Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

শ্বাসকষ্ট উঠলেই বুঝতে পারি, ‘ফুলডুঙরি পাহাড় আর বেশি দূরে নয়/ নইলে এমন হাঁপাচ্ছি কেন?’—

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০৬
Share: Save:

ডুবো নদীর পাড়ে চুপ করে আছেন উৎপল

শ্বাসকষ্ট উঠলেই বুঝতে পারি, ‘ফুলডুঙরি পাহাড় আর বেশি দূরে নয়/ নইলে এমন হাঁপাচ্ছি কেন?’—

একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে থুতনিটা ঠেকে গিয়েছিল বুকের কাছে। তাহলে কী ফুলডুঙরি পৌঁছে গেলেন উৎপল—সদ্য প্রয়াত কবি উৎপলকুমার বসুকে নিয়ে টুকরো টুকরো এমনই অনেক কিছু মনে পড়ছে ওঁদের, উৎপলের কাছাকাছি থাকা কবিদের। যাঁরা মনে করেন, কৃত্তিবাসের তুঙ্গ পর্বে আচমকা বিমানের ‘বিচ্ছিরি ছায়া’ ফেলে উৎপল যদি ইওরোপে উড়ে না যেতেন, তাহলে সুনীল-শক্তির সঙ্গে এক বন্ধনীতেই জনপ্রিয় হতে পারতেন কবি।

রামকুমার মুখোপাধ্যায়, মৃদুল দাশগুপ্ত, পিনাকী ঠাকুরকে ঘিরে রয়েছে এমনই আবেগ— বছর পনেরো আগে কবি সম্মেলন বসেছে বালুরঘাটে। আমন্ত্রিত বিভিন্ন জেলার কবিরা। এসেছেন উৎপলও। প্রিয় কবিকে সামনে পেয়ে এক তরুণ কবি এগিয়ে দিলেন তাঁরই লেখা কাব্যসংগ্রহ। অবাক হয়ে সে দিন প্রশ্ন করেছিলেন উৎপল, ‘‘বইয়ের কোথায় সই করতে হয় গো?’’ সেই বিস্ময়ের মধ্যেই কি কবির রহস্যময়তা লুকিয়ে ছিল? পিনাকীর মনে পড়ছে— ‘একটা কবিতা আদায়ের জন্য কীভাবে লেগে থাকতে হতো, তাঁর পিছু পিছু সেই ঘোরাটাও একটা প্রাপ্তি।’ উৎপলকুমার বসুর কাছ থেকে কবিতা আদায় করার জন্য। বাঁকুড়ায় বড় হওয়া সাহিত্যিক ও বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগের অধ্যক্ষ রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের এখন মনে পড়ছে, আড্ডাবাজ উৎপলের কথা— গপ্পো জমেছে, হঠাৎ উৎপল শুরু করলেন, অগ্রজ এক সাহিত্যিকের গল্প। গল্পের স্থান খালাসিটোলা। উৎপল সেখানে পৌঁছেছেন এক তরুণ বন্ধুকে নিয়ে। অগ্রজ সেই সাহিত্যিক ফিরেও তাকাচ্ছেন না দেখে উৎপল জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার দেখছেন না যে বড়?’ অগ্রজ মানুষটি উত্তর ফিরিয়ে দিলেন, ‘বাচ্চা ছেলেদের যারা মদ খাওয়ায় তাদের দিকে তাকাবো না।’ উৎপলের চটজলদি জবাব, ‘ও তো যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্যের পড়ুয়া।’ অগ্রজ সেই সাহিত্যিক কমলকুমার মজুমদারের এ বার চোখ কপালে তুলে বিস্মিত হওয়ার পালা, ‘বল কী হে, গ্রাজুয়েট!’ সাহিত্য অ্যাকাডেমির পূর্বাঞ্চলীয় সেক্রেটারির দায়িত্বভার সামলানোর সময়ের প্রকাশক রামকুমারবাবুর মনে পড়ে, কমলা দাসের কবিতা অনুবাদ করতে গিয়ে উৎপল বসুর পাণ্ডিত্যের কথা।

মৃদুল দাশগুপ্তের কাছে উৎপলবাবু আবার ধরা দিয়েছিলেন এক ‘রহস্য’ হিসেবে। হাংরি আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে যোগমায়াদেবী কলেজের অধ্যাপনার চাকরি খুইয়েছেন উৎপল। লন্ডনে ‘স্বেচ্ছা-নির্বাসন’ নিয়েছিলেন। বিলেতে থাকাকালীন একটিও কবিতা লেখেননি। লিখেছেন মার্জিত কিছু প্রবন্ধ। হাওড়া থেকে প্রকাশিত শম্ভু রক্ষিতের পত্রিকা ‘ব্লুজ’-এ সে সব দু-একটা লেখা বেরিয়েছিল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি কলকাতায় ফিরে উৎপল কিন্তু ফের আগের মতোই হয়ে গেলেন। রোজ হাজিরা শুরু হল কফি হাউসে। তাঁদের প্রথম আলাপটি এখনও মনে আছে মৃদুলের—‘কোনওদিন উৎপল বসুকে দেখিনি। ভাবলাম সাহেবদের মতো হবেন। ও মা দেখি, গোড়ালি ওঠা পাজামা, হাফ হাতা কুর্তা, ঝোলা কাঁধে এসে বসলেন তিনি। তবে পাইপটা ছাড়তে পারেননি।’ এক বার, মৃদুলের সঙ্গে বহরমপুরে চললেন। রাস্তার প্রায় প্রতিটা বাঁকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে উৎপলবাবু তরুণ কবিদের দেখাতে চাইলেন কোথায় কী ‘বিখ্যাত সব দিঘি’ রয়েছে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘পুরী সিরিজ’-এর কবি হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘এখানে রাইফেল মেলে সহজেই, জানো!’ ‘জানু’ ও ‘জানালা’র ভেদাভেদ না করা উৎপল তো এমনই হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

মনে হচ্ছে এখনও বুঝি ‘ডুবো নদীর পাড়ে’ বসে রয়েছেন তিনি।

যুদ্ধে বাঙালি

ডাক্তার শরদেন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দননগরের হারাধন বক্সি বা সাংবাদিক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ— নামগুলি বর্তমান বাঙালির কাছে বিস্মৃতপ্রায় ঠেকতে পারে। কিন্তু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক বারিদবরণ ঘোষের সম্পাদিত ‘সাময়িকপত্রের আলোকে প্রথম মহাযুদ্ধ’ বইতে এঁদের লেখাগুলিই সযত্নে পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে। সম্পাদক ‘ভারতী’, ‘মাসিক বসুমতী’, ‘ভারতবর্ষ’ বা ‘সমর-সংবাদের’ মতো বিভিন্ন পত্রিকাগুলি থেকে খুঁজে বের করেছেন লেখাগুলি। বাঙালির চোখে দেখা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমকালীন গ্রিস, আয়ার্ল্যান্ড, ইতালি, মিশর, চিন, ইংল্যান্ড-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক ও রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের খোঁজ মেলে এই বইতে। সংকলিত লেখাগুলিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়— যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্বলিত রচনা ও যুদ্ধের তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ নিয়ে পত্রিকায় সেই সময়ের বাঙালিদের লেখাপত্র। পারুল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ৩৩৬ পাতার এই বইতে বারিদবরণবাবু সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের করা যুদ্ধসঙ্গীত, ফরাসি রাষ্ট্র সঙ্গীতের অনুবাদগুলিও রেখেছেন। রয়েছে প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ। মোটের উপর বইটিকে সেই সময় ও বাঙালির একটি নথিবদ্ধ ইতিহাস হিসেবে দেখা যায়। তবে বইয়ের প্রচ্ছদ আরও বিষয়-প্রাসঙ্গিক হওয়ার দাবি রাখে।

স্থগিতাদেশ জারি

‘অনিকেত’-এর আয়োজনে গত শনিবার পুরুলিয়া শহরে প্রকাশিত হল তরুণ কবি সুপ্রিয় দেওঘরিয়ার কবিতার বই ‘স্থগিতাদেশ জারি আছে’। উপস্থিত ছিলেন শুভাশিস ভাদুড়ি, অংশুমান কর, দীপান্বিতা সরকার, রাকা সেনগুপ্ত, অভিমন্যু মাহাতো, বিমল লামা, সোমা লামা প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সুমিত পতি। বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন কবি শুভাশিস ভাদুড়ি মহাশয়। সুপ্রিয়র স্বপ্ন, বিষাদ, প্রেম ও প্রেমহীনতাতেই কবিতার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। কবিতায় ফুটে উঠেছে শিকড় ও মাটির উপরে তাঁর আস্থা। শরতের আগমনে এই কবিতাযাপনের মূল কান্ডারী কবি নির্মল হালদার অন্যান্য তরুণ কবিদের উৎসাহ জোগান স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে। অনিকেত গোষ্ঠীর তরুণ সদস্য পুরুলিয়া শহর ও গ্রামের নিবিড় রায়, বিশু, তরুণ এঁদেরও যথেষ্ট উৎসাহ ছিল এই অনুষ্ঠানে। পুরুলিয়ার মতো শহরে এই ধরনের অনুষ্ঠান কবিতাপ্রেমীদের যথেষ্ট উদ্দীপনা জুগিয়েছে বলেই মত উদ্যোক্তাদের।

তিন শতকে বঙ্কিম

‘বঙ্কিমচন্দ্র কালের হাত থেকে আজ শতবর্ষের অভিবাদন গ্রহণ করছেন’— রবীন্দ্রনাথের এই উক্তির পরেও কেটে গিয়েছে বেশ খানিকটা সময়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর হাতে বঙ্কিমচর্চার যে ধারাটি তৈরি হয়েছিল তা বিশ শতকে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, ভবতোষ দত্ত বা একুশ শতকের বরুণকুমার চক্রবর্তী, পবিত্র সরকারদের লেখাতেও প্রবাহিত। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের সম্পাদিত ‘বঙ্কিমচন্দ্র তিন শতকের চোখে’ বইটি বঙ্কিমচর্চার সেই ধারাটিকেই ধরতে চেয়েছে। প্রতিভাস থেকে প্রকাশিত এই বইতে বঙ্কিম উপন্যাসের ভাষা, গঠনশৈলী, চরিত্র বিচার, লোকঐতিহ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে, বঙ্কিমের রাষ্ট্রনৈতিক ও সামাজিক চিন্তার পরিচায়ক বিভিন্ন প্রবন্ধও। বইটিতে পাঠক খুঁজে পান শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মহম্মদ শহিদুল্লাহ, উজ্জ্বলকুমার মজুমদার, বারিদবরণ ঘোষদের মতো সাহিত্যের অধ্যাপক এবং রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, যদুনাথ সরকার, অমলেশ ত্রিপাঠীদের মতো ইতিহাসবিদদের চোখে বঙ্কিম প্রতিভার বিশ্লেষণগুলিও। ভূমিকায় উনিশ শতকের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বঙ্কিম-আলোচনাগুলির একটা সংক্ষিপ্ত হদিস দিয়েছেন অমিত্রসূদনবাবু।

যাযাবর

একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর/ ওরে মন কেন বাঁধো দালান ঘর...। কিংবা ‘পৃথিবীটা নয় কারও চিরস্থায়ী বাসা ঘর, আমরা সকলে যাযাবর...’। এমন কথা যিনি অনায়াসে বলতে পারেন, তেমনই অনাড়ম্বর ভাবে আশ্রমের নিরালায় কাটিয়ে দিতে পারেন জীবনের শেষ দিনগুলি, তিনিই— দেবীদাস বাউল। তামাম মানভূম যাঁকে চিনত এই গানগুলির স্রষ্টা হিসেবে। ভিক্ষে করেই পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ভাঙড়া গ্রামে আট বিঘা জমির উপরে গড়ে তুলেছিলেন একটি আশ্রম। আশ্রমের নামও দিয়েছিলেন নিজেই। প্রেমানন্দ আশ্রম। প্রেমে বিশ্বাস করতেন আজীবন। ছায়াঘেরা সেই আশ্রমের ছোট্ট একটি বারান্দায় কাটিয়েছেন জীবনের শেষ চল্লিশটি বসন্ত। ছ’ ফুট বাই চার ফুটের একটি কাঠের তক্তপোষে বসেই রচনা করেছেন কয়েক হাজার বাউল গান, ঝুমুর গান ও লোকগীতি। তাঁর কথায় সুর মিলিয়েছেন পরীক্ষিৎ বালা, ছায়ারানি দাসেরা। ২০০১ সালে হঠাৎ-ই ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে তাঁর বাঁ পা। তার পর থেকে আক্ষরিক অর্থেই আশ্রমবন্দি। জীবিকা ছিল ভিক্ষা। সেই ভিক্ষের টাকায় মাত্র দু’টি গানের বই ছাপাতে পেরেছিলেন। বাকি হাজারেরও বেশি গান আজও লিপিবদ্ধ তাঁর বিবর্ণ গানের খাতায়। জীবনে পাননি কোনও সরকারি স্বীকৃতি। গত ২১ সেপ্টেম্বর নীরবেই অভিমান বুকে নিয়ে চলে গেলেন তিনি। অভিমানই তো ছিল তাঁর জীবনের সম্পদ। তাই লিখেছেন— এই দুনিয়ায় আমি মরিয়া অমর হতে চাই, পদ্ম হয়ে রব ফুটে মানুষের দিল দরিয়ায়।

উপলের কুরকুট

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন নাটকের টানে। বছর চল্লিশের উপল পাহাড়ির জীবনটাও নাটকের মতো। ঝাড়গ্রাম শহরের ঘোড়াধরায় রঙচটা সাবেকি দোতলা বাড়িটার অন্দরের প্রতিটি কোণে নাটকের সরঞ্জাম, পাণ্ডুলিপি, খেরোর খাতার ছড়াছড়ি। নাটক শুধু নেশা নয়, নাটক-প্রেমে বিভোর হয়ে রয়েছে উপলের ভরা সংসার। গাড়ির চালক, বিমা কর্মী, গৃহশিক্ষিকা, ছাপাখানার মালিক, টিভি মেকানিকদের মতো নানা পেশায় থাকা যুবক-যুবতীরাই উপলের কুশীলব। উপল খুব কাছ থেকে মৃত্যু-চেতনা উপলব্ধি করেছেন। সালটা ২০১৩। জোর কদমে নাটকের মহলা চলছে। আচমকা অসাড় হয়ে গেলেন উপল। ধরা পড়ল ‘গুলেনবারি সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। স্নায়ুতন্ত্রের বিরল এই অসুখে শরীর অসাড় হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুও হতে পারত। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শুভানুধ্যায়ীরা। তিলে তিলে সংগৃহীত আট লক্ষ টাকা খরচ করে মাস খানেক কলকাতায় ভেন্টিলেটরে রেখে উপলের চিকিত্‌সা চলতে থাকে। সুস্থ হয়ে ফিরে ২০১৪-র গোড়ায় ফের কলম ধরলেন। উপলের দলটির নাম ‘কুরকুট’। জঙ্গলমহলে এক ধরনের লালপিঁপড়েকে বলা হয় কুরকুট। তাঁর নাটক ডাইনি বিরোধী ‘আঁধার মানুষ’ই হোক, বা বাল্য বিবাহ ও নারী পাচারের বিরুদ্ধে লেখা ‘তিনটি মেয়ের গল্প’—তা করতে মঞ্চের দরকার হয় না। সামান্য পরিসরেই জীবন্ত হয় তাঁর চরিত্রেরা। নাটকের পর শনিবার ঝাড়গ্রামের বলাকা রঙ্গমঞ্চে ‘ফুলমণি ও তার ছোট্ট বন্ধু’ পুতুল নাটকটিরও প্রিমিয়ার হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dakshiner karcha south bengal karcha karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE