Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ইকোপার্কে নজর নেই, মাঠ ভরেছে আগাছায়

শাল জঙ্গলের ভিতর সবুজ ঘাসে ছোটোদের হুটোপুটি লেগেই থাকাত। স্লিপারে, দোলনায় চড়ার ভিড় থাকত। পরিযায়ী পাখিরা উড়ে এসে গা ডোবাত ঝিলের জলে। রঙিন মরসুমি ফুলগুলো হাওয়ায় মাথা দোলাত।সে সব এখনই ফিকে। আগাছা বুকে নিয়ে পর্যটকদের সেই কোলাহলের কথা স্মরণ করে এখন বিষ্ণুপুর ব্লকের রাধানগর গ্রামের ইকোপার্ক। ভরা শীতে পর্যটকেরা এখন আর এখানে আসেন না। দেখাশোনার অবহেলায় ক্রমেই জীর্ণ হচ্ছে এই পার্ক।

গিয়েছে সুদিন। বিষ্ণুপুর ব্লকের রাধানগর গ্রামের ইকোপার্কের ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

গিয়েছে সুদিন। বিষ্ণুপুর ব্লকের রাধানগর গ্রামের ইকোপার্কের ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫১
Share: Save:

শাল জঙ্গলের ভিতর সবুজ ঘাসে ছোটোদের হুটোপুটি লেগেই থাকাত। স্লিপারে, দোলনায় চড়ার ভিড় থাকত। পরিযায়ী পাখিরা উড়ে এসে গা ডোবাত ঝিলের জলে। রঙিন মরসুমি ফুলগুলো হাওয়ায় মাথা দোলাত।

সে সব এখনই ফিকে। আগাছা বুকে নিয়ে পর্যটকদের সেই কোলাহলের কথা স্মরণ করে এখন বিষ্ণুপুর ব্লকের রাধানগর গ্রামের ইকোপার্ক। ভরা শীতে পর্যটকেরা এখন আর এখানে আসেন না। দেখাশোনার অবহেলায় ক্রমেই জীর্ণ হচ্ছে এই পার্ক।

বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এই পার্ক তৈরি করেছিল বন দফতর। পার্কের মুখে গড়া হয়েছিল তোরণ। ভিতরে ছিল বিশ্রামাগার, বাগান, ছোটদের খেলার নানা সরজ্ঞাম। এলাকার লোকেরা তো বটেই দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে এই মনোরম পার্কে বেড়াতে আসতেন। পিকনিকও হতো। কিন্তু হত কয়েক বছরে ছবিটা বদলে গিয়েছে। এক সময়ে যে জলাশয়ে পাখিরা উড়ে আসত। এখন সেই জলাশয়ের একাংশ বুজে গিয়েছে। বাগান শুকিয়ে গিয়েছে। ঝুল জমছে বিশ্রামাগারে। ছোটদের খেলার সরজ্ঞামগুলোও নষ্ট হতে বসেছে।

এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, জলাশয়টি ক্রমশ বুজে যাচ্ছে। শুকিয়ে গিয়েছে ফুল গাছ। শীতের মরসুমেও পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা কমেছে। বন দফতরের বিরুদ্ধে রক্ষণাবেক্ষণে নজর না দেওয়াতেই পার্কের এই দুরাবস্থা বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। সোনামুখী থেকে বন্ধুদের নিয়ে আগে ওই পার্কে পিকনিক করে গিয়েছেন সুভাষ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “জায়গাটা সত্যিই সুন্দর। এত তাড়াতাড়ি তার সৌন্দর্য হারাবে ভাবতে পারছি না।” মন খারাপ স্থানীয় পাথরা গ্রামের বাসিন্দা দয়াময় কুণ্ডুরও। তিনি বলেন, “আমার মতো আশপাশের বহু গ্রামের বাসিন্দারা ওখানেই পিকনিক করতে যেতাম। সরকারি ব্যবস্থাপনায় শীঘ্রই তার রূপ ফিরলে আমাদের ভালো লাগবে।”

রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা দীনবন্ধু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বন দফতরে বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি। ফলে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে পার্কটি। পর্যটকদের কাছেও তাই আকর্ষণ হারাচ্ছে এই পার্ক।”

পার্কটির রুগ্ন দশার জন্য বর্তমান সরকারের চিন্তা-ভাবনার অভাবকে দায়ী করে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা এলাকার বাসিন্দা স্বপন ঘোষ বলেন, “আমি বিধায়ক থাকাকালীন বছর ছয়েক আগে পার্কটি গড়া হয়েছিল। বহু মানুষ তখন পিকনিক করতে এখানে আসতেন। কোনও সমস্যা ছিল না।” তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল সরকারের দেখভালের ও পরিকল্পনার অভাবেই গত তিন বছর হতে চলল রুগ্ন হয়ে পড়েছে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এই পার্কটি। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে কয়েক বছর পরে এর অস্তিত্বই থাকবে না।”

বিধায়কের অভিযোগ মানতে চাননি বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শমীক পাল। তিনি বলেন, “পার্কটি দুরাবস্থার কথা আমরা জানি। জেলা পরিষদের আর্থিক সাহায্যে কিছু করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। বন দফতরের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলব।”

বন দফতরের রাধানগর রেঞ্জের আধিকারিক অলোক আচার্য জানান, গত বছর পার্কের কিছু সংস্কারের কাজ করা হয়েছিল। আর্থিক সঙ্কটের কারণে পুরো কাজ তাঁরা করতে পারেননি। তাঁর দাবি, “পার্কটির শ্রী ফেরানোর সব ধরণের চেষ্টা চলছে।” বাঁকুড়া (উত্তর) বন বিভাগের ডিএফও সুধীরচন্দ্র দাস বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও আলোচনা করেনি। অর্থ সঙ্কটই মূল সমস্যা। ওরা এগিয়ে এলে অবশ্যই কথা বলব।”

কিন্তু সবই হচ্ছে, হবেতেই সীমাবদ্ধ। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পরপর তিনটে শীতের মরসুম পেরিয়ে গেল আর কবে পার্কের শ্রী ফেরানো হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bishnupur icopark
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE