

হত্যাকাণ্ড: মাটিতে পুঁতে রাখা গোপীনাথ পাতরের দেহ।

পুলিশ সূত্রে খবর, দেহ মাটি খুঁড়ে উদ্ধারের পরে দেখা যায় গলার নলি কেটে খুন করা হয়েছে গোপীনাথকে। পাশেই পড়েছিল হাঁসুয়া আকৃতির ওই ধারাল অস্ত্র আর মদের বোতল। তদন্তকারীদের দাবি, জেরার মুখে বচ্চন ও শ্যামলী জানিয়েছে, প্রথমে মদ খাইয়ে বেহুঁশ করে তার পরে নলি কাটা হয়েছে গোপীনাথের। কাজটা প্রেমিক করলেও পুরো পরিকল্পনা ছিল বছর তেইশের শ্যামলীর। পুলিশের আরও দাবি, জেরায় তাদের কাছে শ্যামলী জানায়, স্বামী ও প্রেমিক মদ খেতে যাওয়ার ঘটনা সে জানত। রাত ১০ নাগাদ শ্যামলীই বচ্চনের মোবাইলে ফোন করে জানতে চায় কী অবস্থা। স্বামী বেহুঁশ হয়েছে জেনে তাঁকে মেরে ফেলার কথা প্রেমিককে বলে শ্যামলী। তা হলে পথের কাঁটা দূর হবে। প্রেমিকার কথা শুনে ফিরে এসে নিজের খামার বাড়ি থেকে হাঁসুয়া নিয়ে গিয়ে কাজ হাসিল করে বচ্চন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপীনাথের দেহ করমকাল গ্রাম লাগোয়া মাঠের মধ্যে পড়ে রয়েছে, এ দিন সকাল আটটা নাগাদ এই খবরটা গ্রামের মানুষ প্রথম জানতে পারেন একটি বাচ্চা ছেলের কাছ থেকে। কে বা কারা এ ভাবে মারল রান্নার ঠাকুর বা পাচকের কাজের সঙ্গে যুক্ত গোপীনাথকে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। খবর যায় পুলিশ। ভিড় জমতে থাকে। নিহতের বাড়িতে তখন শোকের ছায়া। তিন বছরের ছেলে ও এক বছরের মেয়েকে নিয়ে সমানে কেঁদে চলেছে স্ত্রী শ্যামলী। ছেলে হারানোর শোকে কাতর গোপীনাথের বাবা কাজল পাতর, মা বুলু দেবী। কিন্তু বৌমাকেই যে পুলিশ খুনের অভিযোগে ধরবে, তা ভাবেননি নিহতের বাবা মা। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘গ্রেফতার হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত কিছু বুঝতেও দেয়নি শ্যামলী। বারবার দাবি করছিল, কে আমার স্বামীকে এ ভাবে মারল বুঝতে পারছি না।’’

কী ভাবে সন্দেহ হল পুলিশের?

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামের লোকের কাছে তারা জানতে পারে, বচ্চনকে নিয়ে গোপীনাথ ও শ্যামলীর মধ্যে অশান্তি ছিল। শ্যামলী আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। কিন্তু, সদাইপুরের করমকাল লাগোয়া রাজগঞ্জ গ্রামে মামাবাড়িতে বহু বছর থেকেছে। তখনই বচ্চনের সঙ্গে তার পরিচয় ও সম্পর্ক। বছর পাঁচেক আগে তার বিয়ে হয় গোপীনাথের সঙ্গে। তবে, বচ্চনের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে গিয়েছে। এর পরেই বচ্চনের খোঁজে বেরোয় পুলিশ। সে ততক্ষণে এলাকা ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। বচ্চন পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরেই ঘটনা সামনে আসে বলে পুলিশের দাবি। বচ্চনের পরিবারের দাবি, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। শ্যামলীর বাপের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বুলুদেবীর আক্ষেপ, ‘‘বৌমার জন্য পরিবারটা ভেসে গেল। এই টুকু নাতি-নাতনিকে কী ভাবে মানুষ করব জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE