কলেজে ছাত্র সংসদে কে কোন পদ পাবেন, তার তালিকা ছাত্র সংগঠনের নেতারা আগেই স্থির করে রাখতেন। আর সেই তালিকা অনুযায়ী সংসদ গড়তেন জেতা প্রার্থীরা। টানা চার বছর ধরে টিএমসিপির দখলে থাকা বিরোধীশূন্য রঘুনাথপুর শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (আইটিআই) এটাই ছিল দস্তুর। কিন্তু এ বার টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব সামনে আসায় সংসদ গঠন নিয়ে ভোটাভুটি এড়ানো গেল না।
সাধারণ সম্পাদকের পদে সংগঠনের ঠিক করে দেওয়া অম্লান মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়াই বাধল টিএমসিপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ঝিলিক বাউরির। তবে শেষ পর্যন্ত মাত্র একটি ভোটে জেতেন অম্লান। আর হারার পরে ঝিলিকের অভিযোগ, “বিজয়ী প্রার্থীদের নিয়ে সর্বসম্মত ভাবে আলোচনা না করেই উপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।” আইটিআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক পদের নির্বাচনে ঝিলিক পেয়েছেন ১৪টি ভোট আর অম্লান ১৫টি। একজন ভোটদানে বিরত ছিলেন।
রঘুনাথপুর আইটিআই-তে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৩০টি আসনের মধ্যে প্রথমে ২৫টি পেয়েছিল টিএমসিপি। বাকি পাঁচটি যায় এবিভিপির দখলে। তবে এবিভিপির জেতা প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত টিএমসিপিতে যোগ দেওয়ায় বিরোধীশূন্য হয়ে পড়ে আইটিআই-র ছাত্র সংসদ। বৃহস্পতিবার ছিল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক-সহ অন্যান্য সম্পাদকগুলির পদে নির্বাচন বা বোর্ড গঠন। আগের দিন বুধবার রঘুনাথপুর শহরে স্থানীয় বিধায়ক পূণর্র্চন্দ্র বাউরির উপস্থিতিতে আইটিআইতে জেতা প্রার্থীদের নিয়ে সভা হয়। সেখানে ঠিক করা হয় অম্লান মুখোপাধ্যায়কে সাধারণ সম্পাদক করা হবে। তবে অম্লানকে জয়ী সদস্যদের সবাই যে একবাক্যে মেনে নেবে না, তার আভাস মিলেছিল ওই সভাতেই। ঝিলিককে সাধারণ সম্পাদক করার দাবি তুলেছিলেন জয়ী সদস্যদের কয়েকজন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই সভায় অনুপস্থিত ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ঝিলিক। আইটিআইতে সাধারণ সম্পাদক পদে নজিরবিহীন ভাবে এ বার যে টিএমসিপির অভ্যন্তরেই ভোটাভুটি হতে চলেছে আভাস মিলেছিল ওই সভাতেই।
এ দিন সকালে আইটিআই কর্তৃপক্ষের কাছে ১৯ জন সদস্য সাধারণ সম্পাদক পদে ঝিলিক বাউরির নাম প্রস্তাব করে জমা দেন। আবার অম্লান মুখোপাধ্যায়কে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করার দাবি জানিয়েছিলেন ১৯ জন সদস্য। আইটিআইতে মোট আসন সংখ্যা ৩০। ফলে আট জন সদস্য দু’টি তালিকাতেই স্বাক্ষর করায় গোপন ব্যালটে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
বস্তুত গত বছর এই শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নির্বাচন হয়নি। ছাত্র সংসদের সদস্যদের মনোনীত করেন কর্তৃপক্ষ। বিধায়কের বাড়ি সড়বড়ি গ্রামের বাসিন্দা ঝিলিক বাউরিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয়েছিল। এ বার নির্বাচনের পরে কার্যত বিরোধীশূন্য অবস্থায় আইটিআই-র দখল টিএমসিপি পেলেও সংসদ গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব এড়ানো গেল না। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এতে মুখ পুড়ল টিএমসিপি-র।
টিএমসিপি সূত্রেই জানা যাচ্ছে, ঝিলিককে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে জেতা সদস্যদের ইন্ধন জুগিয়েছে আইটিআইতে তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষকদের সংগঠন স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের একাংশ। সেই সম্ভবনাকে উস্কে দিয়ে টিএমসিপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ঝিলিকের অভিযোগ, “আমি সাধারণ সম্পাদক পদে থাকলে সংগঠনে বহিরাগতদের খবরদারি সংসদের উপরে চলত না। সে জন্যই দক্ষতার সাথে একবছর ধরে সংসদ পরিচালনার পরেও আমাকে চক্রান্ত করে সরিয়ে দেওয়া হল।”
টিএমসিপির জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রায় অবশ্য ঝিলিকের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, “প্রথমত ঝিলিক ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময়ে ওঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে। সে কারণে ওঁকে সরিয়ে সংগঠনের স্বার্থেই নতুন একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
সুকুমারবাবু আরও জানান, তাঁদের ছাত্র সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ঝিলিককে সাধারণ সম্পাদক পদে দাঁড় করানোর পিছনে আইটিআইতে কিছু শিক্ষকের ভূমিকা রয়েছে বলে তাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর রয়েছে। তিনি বলেন, “ছাত্র সংসদের পদাধিকারী নির্বাচনে জটিলতা কেন ঘটল. কাদের ইন্ধনে ভোটাভুটি হল তার রিপোর্ট বিধায়ককে দেওয়া হবে।” যদিও শিক্ষকদের তরফে এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy