Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছ্যাঁকা দিচ্ছে নারকেল-খেজুর, ঈদের দিন ভরসা আইসক্রিম

দোরগোড়ায় ঈদ। সেজে উঠছে ঈদগাহ, মসজিদ। সেই সঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়ে গিয়েছে খাবারের তালিকার প্রস্তুতি। ঈদের দিন কী কী খাইয়ে অতিথি আপ্যায়ন হবে, এখন তার ভাবনা-চিন্তাতেই মগ্ন মহিলারা।

রামপুরহাটে ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

রামপুরহাটে ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০১:০৪
Share: Save:

দোরগোড়ায় ঈদ। সেজে উঠছে ঈদগাহ, মসজিদ। সেই সঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়ে গিয়েছে খাবারের তালিকার প্রস্তুতি। ঈদের দিন কী কী খাইয়ে অতিথি আপ্যায়ন হবে, এখন তার ভাবনা-চিন্তাতেই মগ্ন মহিলারা।

এই চিত্র জেলার প্রায় সর্বত্রই। শুক্রবার রামপুরহাট বাজারে ফল, মশলা, তেল, লাচ্ছা আর সিমুই কিনতে এসেছিলেন মাড়গ্রাম থানার বুধিগ্রাম এলাকার চামেলি বিবি। বড় মাপের নারকেলের দাম ৪০ টাকা শুনে তাঁর হাত থেকে প্রায় নারকেল পড়ে যাওয়ার জোগাড়। তবু বাড়িতে লাগবে। ভরে নিলেন ব্যাগে। আপেল ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা কেজি। রমজান মাসে দিনভর নির্জলা উপবাস থাকার পরে ধনী-দরিদ্র সবাই চেষ্টা করেন ইফতার, রাতের খাবার এবং সেহেরিতে পরিবারের মুখে ভাল কিছু খাবার তুলে দিতে। জিভে জল আনা সব পদ ইফতারের জন্য রান্না করতে বাড়িতে আসে ব্যাগ ভর্তি বাজার। তবে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঈদের দিনের খাওয়া-দাওয়াতেও এখন অনেকেই বহু পরিবর্তন লক্ষ করছেন। রামপুরহাটের পেশায় দর্জি আব্দুল মতিন বলছেন, “ঈদের দিন ঠান্ডা পানীয় এবং আইসক্রিমের দিকে বেশি ঝোঁক দেখতে পাচ্ছি। এখন অনেকেই ফাস্টফুড জাতীয় বা বাজার থেকে কিছু তৈরি খাবারও কিনে আনেন।”

কিছু এলাকায় আবার দু’দিন আগে থাকতেই ফাস্টফুডের কারবারীরা বিশেষ করে ঈদের জন্য দোকান সাজানোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন। একই দৃশ্য শহরের রেস্তোরাঁতেও। রামপুরহাট থানার মাসড়া গ্রামের মৈনুদ্দিন হোসেন, দুবরাজপুরের বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুল মবিনরা আবার জানালেন, ঈদের দিনে লাচ্ছা, সিমুইয়ের জন্য এখন প্যাকেটে মোড়া নামিদামি কোম্পানিও গ্রামের দিকে ছেয়ে গিয়েছে। নলহাটির করিমপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেনের কথায়, “রমজান মাসের সময় নলহাটির বিভিন্ন মুসলিম হোটেলে গভীর রাতেও সেহেরির খাবার বিক্রি হয়। নলহাটি শহরের আজিমগঞ্জ রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় রমজান মাসে বিরিয়ানি বিক্রি করতেও দেখা যায়।” এই সময় বিভিন্ন মসজিদের আশপাশে তেলেভাজার দোকানের আধিক্যও লক্ষ করা যাচ্ছে। রামপুরহাটের একটি রেস্টুরেন্টের মালিক অভিজিৎ রায় আবার জানালেন, তাঁর দোকানে ঈদের দিন রোস্ট, তন্দুরি, চিকেন বিরিয়ানি, মটন বিরিয়ানি, সেই সঙ্গে মিলবে আইসক্রিম মেশানো লস্যিও।

সিউড়ি শহরের টিনবাজার এলাকার তেলেভাজার দোকানদার কেনারাম দাস জানান, এই সময় কিসমিস, নারকেল, বাদাম দিয়ে আলুর চপের ভাল চাহিদা হয়। তাঁর পরামর্স, “বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিন টাকা দামে চপ বিক্রি করলেও ভালই বিক্রি হয়।” অন্য দিকে, মাড়গ্রামের বাসিন্দা আতাউল হক জানালেন, ঈদ উপলক্ষে মাড়গ্রাম বাজার পাড়ার বড় মসজিদ এলাকায় অস্থায়ী ফাস্টফুডের ব্যবসায়ীরা দু’দিন আগে থেকে এলাকায় দোকান খুলে বসে থাকেন। ঈদের দিন ওই সমস্ত দোকানে পাওয়া যাবে চাউমিন, ফুচকা, এগরোল জাতীয় খাবার।

ঈদের দিন পরিবারের লোকজন, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব মিলে বাড়িতে প্রায় ৫০ জনের রান্না করতে হয় রামপুরহাট রেলপাড়ের বাসিন্দা আক্তারি বিবিকে। সেখানে সকালের টিফিনে লাচ্ছা পরোটা, কষা মাংস, রোস্ট, ভুনা থাকবে বলে জানালেন আক্তারি বিবি। সেই সঙ্গে থাকবে হালিম, ফিরনি, বুরহানি। বাজারপাড়ার বাসিন্দা কামেলা বিবি আবার জানালেন, “আগের বার শাহী বিরিয়ানি করেছিলাম। এ বার বাড়ির সকলে আবদার শাহী পোলাও রান্না করতে হবে। তার প্রস্তুতি খেন থেকেই শুরু করেছি।” ঈদের দিন অতিথি আপ্যায়নের জন্য চিকেন পকোড়া, ফিরনি, পাঁঠার মাংস দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি বা শাহি বিরিয়ানি অনেক বাড়িতেই হয়। বিরিয়ানির পরে খাওয়ার জন্য অনেকেই রাখেন দই এবং পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি বুরহানি নামের বিশেষ এক ধনের পানীয়। এ বার এ সব খাইয়েই বন্ধুদের খুশি করতে চান রামপুরহাট ভাঁড়শালা পাড়ার মহম্মদ রাষ্ট্রন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

price rise dates coconut rampurhat costly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE