Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
প্রশাসন ছুটল শিয়াড়ায়

ফের কি থামবে মমতার কনভয়

আক্ষরিক অর্থেই আগাম সতর্কতা। শেষ সফরে এই গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যার কথা শুনে তা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সমাধান কতটা হয়েছে, তা সরেজমিন সোমবার গ্রামেই হাজির হলেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ পুরুলিয়ার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। গ্রামের নাম শিয়াড়া। অবস্থান, পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়কের পাশে বাঁকুড়া সীমানা লাগোয়া হুড়া ব্লকের রখেড়া-বিসপুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।

রেখা মাহাতোর সঙ্গে কথা বলছেন জেলাশাসক। সঙ্গে এসপি। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।

রেখা মাহাতোর সঙ্গে কথা বলছেন জেলাশাসক। সঙ্গে এসপি। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হুড়া শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৪
Share: Save:

আক্ষরিক অর্থেই আগাম সতর্কতা। শেষ সফরে এই গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যার কথা শুনে তা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সমাধান কতটা হয়েছে, তা সরেজমিন সোমবার গ্রামেই হাজির হলেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ পুরুলিয়ার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।

গ্রামের নাম শিয়াড়া। অবস্থান, পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়কের পাশে বাঁকুড়া সীমানা লাগোয়া হুড়া ব্লকের রখেড়া-বিসপুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এই গ্রাম ঘিরে কেন এই তত্‌পরতা? কারণ, চলতি মাসেই যে ফের জেলা সফরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার!

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর পুরুলিয়া সফরকালে এই গ্রামের বাসিন্দারা পথের ধারে অপেক্ষায় ছিলেন। হাত নেড়ে তাঁরা কিছু বলতে চাইছেন শুনে কনভয় থামিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বাসিন্দারা তাঁকে জানান, গ্রামে পানীয় জলের বন্দোবস্ত নেই। গরিব হলেও সামাজিক কল্যাণমূলক বেশির ভাগ প্রকল্পের সুবিধে তাঁরা পান না। এর পরেই ওই গ্রামে পানীয় জলের জন্য একটি নলকূপ বসানো হয়। গত বছর ৩১ জুলাই হুড়ারই লালপুর টেলিকম ময়দানে প্রশাসনিক প্রকাশ্য সভা শেষে বাঁকুড়ায় যাওয়ার পথে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ওই গ্রামের বাসিন্দারা একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ফের থেমে যায় মমতার কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখনও পানীয় জলের অভাব মেটেনি। কেউ কেউ জানান, পঞ্চায়েতে আবেদন করার পরেও বার্ধক্য ভাতা, তফসিলি উপজাতি ভাতা বা বিধবা ভাতা মিলছে না। বাড়িঘরের অবস্থাও খারাপ। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে বাসিন্দাদের সমস্যার বিষয়টি দেখতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে যান। শুধু তাই নয়, গ্রামবাসীদের ফোন নম্বরও নিয়ে যান তিনি। বলে যান, ‘আমি আপনাদের কাছ থেকে জেনে নেব, কাজ হয়েছে কিনা’।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ মাসেই ফের মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়ায় আসতে পারেন। তিনি জেলায় এলে বা ফেরার পথে যে রাস্তা ব্যবহার করেন, এই জাতীয় সড়ক তার অন্যতম। আর এই সড়কের পাশেই শিয়াড়া গ্রাম। ফলে, প্রশাসনেরও শিরঃপীড়া! কর্তাদের আশঙ্কা, গ্রামবাসীরা তৃতীয় বার হাত নেড়ে মুখ্যমন্ত্রীকে থামিয়ে তাঁদের সমস্যার কথা নজরে আনলে মুখ্যমন্ত্রী যারপরনাই রুষ্ট হতে পারেন! তা আঁচ করেই সোমবার গ্রামে পৌঁছে গেলেন প্রশাসনিক কর্তারা।

জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর সঙ্গে এ দিন জেলায় কাজে যোগ দিয়েই ওই গ্রামে পৌঁছন নতুন পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার। সঙ্গে ছিলেন মহকুমাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, স্থানীয় বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। প্রশাসনিক কর্তাদের অবশ্য দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সভার মাঠ দেখতে শিয়াড়া গ্রামের কাছাকাছি আসায় তাঁরা বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে গেলেন।

এ দিন জেলাশাসক মন্টু মাহাতোর কাছে জানতে চান, বাড়ি তৈরির কাজ কেমন চলছে। মন্টুবাবু ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন। তিনি সম্মতি জানান। নির্মল হাঁসদা অধিকার প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন। জেলাশাসক জানতে চান, বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছেন? নির্মলবাবু বলেন, “শরীর খারাপ ছিল বলে কাজ শুরু করতে পারিনি। তাড়াতাড়ি শুরু করব।” এই গ্রামেরই রেখা মাহাতো নামে এক স্কুল পড়ুয়া কিছুদিন আগে বাড়িতেই আগুনে পুড়ে যায়। জেলাশাসকের উদ্যোগে ওই ছাত্রীর কলকাতার সরকারি হাসপাতালে চিকিত্‌সা হয়েছে। রেখার সঙ্গেও এ দিন কথা বলেন জেলাশাসক। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, আদিবাসী ভাতা প্রাপকেরা পাচ্ছেন কিনা, খোঁজ নেন প্রশাসনিক কর্তারা। এক গ্রামবাসী বলেন, পানীয় জলের সমস্যা এখনও আছে।

প্রশাসনিক কর্তারা চলে যাওয়ার পরে চাঁদমণি মুর্মু বলেন, “পঞ্চায়েতে দরখাস্ত দিয়েছি। এখনও বার্ধক্য ভাতা চালু হয়নি।” হপন মুর্মুর কথায়, “ব্যাঙ্কের বই হয়েছে। কিন্তু আদিবাসী ভাতার টাকা এখনও ঢোকেনি।” পরে জেলাশাসক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাসিন্দারা কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। সেই কাজ কতদূর হয়েছে, তা দেখতে গিয়েছিলাম।” পানীয় জলের দাবি নিয়ে জেলাশাসক বলেন, বিধি মোতাবেক প্রতি আড়াইশো জনে একটি করে নলকূপ দেওয়া হয়। কিন্তু এই গ্রামের বাসিন্দা সাড়ে তিনশো জন। সেখানে পাঁচটি নলকূপ দেওয়া হয়েছে। দাবির বিষয়টি দেখা হচ্ছে। গ্রাম ঘুরে প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, যা যা দাবি করেছিলেন গ্রামবাসীরা, সবই করা হয়েছে।

প্রশাসনে তবু প্রশ্ন, ফের কি মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় থামবে এই গ্রামে? শিয়াড়া চিন্তায় রাখল কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hura mamta convoy rekha mahato
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE