Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পুরন্দরপুরে দূষণ রুখবেন মহিলারা

সিউড়ি ২ ব্লকের বক্রেশ্বর নদের ধারে নির্জন প্রকৃতিঘেরা জায়গাটি বেহিরা কালীতলা বলে পরিচিত।

দূষণ রুখতে প্রচার। পুরন্দরপুরের বেহিরা কালীতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

দূষণ রুখতে প্রচার। পুরন্দরপুরের বেহিরা কালীতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৭
Share: Save:

নদীর ধার ঘেঁষে শাল, পিয়াল, মহুয়ার জঙ্গল। পাশেই শতাব্দীপ্রাচীন কালীমন্দির। সিউড়ি ২ ব্লকের বক্রেশ্বর নদের ধারে নির্জন প্রকৃতিঘেরা জায়গাটি বেহিরা কালীতলা বলে পরিচিত।

পুরন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ওই জায়গাটি স্থানীয় মানুষের তো বটেই, প্রিয় পিকনিক পার্টিদেরও। একটি বড়মাপের ইকো-পার্ক গড়ে পুরোদস্তুর পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তাকে বদলাতে তৎপর হয়েছে জেলা পরিষদ। সেই সূত্রেই বেহিরা কালীতলার পরিবেশ যাতে দূষিত না হয়, সিউড়ি ২ ব্লক প্রশাসন জোর দিয়েছে পরিবেশ দূষণ রোধে।

শীতের সময় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতি বারই জমজমাট থাকে ওই এলাকা। ২৫ ডিসেম্বর থেকে সেখানে পিকনিক পার্টির ভিড় জমতে শুরু করে। কিন্তু এ বারই প্রথম, পরিবেশ যাতে দূষিত না হয় সে জন্য সতর্ক ব্লক প্রশাসন। চড়ুইভাতির ক্ষেত্রে থার্মোকল ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। তারস্বরে মাইক বাজিয়ে নাচ-গান, প্রকাশ্যে মদ্যপানও চলে। সে সব বন্ধে বেহিরা কালীতলার প্রবেশপথেই নোটিস ঝোলানো হয়েছে। তাতে সকলের জন্য একগুচ্ছ বার্তা। এখানেই শেষ নয়, পুরো বিষয়টি নজরদারির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে মহিলাদের একটি সঙ্ঘ সমবায় ‘উদ্বোধন’-এর সদস্যদের হাতে।

সিউড়ি ২ ব্লকের বিডিও শেখ আবদুল্লাহ বলছেন, ‘‘ব্লকের অন্যতম সেরা পিকনিক স্পট এটি। শুনেছি প্রতিবার পিকনিক করতে এসে কিছু দল ডিজে বা তারস্বরে মাইক বাজিয়ে, যত্রতত্র নোংরা-আবর্জনা, প্লাস্টিক ফেলে বা মদ্যপ অবস্থায় অশালীন আচরণ করে পরিবেশ নষ্ট করে। তাতে সমস্যায় পড়ে পরিবার নিয়ে পিকনিক করতে আসা লোকেরা।’’ তিনি জানান, সেই সমস্যা মেটাতেই এ বার ভিন্ন ভাবনা নেওয়া হয়েছে।

সিউড়ি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী চিন্তা বাগদি বলছেন, ‘‘এলাকার পরিবেশ যাতে দূষিত না হয়, সে জন্য থার্মোকল ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক করা হয়েছে শালপাতা।’’ যুগ্ম বিডিও বিশ্বজিৎ দত্ত জানান, এই স্পটটি জনপ্রিয় ছিলই, জেলা পরিষদ অনেক টাকা খরচ করে এখানে একটি ইকো পার্ক তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে। তাই এ বার থেকেই সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে তৎপর হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসন।

কী সেই ব্যবস্থা?

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কী কী এখানে করা যাবে না, ইতিমধ্যেই ওই পিকনিক স্পটে তার প্রচারে ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। একাধিক জায়গায় ডাস্টবিন তৈরি করা হয়েছে। সর্বোপরি উদ্বোধন সঙ্ঘ সমবায়ের মহিলা সদস্যদের নজরদারির দায়িত্ব দেওয়ায় হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয়পত্র থাকছে। জানানো হয়েছে, ওই দলের সদস্যরা দেখবেন, যে দলগুলি চড়ুইভাতি করতে এসেছে, তাদের কেউ জোরে মাইক বা বক্স বাজাচ্ছেন কিনা, থার্মোকলের পাতা ব্যবহার করছে কিনা, প্রকাশ্য মদ খাচ্ছেন কিনা বা এখানে সেখানে প্লাস্টিক বোতল ফেলছেন কিনা ।

এই কাজের জন্য প্রত্যেক পিকনিক পার্টির কাছ থেকে প্রশাসনের ঠিক করা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নেবেন মহিলা সদস্যরা। যাকে ‘পরিচ্ছন্নতা খরচ’ বলা হচ্ছে। ১০, ২০ বা তার বেশি সদস্যযুক্ত বনভোজনের দলের জন্য যথাক্রমে ৫০, ১০০, ২০০ টাকার রসিদ ছাপিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। মহিলা সঙ্ঘ সমবায়ের কাছে মিলবে শালপাতাও।

উদ্বোধন সঙ্ঘ সমবায়ের সভানেত্রী শ্রীমতি হেমব্রম সরেন, সম্পাদিকা নির্মলা দাস এবং কোষাধ্যক্ষ আশারানি দে বলছেন, ‘‘১৬০টি মহিলা স্বনির্ভর দল রয়েছে আমাদের সমবায়ের আওতায়। তার মধ্যে ইচ্ছুক ২৬ জন মহিলা সদস্য এই কাজে নেমেছেন। এলাকার পরিবেশ দূষণ রোধে ব্লক প্রশাসনের একটি ভাল উদ্যোগ। আমরা সাধ্যমত সেটা পালনের চেষ্টা করছি।’’ আশারানিরা বলেন, ‘‘২৫ ডিসেম্বর ১০টি দল এসেছিল। ৭৬০টাকা পরিচ্ছনতা খরচ বাবদ ও শালপাতা বিক্রি করে ৬৫ টাকা মিলেছে।’’ তাঁরা জানান, বিকেল ৪টের পরে বেহিরা কালীতলা ছাড়ার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri PUrandarpur Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE