পুরুলিয়ার একটি কলেজের ছাত্র সংসদ আগেই দখল করেছিল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। একটি কলেজে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। সেই পুরুলিয়ায় তাদের উত্থান অব্যাহত। এ বার রঘুনাথপুর কলেজে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-কে সমানে সমানে টেক্কা দিয়েও অল্পের জন্য ছাত্র সংসদ হাতছাড়া হল এবিভিপি-র।
সাংসদ, বিধায়কের পরে এ রাজ্যের ছাত্র রাজনীতিতেও ক্রমেই নিজেদের ছাপ রাখতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। তিন দিন আগেই খাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুট অ্যান্ড ফাইবার টেকনোলজি ক্যাম্পাস নিজেদের দখলে নিয়েছে এবিভিপি। বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি এবং এবিভিপি-র মধ্যে সংঘর্ষ লেগে রয়েছে। েকাথাও বা টিএমসিপি-র প্রতিপক্ষ এসএফআই। মনোনয়ন তোলায় হুমকি থেকে শুর করে আরও নানা বাধা সত্ত্বেও রাজ্যের কিছু কলেজে এবিভিপি-র ছাত্র সংসদ দখল করা বা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা।
এ রাজ্যে এবিভিপি-র সাফল্যের শুরু পুরুলিয়া জেলার হাত ধরেই। গত মাসে ওই জেলার হুড়া ব্লকের লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করার পাশাপাশি ঝালদার অচ্ছ্রুরাম কলেজে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আরএসএস প্রভাবিত ওই ছাত্র সংগঠন। এ বার জেলার অন্যতম বড় কলেজ রঘুনাথপুরেও তারা সাফল্য পেল। কেন এই সাফল্য? এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদার অবশ্য বলেন, “অন্য জেলার তুলনায় পুরুলিয়ায় বাড়তি সাফল্য, এই ধারণা ঠিক নয়। যেখানেই টিএমসিপি-র সন্ত্রাসকে মোকাবিলা করে মনোনয়ন দিতে পারছি, সেখানেই জিতছি। সব জেলার ক্ষেত্রেই তা-ই ঘটছে।”
মঙ্গলবার ওই কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৪২টি আসনের মধ্যে ২০টি দখল করেছে এবিভিপি। এই প্রথম রঘুনাথপুর কলেজে প্রার্থী দিয়ে ছাত্র সংসদ দখলের প্রায় দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাওয়াটাকে নিজেদের ‘নৈতিক জয়’ হিসেবেই দেখছেন জেলার বিজেপি এবং এবিভিপি নেতৃত্ব। সংগঠনের রাজ্য সহ-সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার সংগঠনের দায়িত্বে থাকা সুরজিৎ লাই বলেন, “টিএমসিপি-র সন্ত্রাসের কারণে ১০টি আসনে প্রার্থী দিতে পারিনি। সেগুলি বিনা লড়াইয়ে আগে জিতেছিল টিএমসিপি। মঙ্গলবার যে ৩২টি আসনে নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যেও ২০টি আসনে জিতেছেন আমাদের প্রার্থীরা। ১২টিতে টিএমসিপি।” সব আসনে নির্বাচন হলে এবিভিপি-ই ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় আসত বলেও দাবি সুরজিতের। সুবীরবাবুর প্রতিক্রিয়া, “এটা কেবল এবিভিপি-র জয় নয়। ছাত্রছাত্রীদের জয়। তাঁরাই টিএমসিপি-র রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জাতীয়তাবাদের সমর্থনে ভোট দিয়েছেন।”
রঘুনাথপুর কলেজে এবিভিপি-র সাফল্যের পিছনে দু’টি কারণ সামনে আসছে। প্রথমত, পাঁচ বছর ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় থাকার ফলে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছিল। এবিভিপি-র হয়ে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীরাও। দ্বিতীয়ত, বিগত বছরগুলিতে এসএফআই-সহ অন্য ছাত্র সংগঠনগুলি কলেজে প্রার্থী দিলেও তাদের সাংগঠনিক শক্তি সে ভাবে না থাকায় ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছিল টিএমসিপি। এ বার সব দিক গুছিয়েই ভোটে লড়তে নেমেছিল এবিভিপি। কোনও আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি এসএফআই বা ছাত্র পরিষদ। ডিএসও কিছু আসনে প্রার্থী দিলেও তাদের প্রাপ্ত ভোট সামান্য। ফলে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে দ্বিমুখী। বিরোধী ভোটের প্রায় পুরোটাই গিয়েছে এবিভিপি-র ঝুলিতে।
রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি এবং টিএমসিপি-র জেলা নেতা সুকুমার রায়ের অবশ্য দাবি, “রঘুনাথপুরে এবিভিপি-র সঙ্গে গোপন আঁতাঁত করেছিল ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy