Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পাকা স্টলের জন্য বরাদ্দ ৪৫ লক্ষ

জলাধারের পাড়ে বাঁশ, কাঠের খুঁটি দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট দোকান। কোনওটার ছাউনি টিনের, আবার কোনওটা খড়ের। হস্তশিল্প সামগ্রী থেকে প্রসাধনী নানা জিনিসের হরেক পসরায় সাজানো সেই দোকান। ভরা মরসুমে সেই দোকানগুলি গমগম করে পর্যটকদের ভিড়ে।

মুকুটমণিপুর জলাধার ঘেঁষা এই অস্থায়ী দোকানের বদলে পাকা দোকান করতে চাইছে জেলা প্রশাসন। ছবি: দেবব্রত দাস।

মুকুটমণিপুর জলাধার ঘেঁষা এই অস্থায়ী দোকানের বদলে পাকা দোকান করতে চাইছে জেলা প্রশাসন। ছবি: দেবব্রত দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুকুটমণিপুর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

জলাধারের পাড়ে বাঁশ, কাঠের খুঁটি দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট দোকান। কোনওটার ছাউনি টিনের, আবার কোনওটা খড়ের। হস্তশিল্প সামগ্রী থেকে প্রসাধনী নানা জিনিসের হরেক পসরায় সাজানো সেই দোকান। ভরা মরসুমে সেই দোকানগুলি গমগম করে পর্যটকদের ভিড়ে।

পর্যটনকেন্দ্র মুকুটমণিপুরে জলাধারের পাড়ে সারিবদ্ধ এই সব দোকানিরা অব্যবস্থা নিয়ে কম ক্ষুদ্ধ নয়। কিন্তু এই অস্থায়ী দোকানের ছবিটা এ বার বদলাতে চলেছে। জলাধারের পাড়ে এ বার স্টল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতর ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ। সম্প্রতি ওই প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কংসাবতী সেচ দফতরের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি মিললেই ওই স্টল তৈরির প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয়ভারতী।

জেলাশাসক বলেন, “মুকুটমণিপুরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথা ভেবেই জলাধারের পাড়ে স্টল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য পর্যটন দফতর ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের তরফে এই প্রকল্পের জন্য প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিটি স্টল তৈরির জন্য দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা করে খরচ হবে।” তিনি জানান, মোট ৯০টি স্টল তৈরি করা হবে। প্রথমে ৫০টি স্টল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরে বাকি স্টলগুলি তৈরি করা হবে।

জঙ্গলমহলের অশান্তি থিতিয়ে পড়ায় ‘মন্দা’ কাটিয়ে গত কয়েক বছরে চেনা ছন্দে ফিরেছে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মুকুটমণিপুর। এ বছর পুজোর পর থেকেই পর্যটকদের চেনা ভিড় দেখে খুশি স্থানীয় বাসিন্দা থেকে নৌকাচালক, ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পরিকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যার জন্য এখানে পর্যটকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। মুকুটমণিপুরকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে সরব হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে অন্যতম হল জলাধারের পাড়ে স্থায়ী স্টল তৈরি করার দাবি।

কুমারী ও কংসাবতী নদীর উপরে এই মুকুটমণিপুর জলাধার। খড়ি ডুংরির পাহাড়, পরেশনাথ মন্দির, জলাধারের অন্য পাড়ে বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্ক, শাল মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা এই পর্যটনকেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরেই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির বেড়ানোর আদর্শ জায়গা। তবে ২০০৩ সাল থেকে জঙ্গলমহলের অশান্তির আবহে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত কমতে শুরু করে। ২০১১ সাল থেকে অবশ্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। পর্যটকদের ভিড় বাড়লেও কেনাকাটার জন্য সরকারি ভাবে এখানে কোনও বাজার নেই।

দিন দিন বিক্রিবাটা বাড়লেও ফাঁকা জায়গার অভাবে দোকান বাড়েনি। এই অবস্থায় সরকারি ভাবে এই পর্যটনকেন্দ্রে স্টল তৈরির দাবি উঠেছিল। ২০০৭-’০৮ সালে খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির তরফে স্টল তৈরির জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। তারপর থেকে স্টল তৈরির উদ্যোগ ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি ফের ওই স্টল তৈরির ঘোষণা চাউর হতেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। মুকুটমণিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পতিতপাবন সাহু বলেন, “সরকারি ভাবে এখানে স্টল তৈরির জন্য সমীক্ষা করা হয়েছিল। ১৩৭টি স্টল তৈরি করে দেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি। এতে এলাকার ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। শুনছি স্টল তৈরি হবে। তবে কতগুলি হয় সেটাই দেখার।”

জলাধারের পাড়ে অস্থায়ী ভাবে দোকান চালানো স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য বলেছেন, “আগেও শুনেছি স্টল এই হল বলে। কিন্তু তারপর আর কিছুই হয়নি। এ বার দ্রুত স্টল তৈরি করে সবাইকে বন্টন করা হোক।” স্থানীয় দোকানদার রাজেশ সাহু বলেন, “এলাকার পরিকাঠামোর উন্নয়ন হলে পর্যটকেরা আরও বেশি সংখ্যায় এখানে আসবেন। গোছানো স্টল হলে তাঁদেরও কেনাকাটা করতে সুবিধা হবে, আমাদেরও ব্যবসা বাড়বে। প্রশাসনের দ্রুত স্টল তৈরির কাজ শুরু করা উচিত।”

মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সঞ্জীব দত্ত জানান, মুকুটমণিপুরকে ঢেলে সাজিয়ে সামগ্রিক উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। স্টল তৈরি হলে স্থানীয় দোকানদারদের সুবিধা হবে। এতে পর্যটকদেরও সুবিধা হবে বলে তাঁর মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mukutmonipur stall monetary aid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE