Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আক্ষেপ মিটল চিতুড়ি গ্রামের

মাধ্যমিকে উন্নীত জুনিয়র হাইস্কুল

শতবর্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু বয়সের নিরিখে একটা প্রতিষ্ঠানের যে ভাবে উন্নতি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বরং গ্রাম ছাড়িয়ে লাগোয়া অন্য গ্রামের কম বয়সী প্রতিষ্ঠানগুলি কলেবরে ক্রমশ দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং পরিকাঠামো গত দিক থেকে আরও তাদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে।

—নিজস্ব চিত্র

—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩০
Share: Save:

শতবর্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু বয়সের নিরিখে একটা প্রতিষ্ঠানের যে ভাবে উন্নতি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বরং গ্রাম ছাড়িয়ে লাগোয়া অন্য গ্রামের কম বয়সী প্রতিষ্ঠানগুলি কলেবরে ক্রমশ দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং পরিকাঠামো গত দিক থেকে আরও তাদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। অথচ রামপুরহাট থানার চিতুড়ি গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুল পুরনো একটা প্রতিষ্ঠান হলেও তার শ্রীবৃদ্ধি কেন ঘটবে না? এই নিয়ে গ্রামবাসীদের মনে অভিমান ছিলই। সেই ক্ষোভ বা অভিমান এ বার মিটতে চলেছে।

গ্রামবাসীদের ক্ষোভ ছিল, কেন গ্রামের ছেলেমেয়েদের কষ্ট করে গ্রাম ছাড়িয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য কাউকে আলপথে খাল ডিঙিয়ে বা কাদা পায়ে, কাউকে বা প্রথমে রেললাইন পরে জাতীয় সড়ক পেরিয়ে দূরের স্কুলগুলিতে যেতে হবে। সহজাত অভিমান, ক্ষোভ, কষ্ট নিজেদের মধ্যে লালন করে দীর্ঘদিন থেকে এই জুনিয়র হাইস্কুলকে মাধ্যমিকে উন্নীত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুল মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হওয়ার চিঠি খোদ রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় চিতুড়ি জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত টিচার ইনচার্জ ধৃতিদীপ ধাড়া কাছে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। মঙ্গলবার চিতুড়ি জুনিয়র হাইস্কুল মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হওয়ার জন্য বিকাশ ভবন থেকে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে চলতি শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়াদের ভর্তি করার অনুমতি পেয়ে গিয়েছে।

স্কুলের বর্তমান টিচার ইনচার্জ ধৃতিদীপ ধাড়া জানান, জুনিয়র হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হওয়ার চিঠি চলতি মাসের ৬ তারিখ শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে স্কুলে গিয়ে দিয়ে এসেছেন। সেই চিঠি পেয়ে গ্রামবাসী পার্থসারথী রায়, অরিন্দম দাস, স্কুলের প্রাক্তন পরিচালন কমিটির সভাপতি পরেশ চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতির আবেদন জানান। শিক্ষা দফতর থেকে চলতি শিক্ষাবর্ষে স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ, স্কুলের ভবন নির্মাণ-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে। সেই সঙ্গে চলতি শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণিতে পড়ুাদের ভর্তির জন্য অনুমোদনও মিলেছে। এ দিকে শতবর্ষের অধিক একটা প্রতিষ্ঠান এতদিনে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হওয়ার জন্য গ্রামের বাসিন্দা পার্থসারথী রায়, অংশুমান দাস, কাঁদুড়ি গ্রামের পরেশনাথ চট্টোপাধ্যায়, গয়ানাথ লেটরা আশিসবাবুকে ধন্যবাদ জানান।

চিতুড়ি গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলে চিতুড়ি ছাড়াও রামপুরহাট থানার বেনোড়া, হরিওকা, স্বর্গপুর, মাঝখন্ড, গুগ, রদিপুর গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। স্কুলে গত শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১২২ জন। চলতি শিক্ষা বর্ষে নতুন পড়ুয়াদের ভর্তি চলছে। স্কুলে বর্তমানে ৪ জন শিক্ষক, ১ জন ক্লার্ক, ১ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আছেন। বর্তমানে দ্বিতল ভবনে ছ’টি ক্লাস রুম আছে। স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্যরা জানান, স্কুলের নিজস্ব খেলার মাঠ আছে। পরিকাঠামো গত উন্নতির জন্য স্কুলের যথেষ্ট জায়গা আছে।

দীর্ঘদিন থেকে চিতুড়ি জুনিয়র হাইস্কুলকে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছেন গ্রামবাসীরা। ২০১৩ সালে স্কুলের শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটি স্কুলকে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করার জন্য এলাকার দুই সহস্রাধিক মানুষ গণসাক্ষরিত লিখিত আবেদন শিক্ষা দফতরে পাঠিয়েছিল। এতদিন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হওয়ার জন্য স্বাভাবিক ভাবে খুশি সকলেই। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মাঝখন্ড গ্রামের লক্ষণ মুর্মু, বেনোড়া গ্রামের অর্জুন লেট, রাহুল লেট, ছাত্রী চিতুড়ি গ্রামের রিম্পা দাসদের প্রতিক্রিয়া, “আর আমাদেরকে কষ্ট করে রেললাইন পেরিয়ে, জাতীয় সড়ক, আলপথ বা খাল ডিঙিয়ে জল কাদা মেখে দূরের স্কুলে পড়তে যেতে হবে না। এ বার থেকে আমরা গ্রামেই পড়তে পারব।” আশিসবাবু বলেন, “গ্রামবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবিকে বাস্তব রূপ দিতে পেরে ভাল লাগছে। স্কুলের পরিকাঠামো গত উন্নতির জন্য এলাকা উন্নয়ন খাতে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rampurhat school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE