এড়ানো গেল না সংঘর্ষ।—নিজস্ব চিত্র।
বাঁকুড়ার বিভিন্ন কলেজে এবিভিপির মনোনয়নপত্র তোলা রুখে দেওয়া গেলেও পাশের রঘুনাথপুর কলেজে তা সম্ভব হল না। টিএমসিপি-র বাধা সত্ত্বেও শুক্রবার রঘুনাথপুর কলেজে ছাত্র সংসদের অধিকাংশ আসনে মনোনয়নপত্র তুললেন এবিভিপির সদস্যেরা। তবে এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারপিটও বাধল। দুই ছাত্র সংগঠনের তিন সদস্য আহত হন। তাঁদের রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশ ও র্যাফ সক্রিয় থাকায় গোলমাল বেশিদূর গড়ায়নি। পুলিশের এই সক্রিয়তার জন্যই মনোনয়ন তোলার প্রথম দিনেই ৪২টি আসনের জন্য ১৫৯টি মনোনয়ন পত্র তোলা হয়েছে। এবিভিপি ও টিএমসির দু’পক্ষেরই দাবি, বেশির ভাগ আসনে তারাই মনোনয়ন তুলেছে।
পুরুলিয়া জেলায় এ বার ১৩টি কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে। তার মধ্যে এখনও একমাত্র রঘুনাথপুর কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন বাকি। আগামী ২০ জানুয়ারী জেলার অন্যতম বড় এই কলেজের নির্বাচন। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়ার লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজে ছাত্র সংসদ দখল করে চমক দিয়েছে আরএসএস প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। ঝালদার অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল কলেজেও একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে তারা জেতে। যদিও ছাত্র পরিষদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিএমসিপি ওই ছাত্র সংসদ দখল করে।
এই প্রেক্ষিতে এ দিন এবিভিপিকে নিয়ে সতর্ক ছিল রঘুনাথপুরের টিএমসিপি নেতৃত্ব। তার উপরে গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রঘুনাথপুরে বিজেপির সমর্থন বেড়েছে। তাই এ দিন এবিভিপিকেও কোমর বেঁধেই নামে। পুলিশের কাছেও আগাম খবর ছিল, রঘুনাথপুর কলেজের নির্বাচন ঘিরে যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে। তাই কলেজ চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। কলেজে উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত, সাঁওতালডিহি থানার আইসি ত্রিগুণা রায়ের নেতৃত্বে তিনটি থানার পুলিশ কর্মীরা।
কলেজের অদূরে ভালো সংখ্যায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের জমায়েত ছিল। সে তুলনায় তৃণমূলের কর্মীদের সংখ্যা কম ছিল। তবে ১৪৪ ধারা থাকায় কলেজের কাছেপিঠে ‘বহিরাগত’ কাউকেই যেতে দেয়নি পুলিশ। সকালের দিকে শান্তিপূর্ণ ভাবে মনোনয়ন তুলছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। দুপুর ১টা নাগাদ হঠাৎই কলেজের মধ্যে মনোনয়ন দেওয়ার কাউন্টারের সামনে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে কলেজে র্যাফ ঢুকে জটলা সরিয়ে দেয়। কাউন্টারের সামনে র্যাফ মোতায়েন করা হয়। সংযত হয়ে যান দু’পক্ষের কর্মীরা। টিএমসিপির দাবি, তাদের আহত দুই সদস্যের নাম স্মরজিৎ দাস ও অরিজিৎ ঘটক খুব আঘাত পেয়েছে। এবিভিপির পাল্টা অভিযোগ, তাদের সক্রিয় কর্মী তারাপদ মাহাতোকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। যদিও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনজনের মধ্যে কারুরই আঘাত গুরুতর নয়। তবে তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
রঘুনাথপুর কলেজে টানা পাঁচ বছর ধরে ছাত্র সংসদের দখল রয়েছে টিমসিপির হাতে। গত বছর কলেজের ৪২টি আসনের সব ক’টিতেই জিতেছিল তারা। সদ্য এই কলেজ সংগঠন শুরু করা এবিভিপি যে ইতিমধ্যেই এখানে টিএমসিপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে মনোনয়ন তোলা শুরু হতেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যে ভাবে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন এবিভিপির হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলছে এবং প্রতিবাদে বিকেলে এলাকায় মিছিল করল, তাতে স্পষ্ট এবিভিপির আচমকা উত্থানে যথেষ্ট চিন্তিত টিএমসিপি নেতৃত্ব।
টিএমসিপির জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রায়ের অভিযোগ, “কলেজের বাইরে বিজেপির কর্মীরা হুমকি দিচ্ছিল, এমনকী কলেজের মধ্যেও এবিভিপির কর্মীরা আমাদের দুই সমর্থককে মারধর করল। ওদের গ্রেফতার করতেই হবে।” সকাল থেকেই রঘুনাথপুরে ছিলেন এবিভিপির রাজ্য সহ-সম্পাদক সুরজিৎ লাই পাল্টা অভিযোগ করেন, “কিছু দিন ধরেই টিএমসিপি আমাদের সদস্যদের ভোটে না দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দিচ্ছিল। এ দিন ওরা পরিকল্পিত ভাবে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমরা কাউকে মারধর করিনি।”
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত বলেন, “মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের মধ্যে সামান্য বিবাদ হয়েছিল। পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দেওয়া গিয়েছে।” প্রশাসন সূত্রে খবর, আজ শনিবার মনোনয়নের দ্বিতীয় দিনে আরও বেশি সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করতে চাইছে প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy