Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পরপর মেয়ে, মায়ের মৃত্যু

পরপর দু’টি কন্যাসন্তান। সেই আক্রোশে এক তরুণীকে খুন করে বাঁশে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে।শুক্রবার গভীর রাতে তারাপীঠ থানার সাহাপুরের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম রাখি লেট (২২)। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ওই গ্রামেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তারাপীঠ শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৭
Share: Save:

পরপর দু’টি কন্যাসন্তান। সেই আক্রোশে এক তরুণীকে খুন করে বাঁশে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার গভীর রাতে তারাপীঠ থানার সাহাপুরের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম রাখি লেট (২২)। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ওই গ্রামেই। মৃত্যুর খবর পেয়ে শনিবার হাসপাতাল চত্বরে থাকা মৃতের স্বামী ঝন্টু লেটকে গণপিটুনি দেন রাখির বাপের বাড়ির লোকজন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে আটক করে। যদিও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর চারেক আগে মাড়গ্রাম থানার কালুহা গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় দিনমজুর প্রভাত লেটের বড় মেয়ে রাখির সঙ্গে ঝন্টুর বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দু’বছরের মাথায় দম্পতির একটি কন্যাসন্তান হয়। মাস দুয়েক আগে রাখি আর একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। প্রভাতের দাবি, শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ জামাই তাঁকে ফোন করে জানান, তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রাত ৩টে নাগাদ ঝন্টু তাঁকে আবার ফোন করে জানান, রাখিকে রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। অত রাতে লোকজন জোগাড় করে প্রভাত এবং তাঁর পরিবারের পক্ষে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এ দিন সকালে রামপুরহাট হাসপাতালে তিনি মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পান।

এ দিন হাসপাতাল চত্বরে কাঁদতে কাঁদতে প্রভাত অভিযোগ করেন, ‘‘পরপর দু’টি কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মেয়ের উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত। ওই আক্রোশ থেকেই জামাই ও শাশুড়ি মারধর করে মেয়েকে খুন করেছে। আত্মহত্যা বলে ধোকা দেওয়ার জন্য পরে মৃতদেহটি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ এ দিকে গ্রামের মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই কালুহা থেকে পঞ্চাশ ষাট জন বাসিন্দা হাসপাতালে ছুটে আসেন। অভিযোগ, তাঁরা হাসপাতাল চত্বরে ঝন্টুকে দেখতে পেয়ে বেধড়ক মারেন। মারমুখি ওই পরিজনদের কাছ থেকে পুলিশ কোনও রকমে ঝন্টুকে উদ্ধার করে সরিয়ে নিয়ে যায়।

যদিও খুনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে রাখির শ্বশুরবাড়ি। মৃতের জেঠতুতো শ্বশুর মৃত্যুঞ্জয় লেটের দাবি, ‘‘রাত ১টা নাগাদ বৌমাকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে তাঁর খোঁজ শুরু হয়। বাড়ির পাশেই দু’টি নিম গাছের সঙ্গে বাঁধা একটি বাঁশের সঙ্গে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখিকে পাওয়া যায়।’’ খবর যায় তারাপীঠ থানায়। পুলিশ এসে দড়ি কেটে রাখিকে রামপুরহাট হাসপাতালে পাঠায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে জানান। মৃত্যুঞ্জয়ের আরও দাবি, মানসিক অবসাদ থেকে রাখি আত্মঘাতী হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর ঠিক কারণ বলা যাবে না। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে ওই তরুণী নিজেই আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন। এখনও পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের হয়নি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Girl Child Murder Young Lady
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE