Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
দিদির দেহ মর্গে পড়ে

দাহ কবে জানেন না বোনেরা

হাসপাতালের কর্মীরা জানাচ্ছেন, দুই বোনে কখনও মর্গে যাচ্ছেন, কখনও ওয়ার্ডে তপতীদেবীর কাছে ফিরে আসছেন। তাঁরা কী করবেন স্থির করতে পাচ্ছেন না। পড়শিরাও জানাচ্ছেন, পাড়াতেও দুই বোন বিড়বিড় করতে করতে ঘুরছেন।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০১:০৩
Share: Save:

দিদির দেহ মর্গে পড়ে। ছোট বোন পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু মানসিক ভাবে অসুস্থ বাকি দুই বোন এই পরিস্থিতিতে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। বাঁকুড়ার প্রতাপবাগানের ওই পরিবারের পাশে কেন প্রশাসন দাঁড়াচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শহরে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতাপবাগানের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় অর্চনা পালের (৬০) পচন ধরে যাওয়া দেহ। তিনি বাড়িতে তিন বোনের সঙ্গে থাকতেন। অথচ বোনেরা সৎকার করেননি। খবর দেননি পড়শিদেরও। দুর্গন্ধ পেয়ে পড়শিরাই থানায় খবর দিয়েছিলেন। অর্চনাদেবীর তিন বোন টুকটুকদেবী, লিলিদেবী ও তপতীদেবী মানসিক অসুস্থ বলে তিন জনকেই পুলিশ বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করেন। তপতীদেবী আগে থেকেই পা ভেঙে বাড়িতে পড়েছিলেন। তিনি হাঁটতে পারেন না। তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। তবে শুক্রবারই ছেড়ে দেওয়া হয় টুকটুকদেবী ও লিলিদেবীকে।

তারপর থেকেই ওই দুই বোন কী করবেন মনস্থির করে উঠতে পাচ্ছেন না। দিদি অর্চনাদেবীর দেহ মর্গে পড়ে রয়েছে। শনিবার বাঁকুড়া মেডিক্যালের মর্গে যান দুই বোন। দিদির দেহ কী ভাবে নিয়ে যাবেন তা নিয়ে খোঁজ নেন। মর্গের কর্মীরা তাঁদের আশ্বস্ত করেন, দেহ সেলাই করা আছে। নিয়ে যেতে অসুবিধা হবে না। এরপরেই দুই বোন নিজেরা বিড়বিড় করতে করতে মর্গ থেকে বেরিয়ে চলে যান। সেখান থেকে খোঁজ করতে করতে এসে পড়েন মেডিক্যালের মহিলা অর্থোপেডিক্স বিভাগে। মেঝেতে শুয়ে তপতীদেবী। নার্সরা তাঁদের বোনের কাছে থাকতে বললে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘ও আমাদের কেউ নয়’। তাহলে আসছেন কেন? প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই এক জন আরেক জনের হাত ধরে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন।

ফাঁপড়ে পড়েছেন নার্সরা। তাঁদের অভিযোগ, “তপতীদেবীকে সেলাইন দিলে টেনে খুলে দিচ্ছেন। তাঁর দিদিরা মাঝে মাঝেই আসছেন। কিছু জরুরি কাগজপত্রও নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু আমরা সেই কাগজপত্র চাইলে বা বোনের কাছে তাঁদের থাকতে বললেই ‘ও আমাদের কেউ নয়’ বলে চলে যাচ্ছেন।”

হাসপাতালের কর্মীরা জানাচ্ছেন, দুই বোনে কখনও মর্গে যাচ্ছেন, কখনও ওয়ার্ডে তপতীদেবীর কাছে ফিরে আসছেন। তাঁরা কী করবেন স্থির করতে পাচ্ছেন না। পড়শিরাও জানাচ্ছেন, পাড়াতেও দুই বোন বিড়বিড় করতে করতে ঘুরছেন। তাঁদের দাবি, প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে মর্গ থেকে দেহ এনে সৎকারের ব্যবস্থা করুক। তিন বোনের মানসিক সমস্যারও চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক মেডিক্যাল কলেজ।

বাঁকুড়ার বিধায়ক তথা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্পা দরিপা শনিবার মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে তপতীদেবীকে দেখে এসেছেন। তিনি বলেন, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে ওঁর চিকিৎসা গুরুত্ব দিয়ে করতে বলেছি। লিলিদেবী ও টুকটুকদেবীর সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তাঁরা মর্গে গিয়ে ছাড়পত্র দিলেই এলাকার ছেলেরা অর্চনাদেবীর দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তাঁরা সেই ছাড়পত্র দিচ্ছেন না। দেখছি কী করা যায়।”

বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘রবিবার মর্গ থেকে অর্চনাদেবীর দেহ ছাড়িয়ে এনে দাহ করার ব্যবস্থা করা হবে। পুরসভার শববাহী গাড়িতে দেহ নিয়ে আসা হবে।’’ তিনি জানান, টুকটুকদেবী ও লিলিদেবীর চিকিৎসার প্রয়োজন। সে জন্য তিনি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bankura Medical College Bankura Morgue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE