Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা

ছেলের সাক্ষ্যে যাবজ্জীবন বাবার

কেরোসিন ঢেলে মহিলার গায়ে আগুন লাগিয়ে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল অগ্নিদগ্ধ ওই বধূর। ২০১৩ সালের ওই খুনের ঘটনায় স্বামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। সোমবার ওই সাজা শোনান বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১৬
Share: Save:

কেরোসিন ঢেলে মহিলার গায়ে আগুন লাগিয়ে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল অগ্নিদগ্ধ ওই বধূর। ২০১৩ সালের ওই খুনের ঘটনায় স্বামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। সোমবার ওই সাজা শোনান বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী।

সরকারি আইনজীবী তপনকুমার দে বলেন, “ওই মামলায় নিহতের নাবালক ছেলে-সহ মোট ১৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। শুক্রবারই বিচারক নিহতের স্বামী রঘুনাথ বাউরিকে স্ত্রী খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। এ দিন যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ওই ব্যক্তিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।”

সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, বছর বারো আগে লাভপুর থানার মোস্তলি গ্রামের বাসিন্দা সুকুমার পত্রধরের মেয়ে কল্পনা পত্রধরের সঙ্গে একই থানার বাকুল গ্রামের রামপ্রসাদ বাউড়ির ছেলে রঘুনাথ বাউড়ি বিয়ে হয়েছিল। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে কারণে-অকারণে কল্পনাদেবীর উপর তাঁর স্বামী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। এমনকী, দুই সন্তানের সামনেও রঘুনাথ অনেক বার স্ত্রীকে মারধর করতেন। তপনবাবু বলেন, “আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, ২০১৩ সালের ৯ জুন রাত ১০টা নাগাদ রঘুনাথ বাড়ির মধ্যে একটি ঘরে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। অগ্নিদগ্ধ কল্পনাকে বাঁচার কোনও রকম সুযোগ না দিয়েই সেই ঘরের দরজা বন্ধ করে শিকল তুলে দেয় রঘুনাথ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে মায়ের চিত্‌কার শুনতে পেয়ে কল্পনার বড় ছেলে বছর দশেকের বাপন শিকল খুলে দেয়। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মাকে কাতরাতে দেখে বালতি করে জলও ঢালে।” ওই রাতেই অগ্নিদগ্ধ কল্পনাদেবীকে প্রথমে লাভপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিত্‌সাধীন থাকার পরে কল্পনাদেবীর মৃত্যু হয়।

চিকিত্‌সাধীন থাকার সময়েই ওই বছর ১৩ জুন কল্পনাদেবীর বাবা লাভপুর থানায় জামাইয়ের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পলাতক রঘুনাথের বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৪৯৮ক (বধূ নির্যাতন), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) এবং ৩২৬ (অস্ত্র দিয়ে আঘাত) ধারায় মামলা শুরু করে। কল্পনাদেবীর মৃত্যুর পরে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (খুন) যুক্ত করে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ফেরার থাকার পরে গত ১৬ জুন রঘুনাথ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এত দিন সে জেল হাজতে ছিল। গত ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হয়। তপনবাবু বলেন, “অভিযুক্ত রঘুনাথ বাউড়ির বিরুদ্ধে আদালতে সন্দেহাতীত ভাবে দোষ প্রমাণিত হয়েছে। মামলায় নিহতের নাবালক ছেলে গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষ্য দিয়েছে। এ দিনই বিচারক দোষীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সাজার কথা ঘোষণা করেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE