বেপরোয়া: ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে চলেছে টোটো। বাঁকুড়ার শঙ্করহাটি গ্রামের কাছে। নিজস্ব চিত্র
নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাইওয়ে দিয়ে চলছে টোটো। খোদ মহকুমাশাসক বাঁকুড়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে ইমেল করে এই অভিযোগ জানিয়েছেন।
টোটোর যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার দিক খতিয়ে দেখে বাঁকুড়া শহরে টোটো চলাচলের রুট নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে আগেই। কিন্তু জেলার অন্যত্র সে সবের বালাই নেই। সমস্ত রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ায় টোটো। প্রশাসন এই ব্যাপারে যথেষ্ট নজরদারি করছে না বলে অভিযোগ তুলে আসছিলেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, যে কোনও সময়ে টোটোর জন্য ব্যস্ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, সম্প্রতি মহকুমাশাসক (খাতড়া) তনয়দেব সরকার বাঁকুড়ার আরটিও দফতরে ইমেল করে জাতীয় সড়কে টোটো চলাচল করছে বলে অভিযোগ জানান। মহকুমাশাসক জানান, খাতড়া পাম্প মোড়, হাতিরামপুর, সুপুর, ইঁদপুরে রাজ্য সড়কে রমরমিয়ে চলছে টোটো। এই ঘটনায় যেমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে, তেমনই রাজ্য সড়কে যানজটও বাড়ছে।
মহকুমাশাসকের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই কিছু দিন আগে খাতড়া শহরে বেআইনি টোটো চলাচল রুখতে অভিযানে নামেন বাঁকুড়া আরটিও দফতরের ননটেকনিক্যাল ইন্সপেক্টর শুভ্র জুঁই ও টেকনিক্যাল ইন্সপেক্টর হৃষিকেশ জায়সবাল। হাইওয়েতে বেআইনি ভাবে চলার জন্য ১৬টি টোটো আটক করে জরিমানা করা হয়। খাতড়ার টোটো চালকদের দাবি, শহরে টোটোর চাহিদা রয়েছে। অনেকেই টোটো কিনে ফেলেছেন। অথচ প্রশাসন কোনও রুট নির্দিষ্ট না করে দেওয়াতেই সমস্যা হচ্ছে।
সমস্যাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক মহলে আলোচনাও হয়েছে। বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু মহকুমাশাসককে (খাতড়া) টোটো চলার রুট নির্দিষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মহকুমাশাসক (খাতড়া) তনয়বাবু বলেন, ‘‘খাতড়ায় যে সব টোটো চলছে সেগুলির রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ওই টোটোগুলিকে চলাচলের জন্য বৈধ অনুমতি নিতে হবে।’’ তার পরে, আগামী মাসের গোড়ায় টোটোর রুট বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনায় বসা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শহরের মধ্যে বিশেষ জায়গায় টোটো চলাচল করার অনুমতি দিলেও কোনও ভাবেই হাইওয়েতে টোটো চলাচল মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘হাইওয়েতে টোটো চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এটা নিয়ম বিরুদ্ধও। আমি আরটিও-কে নির্দেশ দিয়েছি যাতে এই ব্যাপারে হাইওয়েতে নজরদারি চালানো হয়।’’
আরটিও-র ইন্সপেক্টর শুভ্রবাবু বলেন, ‘‘হাইওয়েতে টোটো চলাচল রুখতে আমরা নজরদারি চালাচ্ছি।’’ তার পরেও অবশ্য বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন হাইওয়েগুলিতে টোটো চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাঁকুড়া থেকে ধলডাঙা যাওয়ার রাস্তায় টোটোর যাতায়াত অনেক বেশি।
অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়ে টোটো চালকদের একাংশের দাবি, ‘‘প্রশাসন আমাদের শহরের ভিতরে ঢোকার অনুমতি না দেওয়ায় ব্যবসা মার খাচ্ছে। তাই বাইরের ভাড়া পেলে চলে যাই।’’
আর সাধারণ যাত্রীদের বক্তব্য, ‘‘যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এই এলাকায় কিছুই নেই। রিকশার ভাড়া অনেক বেশি। তাই বাধ্য হয়েই টোটোতে চড়তে হচ্ছে।’’
তবে নিয়ম মানা না হলে তাঁরা পাশে থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বাঁকুড়া জেলা ই-রিকশা ইউনিয়নের সভাপতি সিন্টু রজক। তিনি বলেন, ‘‘নিয়ম ভাঙাকে কোনও ভাবেই আমরা সমর্থন করি না। কেউ নিয়ম ভেঙে প্রশাসনের শাস্তির মুখে পড়লে আমরা তাঁকে সমর্থন করব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy