Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

টাকা ফেরত চেয়ে একজোট এজেন্ট

আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জোরালো করতে এ বার সংগঠনের ছাতার তলায় জোট বাঁধলেন একাধিক বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার বাঁকুড়া জেলার এজেন্টরা। ‘অল বেঙ্গল সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যান্ড সেভিংস হোল্ডার অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ওই সংগঠনের তরফে মঙ্গলবার আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবিতে বাঁকুড়া শহরে জেলাশাসকের দফতরে সাময়িক ধর্নায় বসেন কয়েকশো এজেন্ট।

ডিএম অফিস চত্বরে এজেন্টদের অবস্থান। —নিজস্ব চিত্র।

ডিএম অফিস চত্বরে এজেন্টদের অবস্থান। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০১:১৯
Share: Save:

আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জোরালো করতে এ বার সংগঠনের ছাতার তলায় জোট বাঁধলেন একাধিক বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার বাঁকুড়া জেলার এজেন্টরা। ‘অল বেঙ্গল সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যান্ড সেভিংস হোল্ডার অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ওই সংগঠনের তরফে মঙ্গলবার আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবিতে বাঁকুড়া শহরে জেলাশাসকের দফতরে সাময়িক ধর্নায় বসেন কয়েকশো এজেন্ট। পরে তাঁরা জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে গিয়ে স্মারকলিপিও দেন।

সারদা কাণ্ডের পর থেকেই রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টরা সংগঠন গড়ে আন্দোলনে নেমেছেন। সেই সব সংস্থার অন্যতম এই ‘অল বেঙ্গল সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যান্ড সেভিংস হোল্ডার অ্যাসোসিয়েশন’। তবে, এত দিন বাঁকুড়ায় এই সংগঠন ছিল না। গত ফেব্রুয়ারিতে সানপ্ল্যান্ট অ্যাগ্রো লিমিটেড, প্রয়াগ গ্রুপ, রবিকিরণ, কলকাতা ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ-এর মতো বেশ কিছু লগ্নিসংস্থার বাঁকুড়া শাখার কয়েকশো এজেন্ট এই সংগঠনে সামিল হন। এ দিন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলেন ওই এজেন্টরা। যদিও জেলাশাসক বিজয় ভারতী দফতরের বাইরে থাকায় তাঁকে স্মারকলিপি দিতে পারেননি এজেন্টরা। তাই সাময়িক অবস্থানে বসেন তাঁরা। পরে জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে স্মারকলিপি দেন। এজেন্টদের দাবিগুলির অন্যতম আমানতকারীদের অর্থ ফেরত, আত্মহত্যাকারী এজেন্ট বা আমানতকারীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, এজেন্টদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

সংগঠনের বাঁকুড়া শাখার সহ-সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই সব লগ্নিসংস্থার অফিসে গিয়ে গিয়ে টাকা চেয়েছি। কিন্তু সংস্থার কর্তারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। বৃহত্তর আন্দোলন ছাড়া টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না বুঝেই একজোট হলাম আমরা।” দেবাশিসবাবু নিজে প্রায় ছ’বছর সানপ্ল্যান্ট অ্যাগ্রো লিমিটেডের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। সংস্থাকে ৪০ লক্ষ টাকা আমানত সংগ্রহ করে দিয়েছেন। কিন্তু সারদাকাণ্ডের পর থেকেই বাঁকুড়া থেকে পাততাড়ি গোটায় এই সংস্থা। প্রয়াগ গ্রুপের এজেন্ট হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে কাজ শুরু করেছিলেন বাঁকুড়ার রাজগ্রামের যুবক সঞ্জয় দত্ত। প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিলেন সংস্থার হয়ে। এখন সংস্থার কোনও হদিস নেই এই জেলায়। একই ভাবে প্রয়াগে কাজ করতেন বাঁকুড়ার স্কুলডাঙার শঙ্করনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বা সানপ্ল্যান্টে এজেন্ট ছিলেন রঞ্জিতকুমার বাঙালরা। দেবাশিসবাবু, সঞ্জয়বাবুদের মতো মাথায় হাত পড়েছে তাঁদেরও। দেবাশিসবাবু বলেন, “সারদাকাণ্ডের পর থেকেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আমানতকারীরা চাপ দিতে শুরু করে। সংস্থা জানায়, বাঁকুড়ার ব্রাঞ্চ খুলে রেখে শুধু শুধু সংস্থার টাকা খরচ হচ্ছে। জেলায় শুধু বড়জোড়ার ব্রাঞ্চ খুলে রাখা হয়। তার কিছুদিন পরে বড়জোড়ার শাখাও বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দুর্গাপুর রিজিওনাল অফিসে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়। এখন দুর্গাপুরের অফিসেরও ঝাঁপ বন্ধ হয়ে কলকাতায় দু’একটি শাখায় ঠেকেছে।”

সঞ্জয়বাবুর কথায়, “বাড়িতে টিকতে পারছি না আমানতকারীদের চাপে। কোথায় যাব আমরা?” তাঁর আক্ষেপ, “বেকারত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে লগ্নিসংস্থার এজেন্ট হয়েছিলাম। কর্তারা বড়বড় স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সে-সব বিশ্বাস করে কত বড় ভুল করেছিলাম, আজ বুঝতে পারছি!” আন্দোলনকারী এজেন্টদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সরকারকেই তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। সারদায় যে ভাবে কমিশন গড়ে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার, একই ভাবে অন্যান্য সংস্থার আমানতকারীদেরও টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতারক লগ্নিসংস্থার কর্তাদেরও কড়া শাস্তির দাবি তুলছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chit fund agent chit fund depositors bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE