আঠা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার পরে শুরু হল অভিযান। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
বেআইনি পোস্ত চাষ নষ্ট হল। কিন্তু পোস্ত ফল থেকে আঠা সংগ্রহ আটকাতে পুরোপুরি সফল হল না প্রাশাসন। এ জন্য অবশ্য আড়ালে সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
খয়রাশোলের পর শুক্রবার দুবরাজপুরে বেআইনি পোস্ত চাষ নষ্ট করল প্রশাসন। এ দিন দুবরাজপুরের কান্তোর ও বোধগ্রামে বেশ কিছু জমির পোস্ত নষ্ট করা হয়। কিন্তু যে উদ্দ্যেশে পোস্ত নষ্টের অভিযান চলল সেটা পূরণ হয়নি। কারণ, তার আগেই পোস্ত ফলের গায়ে ব্লেড দিয়ে চিরে আঠা সংগ্রেহের কাজ অনেকটাই সেরে ফেলেছেন এলাকার পোস্ত চাষিরা। যেটা অশনি সঙ্কেত বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
ঘটনা হল গত, ২০০৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জেলায় অবৈধ ভাবে পোস্ত চাষের রমরমা ছিল। শুধু তাই নয় পোস্ত আঠা সংগ্রহ করে তা মাদক কারবারিদের হাতে তুলে দিয়ে মোটা টাকা রোজগার করার কারবারও ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে বীরভূমে অবৈধ পোস্ত চাষ ঠেকাতে তত্পর হয় প্রশাসন। আবগারি দফতর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর মিলিত অভিযান, নিয়মিত প্রচার ও বেআইনি ভাবে যে সব চাষি বা জমির মালিক তা করছিলেন তাঁদেরকে ধরপাকড় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করার জন্য ২০১২-১৩ সালে পোস্ত চাষ একেবারেই কমিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছিল। বীরভূম জেলাকে মডেল করে অন্য জেলায় প্রচার করার কথাও ঘোষণা হয়েছিল এনসিবি-র তরফে।
সমস্যা সেখানেই শুরু বলে মানছেন প্রশাসনেক কর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার কথায়, “একবার জেলায় পোস্ত চাষ শূণ্য ঘোষণা করার পর ফের জেলায় পোস্ত চাষের খবর চেপে রাখতেই তত্পর হয়েছে জেলা প্রশাসন। নতুন করে পোস্ত চাষিদের ধরপাকড় বা মামলা দেওয়াটা আর আগের জায়গায় নেই। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে কিছু চাষি।” জেলা গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আগের থেকে চাষ আনেক কমেছে সন্দেহ নেই। কিন্তু গত বছরও দুবরাজপুর ও খয়রাশেলে অবৈধ পোস্ত চাষ হয়েছিল। এ বারও লুকিয়ে পোস্ত চাষিরা সেই বীরভূমের খয়রাশোল ও দুবরাজপুরের বিভিন্ন জায়গায় করেছে। সেটাই অস্বস্তির কারণ প্রশাসনের। জেলা আবগারি দফতর, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন কর্তা বলছেন, “পরিমাণটা আরও বেশি ছিল। ক্রমাগত প্রচারে কিছু চাষি নিজের জমির পোস্ত নিজেরাই নষ্ট করেছে।”
আতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শ্যামলকুমার মণ্ডল বা আবগারি সুপার তপনকুমার রায় জানিয়েছিলেন, কিছু চাষি সরকারি জামি বা চর এলাকায় পোস্ত লাগিয়েছে। কিন্তু শুক্রবার দুবরাজপুরের যে অংশে পোস্ত চাষ নষ্ট করা হল তা মোটেই সরকারি জমি বা নদীর চর নয়। কিন্তু এমন অপরাধের পরেও যে সব জমিতে পোস্ত লাগানো হয়েছিল সেই চাষিদের বিরুদ্ধে নারকোটিক্স অ্যাক্টে মামলা হল না। এখানেও সেই সমন্বয়ের অভাবের কথাই উঠেছে। কৃষি, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, অবগারি, পুলিশ নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (পূর্বাঞ্চালীয় শাখা) প্রত্যেকের মধ্যে সেই সমন্বয়টাই গড়ে ওঠেনি বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের ওই কর্তা। তাঁর দাবি, “এখন ওই চাষির বিরুদ্ধে মামলা করতে যে সময় লাগবে তার আগেই পোস্ত উঠে যাবে জমি থেকে। এখন একটাই পথ। যত দ্রুত পোস্ত চাষ নষ্ট করে দেওয়া।” জেলা আবগারি সুপার অবশ্য বলছেন, “দ্রুত সেটা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy