Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রী কৃষি অনুদান দেবেন, জানে না জেলার কৃষিজীবীরা

রামপুরহাটে প্রশাসনিক বৈঠকের পর, এক জনসভায় জেলার চাষিদের নানা ক্ষেত্রে অনুদানের চেক দেবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’হাজার চাষির নাম নথিভুক্ত করে অনুদানের বরাদ্দ ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। অথচ, জেলার বড় চাষিরাই জানেন না অনুদান দেওয়ার কথা। কোন কোন চাষিদেরকে ওই প্রকল্পে নির্বাচিত করা হয়েছে, সদুত্তর নেই জেলা কৃষি দফতরের কাছেও!

মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন সরকারি পরিদর্শনকুঠী পান্থশ্রীতে। তাই কলকাতা থেকে বিশেষ ঘাস এনে সাজানো হচ্ছে বাগান। রবিবার ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।

মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন সরকারি পরিদর্শনকুঠী পান্থশ্রীতে। তাই কলকাতা থেকে বিশেষ ঘাস এনে সাজানো হচ্ছে বাগান। রবিবার ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।

অরুণ মুখোপাধ্যায়
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৫
Share: Save:

রামপুরহাটে প্রশাসনিক বৈঠকের পর, এক জনসভায় জেলার চাষিদের নানা ক্ষেত্রে অনুদানের চেক দেবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’হাজার চাষির নাম নথিভুক্ত করে অনুদানের বরাদ্দ ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। অথচ, জেলার বড় চাষিরাই জানেন না অনুদান দেওয়ার কথা। কোন কোন চাষিদেরকে ওই প্রকল্পে নির্বাচিত করা হয়েছে, সদুত্তর নেই জেলা কৃষি দফতরের কাছেও!

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী জনসভায় কৃষি যন্ত্রপাতি, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, পাম্পসেট, ধানকাটা যন্ত্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুদানের চেক দেবেন চাষিদেরকে। দশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদানের চেক দেওয়া হবে। তবে, সব চাষির হাতেই ওই চেক দেবেন না মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে মাত্র পাঁচ জন চাষির হাতে ওই চেক দেওয়া হবে। বাকি চেক মঞ্চ সংলগ্ন এলাকার কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করবেন চাষিরা। দেওয়া হবে কিষান ক্রেডিট কার্ডও। শুধু কৃষি যন্ত্রপাতির অনুদানই নয়, মুখ্যমন্ত্রী রামপুরহাটের ওই সভা থেকে সাতটি কৃষক বাজারের উদ্বোধন করবেন। সেগুলি রয়েছে নানুর, বোলপুর, মহম্মদবাজার, মল্লারপুর, রামপুরহাট এক এবং দু’ নম্বর, এবং মুরারই দু’ নম্বর ব্লক। ওই বাজারগুলির জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ছ’ কোটি টাকা।

অভিযোগ উঠছে, অনুদানের এই তালিকায় অসংগতি রয়েছে।

বোলপুর এলাকার সালন গ্রামের চাষি মালেক মণ্ডল যেমন। বিভিন্ন চাষে গোটা জেলাতেই নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি। বোলপুরের শ্রীনিকেতন মেলায় সেই ১৯৮২ সাল থেকে তাঁর উত্‌পাদিত একাধিক ফসল প্রথম পুরষ্কার লাভ করেছে। জেলায় বিভিন্ন কৃষি প্রদর্শনী ও মেলায় তিনশো পুরষ্কার মালেক লাভ করেছেন। তাঁর একটি ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দরকার। অথচ, তিনি ওই কৃষি যন্ত্র কেনার অনুদান পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হননি।

মালেক বলেন, “আট একর জমি রয়েছে। ইদানিং গরু-মোষ দিয়ে চাষে খরচ অনেক বেশি। একটি ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার পেলে চাষের অনেক সুবিধে হত। সে কথা স্থানীয় কৃষি ব্লক আধিকারিককেও জানিয়েছিলাম। সরকারি অনুদানের ব্যাপারে কিছু জানি না।” শুধু মালেক মণ্ডল নয়, সালন গ্রামেই দেড়শো চাষি রয়েছেন। তাঁরা কেউ-ই জানেন না মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানের বিষয়ে। যেমন জানেন না ইলামবাজারের নারায়ণপুর গ্রামের চাষি পিন্টু পাল। পিন্টু জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামের একশো জন চাষির কেউই ওই অনুদানের কথা জানেন না। তিনি বলেন, “অন্য গ্রাম থেকে ট্রাক্টর ভাড়া করে এনে, চাষ করতে হয়। গ্রামে কয়েকটি ট্রাক্টর থাকলে সকলের চাষ করতে সুবিধা হত।” একই কথা বলেছেন, ময়ুরেশ্বর দু’নম্বর ব্লকের নবগ্রামের চাষি বংশী বদন মণ্ডল। তিনিও ওই কৃষি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর অনুদান দেওয়ার কথা জানেন না।

কীভাবে তৈরি হল তালিকা, যা থেকে বাদ পড়লেন জেলার বড় চাষিরা? জেলার একাধিক ব্লক কৃষি আধিকারিক জানিয়েছেন, আগের মতোই এখনও শাসক দলের নির্দেশ মতোই কাজ করতে হয়। কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার অনুদান পাওয়ার জন্য জেলা বিভিন্ন ব্লক কৃষি দফতরে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপন অনুযায়ী যারা প্রথমে আবেদন করেছেন, তাঁদেরকেই নির্বাচন করা হয়েছে।

প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে আগের মতো আর জনসভায় লোক হয় না। তাই তিনি নানা রকম ফন্দি-ফিকিরি করছেন সরকারি টাকা খরচ করে, অনুদানের নাম করে জনসভায় লোক ভরাতে চাইছেন। এটা একধরনের রাজনৈতিক গিমিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mamata bandhopadhyai suri arun mukhopadhyai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE