Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভবন গড়ে দাতার ইচ্ছেপূরণ করল নানুরের গোন্নাসেরান্দী হাইস্কুল

উচ্চস্তরের অনুমোদন মিলেছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির জন্য মেলেনি আর্থিক অনুদান। এর ফলে সমস্যায় পড়েন ছাত্রছাত্রী থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কার্যত জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতির সামাল দিতে হচ্ছিল তাঁদের। নিজের গ্রামের স্কুলের এহেন দুরবস্থার কথা শুনে বাড়ি তৈরির জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন প্রবাসী শিক্ষক। স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন ৩৮ লক্ষ টাকা।

শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৭
Share: Save:

উচ্চস্তরের অনুমোদন মিলেছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির জন্য মেলেনি আর্থিক অনুদান। এর ফলে সমস্যায় পড়েন ছাত্রছাত্রী থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কার্যত জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতির সামাল দিতে হচ্ছিল তাঁদের। নিজের গ্রামের স্কুলের এহেন দুরবস্থার কথা শুনে বাড়ি তৈরির জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন প্রবাসী শিক্ষক। স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন ৩৮ লক্ষ টাকা। বৃহস্পতিবার সেই টাকায় নির্মিত ভবনের উদ্বোধন হল সাড়ম্বরে। নতুন স্কুলভবন পেয়ে খুশির মেজাজ গোন্নাসেরান্দী হাইস্কুলে।

গোন্নাসেরান্দী হাইস্কুলের অবস্থান বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানা এলাকায় হলেও গ্রামের একাংশ নানুর থানা এলাকার অন্তর্ভুক্ত। গোন্না অর্থে গণ্ডা অর্থাৎ যে ৪টি গ্রাম সেরান্দী, ধাপধারা, আটগ্রাম এবং চক নিয়ে গোন্নাসেরান্দীর উৎপত্তি তার তিনটিই নানুর থানাভুক্ত। স্কুল পরিচালন সমিতির বেশিরভাগ সদস্য এবং ৪০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীও বীরভূম জেলার। তাই নতুন স্কুলবাড়ি পেয়ে সংলগ্ন দুই জেলাতেই খুশির হাওয়া।

১৯৪৫ সালে স্কুলটি স্থাপিত হয়। ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের অনুমোদন মেলে। ওই সময় পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৯টি ক্লাসের জন্য শ্রেণিকক্ষও ছিল সাকুল্যে ৯টি। তাই উচ্চ মাধ্যমিকস্তরের পড়ুয়াদের নিয়ে সমস্যায় পড়েন শিক্ষকেরা। একই ক্লাসের দু’টি বিভাগকে একত্রিত করে পরিস্থিতির সামাল দিতে হয় তাঁদের। এক আত্মীয়ের মুখে স্কুলের এই সমস্যার কথা শোনেন রবীন্দ্রনাথ গুপ্ত কবিরাজ। লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক রবীন্দ্রনাথবাবুরা সপরিবারে গ্রাম ছেড়েছেন দীর্ঘদিন আগে। গ্রামের ওই স্কুলে পড়াশোনাও করতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু গ্রামের প্রতি নাড়ির টান ভুলতে পারেননি। তাই স্কুলবাড়ি তৈরির জন্য ৩৮ লক্ষ টাকা তুলে দেন কর্তৃপক্ষের হাতে। তাঁর ইচ্ছানুসারে সেই টাকায় বাবা ভোলানাথ এবং মা ভোলাদাসী দেবীর নামে স্কুল কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছেন সেমিনার হল-সহ ৭ কক্ষের দোতলা ভবন। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক সমরকুমার ঘোষ বলেন, “অবস্থানগত দিক থেকে এই স্কুল বর্ধমান জেলায় হলেও বীরভূমের এক বড় সংখ্যক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে এখানে। তাই রবীন্দ্রনাথবাবুর দান দুই জেলাকেই কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করল।”

ইচ্ছেপূরণ হয়েছে রবীন্দ্রনাথবাবুর। কিন্তু আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের মনে। কারণ, স্কুল কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে ছিল, দাতার হাতেই উদ্বোধন করা হবে ভবনের। কিন্তু ২০১৩ সালে প্রয়াত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তাই বৃহস্পতিবার ওই ভবনের উদ্বোধন করেছেন তাঁর ভাই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক বীরেন্দ্রনাথবাবু। তাঁর আক্ষেপ, “দাদা স্কুলের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি দেখে যেতে পারলে ভাল লাগত।” আক্ষেপের সুর প্রধান শিক্ষক হিমাদ্রীশেখর গুপ্তের গলায়ও। তিনি বলেন, “সেই সঙ্কটের সময় রবীন্দ্রনাথবাবুর সাহায্য আমাদের কাছে আকাশের চাঁদ সামিল ছিল। তাঁকে দিয়েই ভবনের উদ্বোধন করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু হল না!” এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কথা ছিল কেতুগ্রামের বিধায়ক তথা নানুরের পাপুড়ির বাসিন্দা শেখ শাহনওয়াজের। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথবাবুদের মতো মানুষদের প্রণাম জানাই। ওই অনুষ্ঠানে থাকতে না পেরে খারাপ লাগছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rabindranath gupta kabiraj donation high school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE