ধৃত। নিজস্ব চিত্র
জালিয়ানওয়ালাবাগ এক্সপ্রেস পুরুলিয়া স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পরেই সোমবার রাতে খবরটা এসেছিল। সারা রাত স্টেশন ও আশপাশে তল্লাশি চালিয়েও আরপিএফ এবং জিআরপি কর্মীরা হদিস করতে পারেননি। মঙ্গলবার ভোরে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে ব্যাগ নিয়ে সন্দেহজনক ভাবে এক যুবতীকে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠেছিলেন আরপিএফ এবং জিআরপি কর্মীরা। শেষে ব্যাগ খুলতেই মিলে যায় মাদক।
বছর ছত্রিশের নভজ্যোত কউর ওরফে জ্যোতিকে গ্রেফতারের পরে এমনই দাবি করছেন আরপিএফ-এর পুরুলিয়ার ওসি সঞ্জয় হাজরা। তাঁর দাবি, ‘‘ঝাড়খণ্ডের টাটানগরের মানগো থানার ডিমনা রোডে ওই যুবতীর বাড়ি। তাঁর ব্যাগ থেকে ১৭ প্যাকেট আফিম পাওয়া গিয়েছে। যার বাজার মূল্য ছয় লক্ষ টাকারও বেশি।’’ তিনি জানান, ওই মহিলাকে আটক করে জিআরপি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক-আইনে মামলা করা হয়েছে। এ দিন তাঁকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হাজতে পাঠান।
আরপিএফ সূত্রে খবর, ওই মহিলার গতিবিধি সন্দেহজনক বলে রেলের গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল। সোমবার টাটানগর স্টেশনের সিসিটিভির ফুটেজে ওই মহিলাকে জালিয়ানওয়ালাবাগ এক্সপ্রেসের কামরায় উঠতে দেখে তৎপর হয়ে ওঠেন রেলের গোয়েন্দারা।
কিন্তু যখন তাঁদের নজরে আসে, তার অনেক আগে ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। অমৃতসরগামী ট্রেনটি পুরুলিয়া ছুঁয়ে অমৃতসরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পুরুলিয়ার আরপিএফ-কে।
আরপিএফের ওসি সঞ্জয়বাবু জানান, ট্রেনটি অনেক রাতে পুরুলিয়ায় পৌঁছয়। যাত্রীরা নেমে যান। ট্রেনও বেরিয়ে যায়। কিন্তু রাতে ওই মহিলাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাতভর আরপিএফ এবং জিআরপি যৌথ ভাবে সারা স্টেশনে নজরদারি চালিয়েও লাভ হয়নি। শেষে ভোরে তাঁকে প্ল্যাটফর্মে দেখতে পাওয়া যায়।’’ তিনি জানান, পুরুলিয়া স্টেশন থেকে রক্ষীরা ট্রেনে উঠে নজরদারি শুরু করতেই ওই মহিলা প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়েন।
আরপিএফ এবং জিআরপি-র দাবি, প্রাথমিক ভাবে জেরায় ধৃত তাদের জানিয়েছেন, তাঁকে এই প্যাকেটগুলি অমৃতসরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর বিনিময়ে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়। স্বামী-বিচ্ছিন্না এই মহিলা টাকার জন্যই এই কাজের ভার নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন।
তদন্তকারীরাও মনে করছেন এই মহিলা ‘ক্যারিয়ার’। তিনি ই-টিকিট নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলেন। ওই টিকিট কোন মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে কাটা হয়েছে, তা খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া পুরুলিয়ায় জেলার বিভিন্ন স্টেশন মাদক পাচারকারীদের ‘করিডর’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বছর দু’য়েক আগে পুরুলিয়া স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে পরিত্যক্ত দু’টি রুকস্যাক থেকে প্রচুর পরিমাণে গাঁজা উদ্ধার করেছিল।
মাস ছয়েক আগে পুরুলিয়া স্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে এক মহিলাকে চারটি ছোট বস্তা নিয়ে বসে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় আরপিএফ কর্মীদের। বস্তা খুলে তল্লাশি চালানোর সময় ধরা পড়ে মাদক। বিহারের কোনও একটি স্টেশন থেকে ওই প্রৌঢ়ার গন্তব্য ছিল খড়্গপুর। আরপিএফ জানাচ্ছে, ওই মহিলাও ছিলেন ‘ক্যারিয়ার’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy