Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সেতুর কাজ পিছোবে, ধারণা পূর্ত দফতরের

পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বিপত্তির মূলে দিন কয়েক ঝাড়খণ্ডের শিকাটিয়া বাঁধ ও খয়রাশোলের হিংলো জলাধার থেকে ৬০ হাজার কিউসেক হারে ছাড়ে জল।

অঘটন: অজয় নদে পড়ে রয়েছে নতুন সেতুর কাঠামো। বুধবার ইলামবাজারে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

অঘটন: অজয় নদে পড়ে রয়েছে নতুন সেতুর কাঠামো। বুধবার ইলামবাজারে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৩৮
Share: Save:

নদীগর্ভে অক্ষত রয়েছে সব ক’টি পিলার বা স্থম্ভ। বড়সড় ক্ষতি কিছু হয়নি। তবে, জলের তোড়ে ইলামবাজারে অজয় নদের উপর নির্মীয়মাণ সেতু ঢালাইয়ের কাঠামো ভেঙে পড়ায় কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা পিছিয়ে যাবে বলেই মনে করছে সেতু নির্মাণকারী সংস্থা এবং পূর্ত (সড়ক) দফতর।

পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বিপত্তির মূলে দিন কয়েক ঝাড়খণ্ডের শিকাটিয়া বাঁধ ও খয়রাশোলের হিংলো জলাধার থেকে ৬০ হাজার কিউসেক হারে ছাড়ে জল। ফলে নদে জলস্তর বেড়ে গিয়েছিল প্রায় ২০ ফুট। তার জেরেই রবিবার রাত থেকে সোমবারের মধ্যে নদীগর্ভে সেতুর জন্য তৈরি স্থম্ভগুলির উপরে থাকা ঢালাইয়ের কাঠামোর একটা বড় অংশ ভেঙে পড়ে নদীর জলে। দুমরে মুচড়ে যায় লোহার খাঁচা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দু’টি স্টেজের ( দুই পিলারের মধ্যবর্তী অংশ) ঢালাইও। এই ক্ষতি সামাল দিয়ে ফের কাজ শুরু করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করা যাবে কিনা, সংশয় তৈরি হয়েছে তা নিয়েই।

পূর্ত (সড়ক) দফতরের ডিভিশন ২-এর এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অশোক কুমার বলছেন, ‘‘সেতু ঢালাইয়ের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ’২০ সালের ফেব্রুয়ারি। কিন্তু আমরা চাইছিলাম, মাস দুয়েক আগেই কাজ শেষ করতে। সেটা বোধহয় হচ্ছে না। প্রকৃতির উপরে তো কারও হাত নেই। তবু জল সরলে আমরা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার আপ্রাণ চেষ্টা করব।’’

মন্ত্রিসভায় আলোচনার পরে ২০১৭ সালের গোড়ায় তিন লেনের ওই নতুন সেতুর জন্য ১০২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য। ১৯৬২ সালের ১৭ জুন অজয় নদের উপরে ইলামবাজারে বর্ধমান-বীরভূম সংযোগকারী যে সেতুটি নির্মিত হয়েছিল, সেই পুরনো সেতুটির প্রযুক্তি বর্তমানে প্রায় অচল। সেটি আর সংস্কার করে কোনও ভাবেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না। তা ছাড়া যানবাহনের চাপেও প্রাচীন সেতুটির বর্তমান অবস্থা জীর্ণ। পুরনো সেতুর উপরে ভরসা না করে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে নতুন সেতু গড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, মনোনীত নির্মাণকারী সংস্থা ইলামবাজারে অজয়ের উপরে পুরনো সেতুটির পূর্ব দিকে (নদের ‘ডাউন স্ট্রিমে’) ৪৫ মিটার দূরত্বে নতুন সেতু তৈরির কাজে হাত দেয় ’১৭ সালের প্রথম দিকেই। ৫০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ ওই সেতুর জন্য নদীগর্ভে বেশ কিছু পিলার তৈরির কাজ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগেই। বর্তমানে বর্ধমানের দিক থেকে বীরভূম দিকে পিলারের উপরে কাঠামো বসিয়ে ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেছিল সেতু নির্মাণকারী সংস্থা। জলের তোড় আপাতত থামিয়ে দিয়েছে সে কাজ। প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছর বর্ষায় বীরভূমে প্রথম দিকে তেমন বৃষ্টিপাত হয় নি। অজয়ে জল ছিল সামান্যই। সেই সুযোগকে কাজ লাগিয়ে নদীবক্ষের ‘সাপোর্ট’ নিয়ে ঢালাইয়ের জন্য কাঠামো তৈরি এবং শাটারিং করে ধাপে ধাপে কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু, ছবিটা বদলাতে শুরু করে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে এসে।

দিন কয়েক বীরভূম ও ঝড়খণ্ডে লাগাতার বর্ষণের ফলে এমনিতেই ফুঁসছিল অজয়। তার উপরে রবিরার থেকে ওই নদের উপর থাকা শিকাটিয়া বাঁধ থেকে ৫০ হাজার কিউসেকের বেশি জল ছাড়া হয়েছিল। এ ছাড়া ৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল হিংলো জলাধার থেকে (যে জলও হিংলো নদের মাধ্যমে অজয়ে মেশে দুবরাজপুরের পলাশডাঙা গ্রামের কাছে)। হঠাৎ অজয়ে এত পরিমাণ জল বেড়ে যাওয়ায় বিপত্তি।

কী অবস্থায় রয়েছে নির্মীয়মাণ সেতু, মঙ্গলবারই তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা। দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের কথায়, ‘‘যে গতিতে কাজ হচ্ছিল, তাতে এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে ঢালাইয়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা হবে না। কারণ লোহার খাঁচা বা কাঠোমো ঠিক করে, ফের ঢালাইয়ের জন্য শাটারিং

করে কাজ শুরু করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।’’ একই দাবি নির্মাণকারী সংস্থার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE