প্রতীকী ছবি।
পেটের দায়ে নানা সমস্যা নিয়েও ভিন্ রাজ্যে কাজের জন্য পড়ে থাকা শ্রমিকদের ফিরে আসার ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজ ছেড়ে ফিরে এলে তাঁদের অন্য ব্যবসা করতে রাজ্য সরকার পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দেবে বলে গত সপ্তাহেই পুরুলিয়ার কোটশিলার প্রশাসনিক সভায় ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার সেই ডাকে সাড়া মিলল বাঁকুড়ায়। মুম্বই ও কেরলে কর্মরত ছয় যুবক ফিরে আসতে চেয়ে বুধবার বাঁকুড়া জেলাশাসকের দফতরে সরকারি সাহায্যের আবেদন জানালেন।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “আবেদনপত্র জমা পড়েছে বলে শুনেছি। ওই আবেদনগুলি খতিয়ে দেখে নিয়ম অনুযায়ী যা করার তা করব।”
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত বছর নভেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকারের নোটবন্দির সিদ্ধান্তের জেরে ভিন্ রাজ্যে কর্মরত এ রাজ্যের বহু শ্রমিক কাজ হারান। সেই সময় কাজ হারানো শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে মুখ্যমন্ত্রী ‘সমর্থন’ প্রকল্প চালু করেন। সেই প্রকল্পে কাজ হারানো শ্রমিকদের এখানেই কিছু ব্যবসা করতে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি রাজস্থানে কাজ করতে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন হন মালদহের যুবক আফরাজুল। সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আর বাইরের রাজ্যে কাজ করার দরকার নেই। তাঁরা বাড়ি ফিরে এসে ব্যবসা করতে চাইলে সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করে দেবে। মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় আশার আলো দেখেছেন বাইরে কাজে যাওয়া এ রাজ্যের বহু শ্রমিকই।
এ দিন জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে দেখা গেল ওন্দার ঘোলকুন্ডার বাসিন্দা কেশব গোস্বামী, বাপি সেন ও পড়শি গ্রাম ডুমুরিয়ার বাসিন্দা মনোরঞ্জন দত্ত আবেদনপত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন। তাঁরা জানান, ২০১০ সাল থেকে মুম্বইয়ে একটি সংস্থায় তাঁরা প্রসাধনী জিনিসপত্র প্যাকেজিংয়ের কাজ করেন। দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করিয়ে তাঁদের ৪৬০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। বছরে এক বার তাঁরা দিন দশেকের টানা ছুটি পান। সেই সময়ে তাঁরা বাড়িতে ফেরেন।
কেশবের অভিযোগ, “স্ত্রী, বাবা, মা-কে ছেড়ে দিয়ে ভিন্ রাজ্যে থাকতে হচ্ছে। সেখানে নিজের কোনও স্বাধীনতা নেই। হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও পর্যাপ্ত মাইনে পাই না।” একই বক্তব্য বাপি, মনোরঞ্জনদেরও। তাঁরা বলেন, “ওখানে কাজ করার মতো পরিবেশ নেই। নেহাত পেটের দায়েই আমাদের থাকতে হচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী সাহায্যের আশ্বাস দেওয়ায় নতুন করে চিন্তাভাবনা করা শুরু করেছেন তাঁরা।
কী করবেন পঞ্চাশ হাজার টাকা পেলে? কেশবের ইচ্ছে, বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতির ব্যবসা শুরু করব ভাবছি। বাপি চান মেয়েদের প্রসাধনী জিনিসপত্র বিক্রি করতে। মনোরঞ্জনের ইচ্ছা নিজস্ব টেলারিংয়ের ব্যবসা চালু করার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেশব, বাপি, মনোরঞ্জন ছাড়াও এ দিনই পাত্রসায়র ব্লক থেকে দু’জন ও ইন্দাস ব্লক থেকে এক জন যুবক সাহায্যের আবেদন করেছেন জেলাশাসকের দফতরে। এই তিন জনই কেরলে দিন মজুরির কাজ করেন। তবে প্রত্যেক আবেদনকারী সম্পর্কেই ভাল করে খোঁজখবর নিয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
ঘটনা হল, এই জেলার কত শ্রমিক বাইরে কাজে গিয়েছেন সেই তথ্য নেই জেলা প্রশাসন বা শ্রম কমিশনারের দফতরে। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “এ রাজ্যের মানুষ ভিন্ রাজ্যে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়ুক, মুখ্যমন্ত্রী এটা চান না। তাই বাইরে কাজে গিয়ে সমস্যায় পড়া শ্রমিকদের পাশে রাজ্য সরকার দাঁড়াবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy