Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পরীক্ষার মধ্যে অযোধ্যা উত্‌সব, বিতর্ক পুরুলিয়ায়

মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরু দিনেই টানা তিনদিন ব্যাপী অযোধ্যা পাহাড় পর্যটন উত্‌সব শুরু হতে যাচ্ছে। আর পরীক্ষার মধ্যে এই উত্‌সবের আয়োজনকে ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০৭
Share: Save:

মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরু দিনেই টানা তিনদিন ব্যাপী অযোধ্যা পাহাড় পর্যটন উত্‌সব শুরু হতে যাচ্ছে। আর পরীক্ষার মধ্যে এই উত্‌সবের আয়োজনকে ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক।

মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ এই উত্‌সবের আয়োজন করেছে শুনে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে জেলাশাসকের কাছে উত্‌সবের দিনক্ষণ পরিবর্তনের অনুরোধও জমা পড়েছে। তাঁদের তরফে জেলাশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে ওই উত্‌সব হওয়ায় সমস্যা রয়েছে। কাজেই উত্‌সবের সময় বদলানো হোক। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “উত্‌সবের দিনক্ষণ বদলানোর অনুরোধের বিষয়টি উত্‌সব কমিটির কাছে বিবেচনার জন্য পাঠাব।”

অযোধ্যা পাহাড় উত্‌সব শুরু হয়েছিল পাহাড় ও পাহাড়তলির বাসিন্দাদের উন্নতি ও আর্থসামাজিক বিকাশের ভাবনাতেই। কিন্তু গোড়া থেকেই এই উত্‌সবের সময় ভুল বাছা হচ্ছে। ২০১২ সালে প্রথম বছর উত্‌সব হয় ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি। পাহাড়তলির বাসিন্দা প্রশান্ত মাহাতো বলেন, “সে বছরই মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে উত্‌সবের দিনক্ষণ বদলের জোরাল দাবি ওঠে। পরের বছর উত্‌সব এগিয়ে আসে ৯-১০ ফেব্রুয়ারিতে। গত বছর উত্‌সব আরও এগিয়ে আসে ৭-৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এ বার উত্‌সব অনেকটা পিছিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় করা হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাই উত্‌সবের সময় পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছি।” বাসিন্দাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার ঠিক করেছে ৬-১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘উইক এন্ড ফোক ফেস্টিভ্যাল’ করা হচ্ছে। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেও এই লোক সংস্কৃতির উত্‌সব হচ্ছে না। উত্‌সব শুরু করা হচ্ছে তারও ঢের পরে। তাই এলাকার একটা বৃহত্‌ অংশের মানুশের বক্তব্য, উত্‌সবের সময়ের পরিবর্তন করা হোক।

এ ছাড়া বাসিন্দাদের ভাবাচ্ছে অন্য একটি কারণ। মাধ্যমিক পরীক্ষার কিছু আগে থেকেই প্রকাশ্যে মাইক বা সাউন্ডবক্স বাজানো নিষিদ্ধ থাকে। তাহলে উত্‌সবের প্রচার গ্রামে গ্রামে হবেই বা কী করে? এ ছাড়া অনুষ্ঠানই বা কী ভাবে করা হবে? জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “প্রথমত উত্‌সব হবে ঘেরা জায়গায়। তার উপরে আমরা উত্‌সবে কোনও মাইকের ব্যবহার করব না। সাউন্ড বক্স ব্যবহার করব।” জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুষেনচন্দ্র মাঝি বলেন, “পরীক্ষার বিষয়টি আমাদেরও মাথায় রয়েছে। তা ছাড়া পাহাড়ে কোনও পরীক্ষা কেন্দ্রও নেই।”

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার এই উত্‌সবে পুরুলিয়া ছাড়াও বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের লোক সংস্কৃতির নানা অনুষ্ঠান থাকছে। এ ছাড়া শিরকাবাদ থেকে পাহাড়ের হিলটপ পর্যন্ত যে রাস্তা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করছে, সেই রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগানো হবে।” যদিও পাহাড়ে ওঠার পাকদণ্ডী পথের পাশ থেকে গাছ কেটে ফেলায় কোনও কোনও জায়গায় রাস্তার একদিকের মাটি সরে যাচ্ছে এবং রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সুষেণবাবু বলেন, “পাহাড়ের যে সব গ্রামে এখনও বিদ্যুত্‌ পৌঁছয়নি সেখানে বিদ্যুদয়নের সূচনা এই মেলা থেকেই করা হবে।”

তবে সব কিছু ছাপিয়ে এই উত্‌সবের সময় নিয়ে বিতর্ক থামছে না। আগেও উত্‌সবের সময় নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, উত্‌সবের জন্য সঠিক সময় কোনও বারেই ঠিক করা হয় না। তাঁদের প্রশ্ন, পর্যটকেরা যে সময়ে বেশি সংখ্যায় পাহাড়ে আসেন, তখন কেন উত্‌সব করা হয় না? তাহলে এই উত্‌সবের প্রসার যেমন বাড়ত, তেমনই বেচাকেনাও জমত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia ayodhya utsav controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE