Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘হয় মদ ছাড়ো, না হলে আমাকে’

সুন্দরীর জেঠিমা বাহামনি মু্র্মূ বলেন, ‘‘কেন ও বাড়ি যাবে মেয়ে? জামাই নেশা করে সব টাকা উড়িয়ে দেয়। মেয়েটা না খেয়ে পশুর মতো খাটে। এমন চলতে পারে না।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১৪
Share: Save:

মাস তিনেক আগে রেগে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন স্ত্রী সুন্দরী। বলে গিয়েছিলেন— ‘হয় মদ ছাড়ো, না হলে আমাকে।’

তাঁর মান ভাঙাতে শনিবার সাতসকালে চার কিলোমিটার দূরের ভালকোয় শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন সিউড়ির কাঁটাবুনি গ্রামের আদিবাসী যুবক সুভাষ টুডু। তবে লাভ হয়নি। নেশা ছাড়ার আঙ্গীকার না করতে পারায়, স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি ফেরেননি সুন্দরী। তিনি বলেছেন, ‘‘আগে বর নেশা ছাড়ুক। তার পরে ওর সঙ্গে যাব।’’

সুন্দরীর জেঠিমা বাহামনি মু্র্মূ বলেন, ‘‘কেন ও বাড়ি যাবে মেয়ে? জামাই নেশা করে সব টাকা উড়িয়ে দেয়। মেয়েটা না খেয়ে পশুর মতো খাটে। এমন চলতে পারে না।’’

সিউড়ির কাঁটাবুনি গ্রামের এমন ছবি শুধু সুভাষের পরিবার নয়, স্বামীর মদের নেশায় বিরক্ত হয়ে বাপের বাড়ি গিয়েছেন আরও চার তরুণী। যাঁরা সব কষ্ট সহ্য করে স্বামীর ঘর করছেন, তাঁরা এ বার নেশার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে নেমেছেন লড়াইয়ে।

পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, নগরী পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের বেশির ভাগ আদিবাসী জনজাতির। আদিবাসী সমাজে মদ খাওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু মদের প্রকোপ কয়েক গুণ বেড়েছে বেআইনি মদ বিক্রির জেরে। সব চেয়ে বেশি সমস্যা পাথরায়। নগরী গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয় রয়েছে পাথরা গ্রামেই। অভিযোগ, আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে গ্রামে চোলাই মদ বিক্রি ও তৈরিতে কার্যত ওই গ্রামটিই রয়েছে প্রথম সারিতে। লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকেও চোলাই মদ এনে বিক্রি করা হয়। প্রশাসনিক নজরদারির ফাঁক গলে সে সব দেদার বিক্রিও চলে। শ’খানেক পরিবারের কাঁটাবুনি গ্রামে পড়েছে তার প্রভাব।

আরও পড়ুন: বাংলা দখলে জোর বিজেপির

স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন চারেক আগে বেআইনি মদের কারবারীদের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমেছেন পাড়ার মহিলারা। একজোট হয়ে গ্রামের দু’টি ও নগরী গ্রামের একটি বেআইনি চোলাইয়ের ঠেক ভেঙেছেন তাঁরা। মহিলাদের সংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে কী ভাবে বেআইনি মদের কারবার ও নেশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়, তার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সকলে। শনিবার সন্ধেয় তা নিয়ে বৈঠক করেন কাঁটাবুনির মহিলারা। খবর দিয়েছিলেন পুলিশকেও।

ওই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা প্রতিমা হেমব্রম. দাতামণি হেমব্রম, কমলী সরেন, ঊষা সরেনের কথায়— ‘‘এ ছাড়া আর উপায় কী? পুরুষদের মদের নেশার জন্য প্রতি দিন অশান্তি লেগে থাকে। যা আয় হয় তার সবটাই মদের পিছনে উড়িয়ে দেয়। কী ভাবে সংসার চালাব! তাই গ্রামে মদ ঢোকাই বন্ধ করতে চাই। সঙ্গে চাই প্রশাসনকেও।’’

গ্রামের পুরুষ অধিবাসীদের একাংশও মানছেন সে কথা। তাঁরা বলছেন, ‘‘আদিবাসী সমাজে মদ খাওয়ার চল রয়েছে। কিন্তু পরিবার না দেখে নেশার জন্য সব টাকা ওড়ানো অন্যায়। কিন্তু তা জেনেও হাতের নাগালে মদ পেয়ে নিজেকে সামলানো যাচ্ছে না। পরিণতি বুঝেও ওই পথে এগোচ্ছে অনেকে।’’

মদ না ছাড়লে পরিণাম কী হতে পারে, তা টের পাচ্ছেন লাড্ডু মুর্মূও। ‘নেশা ছাড়লে তবেই বাড়ি ফিরব’ বলে বছরখানেক আগে পাড়ুইয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী গুড্ডু। চেষ্টা করেও তাঁকে ফেরানো যায়নি। জেলা আবগারি দফতর ও পুলিশের কর্তারা মানছেন এ ঘটনার সত্যতা। তাঁদের দাবি, নগরীর গ্রামগুলিতে অনেক বার মদের বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে। বেআইনি মদের কারবারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চোলাই মদ তৈরির থেকেও ঝাড়খণ্ড থেকে মদ এনে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করার চল রয়েছে। তাতেই বেড়েছে সমস্যা। মহিলারা তা রুখতে এগিয়ে এলে প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alcoholic Husband Wife Marriage Life
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE