Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
প্রতারণা-কাণ্ডে জালে অভিনেত্রী

প্রতারিত তিনিও, দাবি সভাধিপতির

পুরুলিয়ার ব্যবসায়ীকে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে ধৃত অভিনেত্রী সোমা বাগ ওরফে মিত্তলের সঙ্গে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের এক শীর্ষ নেতার যোগ পেয়েছে কলকাতা পুলিশ।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ০১:৩৪
Share: Save:

পুরুলিয়ার ব্যবসায়ীকে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে ধৃত অভিনেত্রী সোমা বাগ ওরফে মিত্তলের সঙ্গে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের এক শীর্ষ নেতার যোগ পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। এ বার ওই অভিনেত্রীর হাতে প্রতারিত হয়েছেন বলে দাবি করলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোও।

সিনেমা তৈরির জন্য পুরুলিয়া শহরের ব্যবসায়ী আশিস সুরেখার কাছ থেকে কয়েক দফায় কোটি টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে টলিউডের অভিনেত্রী সোমাকে রবিবার গ্রেফতার করে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। আর বুধবার সৃষ্টিধরবাবু বলেন, ‘‘আমি আগে ইটের ব্যবসা করতাম। সোমা আমার কাছ থেকে ইট নিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ডুবিয়ে দিয়েছেন। চেষ্টা করেও আদায় করতে পারিনি। আমিই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করব ভাবছি।’’ এত দিনেও অভিযোগ করেননি কেন, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।

ইট-ব্যবসার সূত্রে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে পুরুলিয়া শহরের ওল্ড মানবাজার রোডের বাসিন্দা সোমার পরিচয় বলে জানিয়েছেন আশিসবাবুও। তাঁর দাবি, তাঁদের কাপড়ের দোকানে যাতায়াত করতে করতেই সোমা সুরেখা পরিবারের অন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে আশিসবাবুর মা রুচিরা সুরেখাকে সোমা জানান, তিনি ইটের ব্যবসা করেন। এতে ভাল লাভ রয়েছে। তিনি রুচিরাদেবীকে তাঁর ব্যবসায় লগ্নি করতে বলেন। আশিসবাবুর অভিযোগ, ‘‘সোমা কয়েক জন নেতাকে আমাদের সামনেই ফোনে ধরতেন। তাই বিশ্বাস করে কয়েক দফায় নগদ ও চেকে তাঁকে ইটের ব্যবসার জন্য প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা দিই। এক বছর পরে টাকা চাইতে গেলে তিনি প্রথমে ফেরত দিতে রাজি হন। কিন্তু পরে আর ধরা দিচ্ছিলেন না। পুরুলিয়া থেকে উধাও হয়ে যান। ফোনের নম্বরও পাল্টে ফেলেন।’’

শহরের কাপড়গলির বস্ত্র ব্যবসায়ী ওই পরিবারের আরও অভিযোগ, ইটের টাকা লেনদেনের মধ্যেই ফিল্ম প্রোডাকশনের ব্যবসায় নামার নাম করে কলকাতার একটি হোটেলে তাঁকে ডেকে সোমা কোটি টাকারও বেশি নিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে সুরেখা পরিবারের তরফে পুরুলিয়া সদর থানায় অভিযোগ হয়। পুলিশ অবশ্য জানাচ্ছে, তাঁরা এত দিন সোমার নাগাল পায়নি। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘সোমাকে আমরাও জিজ্ঞাসাবাদ করব।’’

কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীদের দাবি, সোমার প্রতারণার টাকার একটা অংশ জেলা পরিষদের ওই শীর্ষ নেতাও পেয়েছেন। এই অবস্থায় শাসকদলের উপরে চাপ বাড়াতে ময়দানে নেমেছে বিরোধীরা। ওই তৃণমূল নেতাকে ধরার দাবিতে বুধবার সন্ধ্যায় ভিক্টোরিয়া স্কুল মোড়ের কাছে কিছুক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে থানায় বিক্ষোভ দেখায় ডিওয়াইএফ। সংগঠনের পক্ষে কৌশিক মজুমদারের দাবি, ‘‘জেলা পরিষদের ওই শীর্ষকর্তা কে, পুলিশকে তা তদন্ত করে বের করতে হবে। তাঁকে গ্রেফতারও করতে হবে।’’

গোটা ঘটনায় অস্বস্তি বাড়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনভিপ্রেত অভিযোগ। বিষয়টি আমরা দলীয় ভাবে আলোচনা করব।’’ দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো শুধু বলেন, ‘‘আমি তেমন কিছু জানি না। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।’’

এই ঘটনায় তিনিও যে বিড়ম্বনায় পড়েছেন, তা স্পষ্ট সৃষ্টিধরবাবুর বক্তব্যে। তিনি বলছেন, ‘‘অনেকেই আমার অফিসে, বাড়িতে বা বাংলোয় নানা কাজে আসেন। কেউ মোবাইল বের করে ছবিও তোলেন। কিন্তু তাঁরা বাইরে কার সঙ্গে কী করছে, তা আমার জানার কথা নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Zilla Sabhadhipati Cheated Actress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE