Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আমরা তো দাম বাড়াইনি, ফুঁসছেন বাউল

থলি নিয়ে বাজারে ঢুকে কয়েকপাক খেয়েই মুখ শুকিয়ে গেল গৃহস্থের। একি! দাম যে তরিতরিয়ে চড়ে গিয়েছে! পুরুলিয়া, ঝালদা, কাশীপুর সর্বত্রই প্রায় এক ছবি। কিন্তু উপায় নেই। সংসারের বারোমেসে বাজার তো নয়, এ যে লক্ষ্মীপুজোর বাজার। তিনি যাতে চঞ্চলা না হন, তাই ফর্দে কোনও খামতি রাখতে রাজি নন গিন্নি। অগত্যা সেই ফর্দ মিলিয়েই বাজার সারলেন কর্তা।

ফর্দ মিলিয়ে চলছে কেনাকাটি। বিষ্ণুপুরের বাজারে সোমবারের ছবি।

ফর্দ মিলিয়ে চলছে কেনাকাটি। বিষ্ণুপুরের বাজারে সোমবারের ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১২
Share: Save:

থলি নিয়ে বাজারে ঢুকে কয়েকপাক খেয়েই মুখ শুকিয়ে গেল গৃহস্থের। একি! দাম যে তরিতরিয়ে চড়ে গিয়েছে! পুরুলিয়া, ঝালদা, কাশীপুর সর্বত্রই প্রায় এক ছবি। কিন্তু উপায় নেই। সংসারের বারোমেসে বাজার তো নয়, এ যে লক্ষ্মীপুজোর বাজার। তিনি যাতে চঞ্চলা না হন, তাই ফর্দে কোনও খামতি রাখতে রাজি নন গিন্নি। অগত্যা সেই ফর্দ মিলিয়েই বাজার সারলেন কর্তা। তবে বাঁকুড়ার বাজারে গড়পড়তা দিনের মতোই দাম ছিল সব্জি ও ফলের।

রাত পোহালেই লক্ষ্মীপুজো। তাই সোমবার বিকেলেই অনেকে বাজার সেরে রাখলেন। পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, আদ্রা, কাশীপুর, ঝালদা বা মানবাজারের বাজারের যথারীতি কাঁচা সবজি বা ফলের বাজার ছিল চড়া। পুরুলিয়া শহরের বড়হাটে এ দিন কেজি প্রতি আলু ২০ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫-৪০ টাকা, ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা জোড়া, কাঁচালঙ্কা ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আদ্রার বাজারে কেজিতে বেগুন ২০ টাকা, কুমড়ো ১২ টাকা, ফুলকপি জোড়ায় ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পুরুলিয়ার বাজারে এ দিন পেঁপে বিকিয়েছে ৩০-৪০ টাকায়। বাকি বাজারগুলিতে টম্যাটো বা ক্যাপসিকামের গড় দাম ছিল কেজি প্রতি ৬০-৭০ টাকা প্রতি কেজি। ফলের বাজারও ছিল চড়া। পুরুলিয়ার বাজারে আপেলের দর ছিল ৬০-৮০ টাকা, নাসপাতি ৮০ টাকা, আতা ৪০ টাকা, আখ ১৫-২০ টাকা, পানিফল ৮০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, বাতাবি লেবু (প্রতিটি) ২০ টাকা, পেয়ারা ৮০ টাকা, চাঁপাকলা ৪০ টাকা (১২টি)।

পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা শম্পা গুপ্তর কথায়, “বাজার চড়া হবে জানাই ছিল। কিন্তু গিয়ে দেখি হাত দেওয়া যাচ্ছে না। তবু বাজার করতেই হয়েছে। বাড়িতে পুজো বলে কথা। তাই কাটছাঁট করা যায় না।” শহরের আর এক বাসিন্দা নমিতা দশগুপ্ত বললেন, “এ বারে ঠাকুরের দামও বেড়ে গিয়েছে। গতবার যে আয়তনের প্রতিমা কিনেছি ১১০-১২০ টাকায়। এ বার সেই প্রতিমাই প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।” তাঁর আক্ষেপ, ফলের বাজারে যেন ছ্যাঁকা লাগছে।

শহরের বড়হাটেও লক্ষ্মী পুজো হয় ধুমধাম করে। বাজার কমিটির সম্পাদক সুকুমার সাও বলেন, “বাজার যতই চড়া হোক মায়ের পুজো তো করতেই হবে।” কাশীপুর দৈনিক বাজার কমিটিও পুজো করে। কমিটির সদস্য স্বপন ধীবরের কথায়, “মা লক্ষ্মীর জন্যই আমাদের ব্যবসা। তাই পুজোর আয়োজনে খামতি রাখা যাবে না।” একই বক্তব্য জয়পুর মহালক্ষ্মী নাট্য সমিতি-র আনন্দ রায় ভান্ডারির। তাঁদের বারোয়ারি পুজো এ বার ৮৯ বছরে পড়ল।

বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলি আয়োজনে ত্রুটি না রাখলেও গৃহস্থকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ঝালদার বাসিন্দা স্বাতী চক্রবর্তী বাড়িতে পুজো করেন। তিনি জানান, বছর বছর দাম লাফ দিয়ে বাড়ছে। এ ভাবে গৃহস্থ চাপে পড়ে যাচ্ছে।

দাম আগুন বলে প্রভাব পড়েছে বাজারেও। পুরুলিয়া শহরের চকবাজারের দশকর্মা ভাণ্ডারের ব্যবসায়ী মিঠুন নন্দী, গৌতম চেলের কথায়, “এ বারে পুজোর আগের দিনের বিকেলেও বাজার নেই।” কালী মন্দিরের সামনে ফুটপাথে পুজোর জিনিসপত্র বেচেন বাউল দত্ত। তাঁর কথায়, “ক্রেতারা ভাবছেন আমরা দাম বাড়িয়ে বলছি। আমরা তো দাম বাড়াচ্ছি না। কিন্তু সবর্ত্রই দাম চড়া। আমরা আর কী করতে পারি?” ফুল বাজারের বিক্রেতা লক্ষ্মী কালিন্দীর কথায়, “ফুলই পাওয়া যাচ্ছে না। এক একটা মালার দাম পড়ছে ১৬ টাকা। আমাদের তো কিছু করার নেই।”

বাঁকুড়া শহরের কাঠজুড়িডাঙার বধূ মীরা চট্টোপাধ্যায়, কেন্দুয়াডিহির বাসিন্দা অমর সেন বিকেলে চকবাজারে পুজোর জন্য কিনতে এসেছিলেন। তাঁরা বলেন, “বছর বছর পুজোর সময় সব কিছুর দামই চড়ে যায়। তবে এ বার দেখলাম, সেই তুলনায় দাম তেমনটা বাড়েনি। কয়েকদিন আগেও যে দাম ফল কিনেছি, এ দিনও সেই দামেই কিনলাম।” চকবাজারেরই ফল বিক্রেতা জিতেন সেনের মতে, “দুর্গাপুজো থেকেই দেখছি এই শহরে ফলের বিক্রিবাটা বেশ কমে গিয়েছে। মজুত বেশি থাকায় তাই এ বার দাম খুব একটা বাড়েনি।” এতেই স্বস্তি বাঁকুড়ার।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

high price laxmi pujo pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE