Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নদীতে নেমে তলিয়ে মৃত্যু

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পাড়ার বন্ধু বিশ্বজিৎ দাসের সঙ্গে নদীতে স্নান করতে যান শুভজিৎ। বন্ধু যখন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে স্নানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন নদীতে ঝাঁপ দেন শুভজিৎ।

শুভজিৎ শিকদার। নিজস্ব চিত্র

শুভজিৎ শিকদার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

স্নান করতে নেমে নদীর ঘুর্ণিতে তলিয়ে মৃত্যু হল এক ইঞ্জিনিয়ারের। শুক্রবার বেলা একটা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে সাঁইথিয়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমবাগান লাগোয়ো ময়ূরাক্ষী নদীতে। ঘটনার জেরে পুলিশের একটি গাড়িও ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। পুলিশ জানায়, মৃত শুভজিৎ শিকদারের (২৮) বাড়ি সাঁইথিয়ার বিবেকানন্দ পল্লিতে। তিনি বিদ্যুৎ দফতরের মুর্শিদাবাদের গোকর্ণ সাবস্টেশনে জুনিয়র টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিছু দিন আগে ছুটিতে বাড়ি আসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পাড়ার বন্ধু বিশ্বজিৎ দাসের সঙ্গে নদীতে স্নান করতে যান শুভজিৎ। বন্ধু যখন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে স্নানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন নদীতে ঝাঁপ দেন শুভজিৎ। দু’জনের কেউই সাঁতার জানতেন না। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘আমার চোখের সামনেই তলিয়ে গেল ও। কিছুই করতে পারলাম না!’’ ঘণ্টা দু’য়েক পরে ডুবে যাওয়া জায়গা থেকে হাত দশেক দূরে শুভজিতের দেহ উদ্ধার হয়। ওই সময় পুলিশের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েছিল। শুভজিৎকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোলা হয় সেই গাড়িতে। কিন্তু চালক না থাকায় গাড়ি ছাড়তে দেরি হচ্ছে দেখে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, উদ্ধারের পরও শুভজিতের দেহে প্রাণ ছিল। সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না বলেই ওঁকে বাঁচানো যায়নি। সেই অভিযোগে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে উপস্থিত জনতার একাংশ।

ছেলের শোকে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না মৃতের বাবা শ্যামল শিকদার এবং পরিবারের লোকজন। মুষড়ে পড়েছে বিশ্বজিৎও। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হবে।

স্থানীয়েরা পুরসভার একাংশের গাফিলতিকেও দায়ী করেছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, যেখানে তলিয়ে যান শুভজিৎ, সেখানে পুরসভার জল তোলার গর্ত রয়েছে। ফলে নদীর ওই অংশে গভীরতাও বেশি। ওই যুবকেরা নদীতে নিয়মিত স্নানে না যাওয়ায় বুঝতে পারেননি ওই জায়গায় গর্তটা অত বেশি। তৈরি হয়েছে ঘুর্ণিও। বিপদ বাঁধে সেখানেই। প্রশ্ন উঠছে, জলের জন্য পুরসভা গর্ত করলেও আলাদা করে কেন চিহ্নিত করে রাখল না? পুরপ্রধান বিপ্লব দত্তকে ফোনে যায়নি। উপপুরপ্রধান কাজী কামাল হোসেন বলেন, ‘‘ওই এলাকায় কোনও গর্ত আছে বলে জানা নেই। তবে ওখানে একটা পাম্প হাউস থেকে জল সরবারাহ করা হয়।’’

এমন বালির গর্তে পড়ে মৃত্যু আগেও হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু রাঢ়বঙ্গেই গত দেড় মাসে নদীতে স্নান করতে কিংবা মাছ ধরতে নেমে বালির গর্তে অন্তত ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশেরই একটি অংশ মানে, প্রতিটির পিছনেই বালির অবৈধ কারবারে তৈরি হওয়া গর্ত, এবং সেখানে তৈরি হওয়া ঘুর্ণিই দায়ী। সিউড়ির খটঙ্গা সংলগ্ন রাইপুর ঘাটে ২৩ জুন ওই বালির গর্তে পড়েই মৃত্যু হয়েছিল এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। তলিয়ে যাওয়ার সতেরো ঘণ্টা ডুবুরি নামিয়ে উদ্ধার হয় সেই দেহ। তারপরে দেহ আটকে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে আটকে রাখা হয় পুলিশ, দমকলের গাড়ি। ক্ষোভ সামলাতে গিয়ে উল্টে হেনস্থার শিকার হন শাসকদলের এক নেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Subhajit Sikdar ময়ূরাক্ষী
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE