Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়ো নিয়োগপত্র কাণ্ডে ধৃত আরও ২

ভুয়ো নিয়োগপত্র নিয়ে সেচ দফতরে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে আগেই গ্রেফতার হয়েছে দু’জন। এ বার তল্লাশিতে নেমে বর্ধমানের নাদনঘাট থানা এলাকা থেকে জাল নিয়োগপত্র চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে আনল বাঁকুড়া থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, এই ঘটনার পিছনে বড় একটি চক্র রয়েছে।

ধৃত সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেখ মইদুল ইসলাম।—নিজস্ব চিত্র।

ধৃত সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেখ মইদুল ইসলাম।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০০:৫০
Share: Save:

ভুয়ো নিয়োগপত্র নিয়ে সেচ দফতরে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে আগেই গ্রেফতার হয়েছে দু’জন। এ বার তল্লাশিতে নেমে বর্ধমানের নাদনঘাট থানা এলাকা থেকে জাল নিয়োগপত্র চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে আনল বাঁকুড়া থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, এই ঘটনার পিছনে বড় একটি চক্র রয়েছে। নাদনঘাটে ধৃত দু’জন ওই নিয়োদপত্র নদিয়ার ওই যুবককে মোটা টাকার বিনিময়ে দিয়েছিল।

পুলিশ জানায়, ওই দু’জন হল নাদনঘাট থানার ন’পাড়া এলাকা থেকে সেখ মইদুল ইসলাম ওরফে সেখ বাপি ও গৌরাঙ্গপাড়া এলাকা থেকে সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাপি। ধৃত চারজনকে বুধবার বাঁকুড়া আদালতে তোলা হয়। বাঁকুড়ার ডিএসপি (আইন ও শৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষ বলেন, “ঘটনার পিছনে বড় কোনও চক্র রয়েছে বলেই প্রথমিক ভাবে আমাদের অনুমান। তদন্ত দ্রুত গতিতে চলছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি বাকি চক্রিরা আমাদের জালে ধরা পড়বে।”

সোমবার বাঁকুড়ার সেচ দফতরে নদিয়ার পলাশি থানার সন্তোষ ঘোষ ও নবদ্বীপের বাসিন্দা সেখ সৈফুদ্দিন ভুয়ো নিয়োগপত্র নিয়ে আসেন। তাঁরা চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাজে যোগ দিতে চান বলে নিয়োগপত্র দু’টি জমা দেন। কিন্তু তা দেখেই দফতরের এক করণিকের সন্দেহ হয়। ওই নিয়োগপত্র দেখে সন্দেহ হয় আধিকারিকদের মধ্যেও। সেচ দফতরের বাঁকুড়া ডিভিশনের এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার স্মরজিত্‌ সরকারের কথায়, “আমাদের দফতরের নিয়োগপত্রের তুলনায় ওরা নিয়োগপত্র হিসেবে যে কাগজ দেখাচ্ছিল, তা সম্পূর্ণ আলাদা। তাই আমরা খুঁটিয়ে নিয়োগপত্রটি পরীক্ষা করি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করে দেখা যায় নিয়োগপত্রটি সঠিক নয়। এরপরেই আমরা ওই দু’জনকে চেপে ধরি। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।”

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে নানা প্রশ্ন করেন দফতরের একাধিক আধিকারিকেরা। প্রশ্নের মুখে পড়ে ভেঙে পড়েন ওই দু’জন। এরপরেই ফোন করে খবর দেওয়া হয় বাঁকুড়া সদর থানায়। পুলিশ গিয়ে দু’জনকে আটক করে নিয়ে এসে পরে গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ভুয়ো নিয়োগপত্রগুলি। সেচ দফতরের তরফে দু’জনের বিরুদ্ধে ভুয়ো নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরির দাবি জানানোর অভিযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাঁকুড়া আদালত সন্তোষ ঘোষ ও সেখ সৈফুদ্দিনকে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায়। কিন্তু পুলিশ নাদনঘাট থেকে ধৃত দু’জনকে নিজেদের হেফাজতে চায়নি। তাদের জেলে পাঠানো হয়।

পুলিশের দাবি, ধৃতেরা সোমবার রাতে তাদের কাছে জেরায় স্বীকার করে ওই নিয়োগপত্রগুলি জাল। এই নিয়োগপত্র তারা নিজেরা বানায়নি বলে দাবি করে। তারা পুলিশকে জানায়, লক্ষাধিক টাকা ও বেতনের অর্ধেক টাকা দেওয়ার শর্তে নিয়োগপত্র দু’টি নাদনঘাটের দু’জনের কাছ থেকে কিনেছিল। তাদের মতোই আরও অনেকে ওই ভাবে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন বলে ওই দুই যুবক পুলিশকে জানিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনার তদন্ত আধিকারিক ক্ষীতীশ পাইন-সহ ছ’জন পুলিশের একটি দল সন্তোষ ও সৈফুদ্দিনকে নিয়ে বর্ধমানে যায়। তাঁরা নাদনঘাট থানা এলাকা থেকে সুব্রত ও মইদুলকে গ্রেফতার করে রাতেই বাঁকুড়ায় ফেরেন। পুলিশের দাবি, সুব্রত ও মইদুলই ভুয়ো নিয়োগপত্রগুলি সন্তোষ ও সৈফুদ্দিনকে দিয়েছিল।

তবে প্রশ্ন উঠছে, জাল নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরি চাইতে যাওয়ার অভিযোগে ধৃত সন্তোষ ও সৈফুদ্দিনকে পুলিশ তদন্তের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিলেও ওই চক্রে জড়িত অভিযোগে ধৃত সুব্রত ও মইদুলকে কেন পুলিশ হেফাজতে চাইল না? তাদের জেরা করলে এই চক্র সম্পর্কে হয়তো আরও তথ্য মিলত। যদিও জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “সন্তোষরাই বাকি চক্রিদের হদিস দিতে পারবে বলে মনে হয়। মইদুলরা নতুন করে কোনও তথ্য দিতে পারবে না বলেই আমাদের মনে হয়েছে। পুরো বিষয়টির উপরে তদন্তকারী আধিকারিকের পাশাপাশি বাঁকুড়া সদর থানার আইসি বিশ্বজিত্‌ সাহাও নজর রেখেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE