মুক্তি মিলবে কবে? বোঝা দায় বাসস্ট্যান্ড না বাজার। সিউড়িতে ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষকে সিউড়ি আসতেই হয়। সে কথা মাথায় রেখেই চার দশক আগে তৈরি হয়েছিল সিউড়ির নতুন বাসস্ট্যান্ড। কিন্তু অবৈধ দখলদারির ঠেলায় বাসস্ট্যান্ড গড়ার সেই উদ্যেশ্যই আজ প্রশ্ন চিহ্নের মুখে! কার্যত দখলদারির দাপটে বেমালুম উধাও হয়ে যাচ্ছে আস্ত বাসস্ট্যান্ডটাই।
জেলার সদর শহরের ওই বাসস্ট্যান্ডে ঢুকলেই দেখা যাবে বাস দাঁড়ানোর জায়গায় সার সার দিয়ে গজিয়ে উঠেছে নানা স্থায়ী আস্থায়ী দোকান। এমনকী, যে লেনগুলিতে বাস দাঁড়াবে সেখানেও ফল বিক্রতারা জবরদখল করে বসে। যার ফলে বাস যাত্রীদেরই ওঠা নামার জায়গা নেই। শুধু বাসস্ট্যাণ্ড নয়, গোটা সিউড়ি শহরই অবৈধ দখলদারির এই ছবি। সম্প্রতি শহরকে দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের তরফে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘটনা হল, শহরকে পুরপুরি দখলমুক্ত করা না গেলেও কিছু কাজ হচ্ছে। কিন্তু, বাস মালিক ও কর্মীদের সংগঠনগুলির অভিযোগ, জেলা শহরে এসেই যেখানে প্রথম নজর যায়, সেই বাসস্ট্যাণ্ড দখলমুক্ত করার কোনও উদ্যোগই নেয়নি প্রশাসন।
কয়েক মাস আগের একটি ঘটনার কথা বললে খানিকটা বোঝা যায়, যে দখলদারির ফলে ঠিক কি পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে। মাস খানেক আগে সিউড়ি-আসানসোল রুটের একটি বাস সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে আসার পর সেটিকে পার্কিং করার সময় হঠাত্ই এক বাইক আরোহীর চোট লেগে গিয়েছিল। ঘটনার দিন জখম বাইক আরোহীর কাছ থেকে প্রতিবাদ আসেনি। কিন্তু বাইক আরোহীর বদলে স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা তিন ভ্যান রিক্সা চালক ওই বাস চালককে মারধর করতে শুরু করে। প্রতিবাদে দীর্ঘক্ষণ বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সরব হন বাসমালিক ও কর্মীদের ইউনিয়নগুলি।
সংগঠনগুলির সেদিনের দাবি ছিল, জেলা সদর শহরের বাসস্ট্যাণ্ডটি অবৈধ দখলদারির জন্য এতটাই স্থানাভাব দেখা দিয়েছে, যে বাস পার্কিং করানোর সময় এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। সবচেয়ে জরুরি স্ট্যান্ডটিকে দখল মুক্ত করার। তাঁরা দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান। এমন হুমকিও দেয়, যে সমাধান না হলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাস চলাচাল বন্ধ করে আন্দোলনে নামবে তারা।
একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনকে। দুটি বাসমালিক সমিতি ছাড়াও সিটু, আইএনটিইউসি, আইএনটিটিইউসি-সহ মোট ছ’টি শ্রমিক সংগঠনের মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অবিলম্বে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডকে অবৈধ দখল মুক্ত করতে হবে। দাবি ছিল, বাস ঢোকা ও বেড়িয়ে যাওয়ার রাস্তা পরিস্কার রাখাতে হবে। ছোট গাড়ি, ভ্যান রিক্সা স্ট্যান্ডের মধ্যে ঢোকানো যাবে না। কর্মী ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশি ব্যবস্থা করতে হবে। দাবি ওঠার পর, আশ্বাস মিলেছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বাসমালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, “অবৈধ দখলদারির বিরুদ্ধে দিন কয়েক আগে একবার মাইকে প্রচারও চলেছে। কিন্তু সেখানেই সব থেমে গিয়েছে। পরিস্থিতি এতটুকু বদলায়নি।”
জেলার দুটি বাস মালিক সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এবং আব্দুল আজিমরা বলছেন, প্রতিদিন ২৩০টির মতো বাস জেলা সদরে আসা যাওয়া করে। কিন্তু স্থানাভাবে সেই বাসগুলিকে স্ট্যাণ্ডে সবসময় ঢোকানোই যায় না। যাত্রী উঠা নামাও কষ্টকর। এমনিতেই পুরসভা ও প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হওয়া বাসস্ট্যাণ্ডের চার পাশে প্রায় চারশো স্থায়ী স্টল রয়েছে। সেখানে সার সার মোটর বাইক ও ভ্যান রিকসা এসে দাঁড়িয়ে থাকে।
এক নিত্যযাত্রী বলেন, “বাস ও বাসযাত্রীদের জায়াগা নেই দাঁড়াবার। রোজই অসুবিধা হয়। সতর্ক হয়ে দাঁড়াতে হয়। ভিড় ঠেলাঠেলিতে কারও আঘাত লাগতেই পারে এবং প্রায়ই এমন ছোট খাটো ঘটনা ঘটছে। যে কোনও দিন বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারে।” শ্রমিক সংগঠনের নেতা মৃণাল বসু এবং হালিম মির্ধাদের দাবি, “ইতিমধ্যেই কিছু ক্ষেত্রে বাসমালিকদের ক্ষতিপূরণও দিতে হয়েছে। পুরসভা ও প্রশাসন দু’ তরফেই বাসস্ট্যাণ্ডকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস ছিল কিন্তু এখনও কাজ হয়নি।”
কী বলছে প্রশাসন?
মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) অরুন্ধতী ভৌমিকের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। দিন কয়েক আগে তাঁর বক্তব্য ছিল, যে ভাবে শহরের অন্যান্য জায়গায় দখলমুক্তির চেষ্টা চলছে, একই পথে বাসস্ট্যাণ্ডকেও দখলমুক্ত করা হবে। পুরসভার পুরপ্রধান উজ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, “দখলমুক্ত করা গেলে অবশ্যই ভাল হবে সকলের জন্য।”
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর বীরভূম’। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বীরভূম বিভাগ, জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy