দুর্বিপাকের মেঘ যেন পিছু ছাড়ছে না বিশ্বভারতীর পাঠভবনের। একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে শান্তিনিকেতনের এই রবীন্দ্র-প্রতিষ্ঠান। দিন কয়েক আগেই ছাত্রী নিখোঁজে যেমন চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা।
উচ্চ শিক্ষায় অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ নিয়ে যখন যুযুধান কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা মহল, তারই মাঝে হস্টেল থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। গত শুক্রবারই গভীর রাতে বোলপুর থানায় আবাসিক ছাত্রী নিখোঁজের বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে বিশ্বভারতী।
স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রী নিখোঁজের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই, আরও একবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করে আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা, পঠনপাঠন-সহ একাধিক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ‘খামখেয়ালি’ মনোভাব নিয়ে। অভিভাবকদের অভিযোগ, “একের পর এক ঘটনা ঘটলেও, কর্তৃপক্ষের ‘দায়সারা’ মনোভাবের কোনও পরিবর্তন হয়নি। কিসের ভরসায় মেয়েদের এখানে রেখে যাব?” আর এক অভিভাবক জানান, হস্টেলে থাকলে চরিত্র গঠন হবে, অনুশাসনে থাকবে- এসব ভেবেই হস্টেলে রাখা। কিন্তু এখন সে ভরসা কোথায়? ভয় করছে মেয়েদের এখানে রেখে যেতে!”
ঘটনা হল, সাম্প্রতিক কালে পাঠভবনে পর পর কয়েকটি ঘটনা সামনে আসায় অভিভাবকদের একাংশ আতঙ্কিত। তাঁদের আশঙ্কা, কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত না করায় যে কোনও সময় আরও বড় কোনও বিপদ ঘটে যেতে পারে। কিছু দিন আগেই বাংলাদেশের এক আবাসিক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে পাঠভবন ছাড়তে বাধ্য হন। সে সময় প্রশ্ন ওঠে, আবাসিক ছাত্রী হয়েও কি করে ঘটনার দিন বাইরে গেলেন তিনি? ওয়ার্ডেনকে না বলে বাড়ি চলে যাওয়ার একটি ঘটনাও ঘটে এই সময়ের মধ্যেই। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অন্য ঘটনায় যেমন তিন ছাত্রকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করে কর্তৃপক্ষ।
অভিভাবকদের একাংশ মনে করছেন, পাঠভবনের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই ইদানিংকালে শৃঙ্খলা ভঙ্গের নানা অভিযোগ মিলছে। ক্লাস চলাকালীন অনেককেই ক্যাম্পাসের নানা জায়গায় ও বোলপুর শহরে দেখা যায়। অভিভাবকদের তরফে পুলক চক্রবর্তী বলেন, “কর্তৃপক্ষ অমনোযোগী, কোনও অনুশাসন নেই। বিশ্বভারতীতে সবই বিশৃঙ্খলায় চলছে। শুধু ছোটদের দোষ দিয়ে লাভ নেই!”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার রাতে আবাসিক ছাত্রীদের হাজিরার রেজিস্টার নিয়ে বসার সময়ে বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ওয়ার্ডেন দুর্গা চক্রবর্তীর। তিনি সেই সময়ে খোঁজ নিতে শুরু করেন। বিশ্বভারতীর পাঠভবনের অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির আবাসিক ছাত্রীদের হোস্টেল মাধবী থেকে খবর যায় পাঠভবনের অধ্যক্ষ পার্থ চক্রবর্তীর কাছে। পার্থবাবু আবাসিক ছাত্রী নিখোঁজের বিষয়টি নজরে আনেন, বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিক অশোক মাহাত এবং অন্যতম প্রোভোস্ট অধ্যাপিকা সবুজকলি সেনের। বিশ্বভারতীর তরফে সে দিন রাতেই, এগারোটা নাগাদ থানায় আবাসিক ছাত্রী নিখোঁজের বিষয়টি লিখিতভাবে জানায় কর্তৃপক্ষ।
বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষ বলেন, “বিশ্বভারতীর পাঠভবনের দশম শ্রেণির এক আবাসিক ছাত্রী নিখোঁজের ডায়েরি হয়েছে। আমরা বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy